ইহুদীদের বিরুদ্ধে রহস্যজনক নীরবতা মুসলিম বিশ্বের
অভিশপ্ত ইহুদিবাদী ইসরাইলি সন্ত্রাসীরা ফিলিস্তিনের গাজায় সম্প্রতি যে বর্বরতা চালাচ্ছে, এর বিরুদ্ধে সারা বিশ্ব সোচ্চার। সবাই এর প্রতিবাদ করছে। বিশেষ করে পশ্চিমারা এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এমনকি অনেক ইসরাইলপন্থিও এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু রহস্যজনকভাবে মুসলিম বিশ্ব নীরবতা পালন করছে।
প্রকৃত অর্থে ইসরাইল যে শান্তি ও সহবাস্থানের নীতিতে বিশ্বাস করে না তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে কম। আরব দেশগুলো হামাস ও মুসলিম ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে যে অবস্থান গ্রহন করেছে তার প্রভাব পড়েছে মুসলিম দেশগুলোতে।
ইসরাইলের বিরুদ্ধে গত কয়েক দশকের মধ্যে মধ্যে ওয়াশিংটন লন্ডন ও প্যারিসে এত বড় বিক্ষোভ সমাবেশ হয়নি। ফ্রান্স সরকার প্রথমে ইসরাইল বিরোধী বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করলে সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মানুষ রাজপথে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয়। পরে অবশ্য বিক্ষোভ সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়।
একই ভাবে গাজায় হামলার পর থেকে ওয়াশিংটন ও লন্ডনে টানা বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। বিক্ষোভ হয়েছে নিউইয়র্ক ও ক্যালিফোর্নিয়াসহ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য শহর গুলোতে এক জরিপে দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রের তরুনদের ৫১ শতাংশ গাজায় ইসরাইলি হামলার বিরুদ্ধে। সর্বশেষ ব্রিটেনে গার্ডিয়ান পত্রিকার এক জনমত জরিপে দেখা গেছে ব্রিটেনের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ ইসরাইলের বিরুদ্ধে। বিশেষ করা তরুনরা ইসরাইলের ওপর ক্ষুদ্ধ।
ইসরাইল বরাবর হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে তুলে ধরে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে বলে প্রচারনা চালানোর চেষ্টা করলেও তা ব্যর্থ হয়েছে। বিবিসি,সিএনএন, স্কাই এর মতো নিউজ চ্যানেলগুলো ইসরাইলের পক্ষে প্রচার চালালেও তা বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। বরং ফেসবুক ও টুইটারের মতো সামাজিক মাধ্যমে ইসরাইলি বর্বরতার ছবি ও বিবরন জনমতকে অনেক বেশি প্রভাবিত করেছে।
হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে একঘরে করার ইসরাইলি কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনে সংখ্যাগরিষ্ট দেশের ভোটাভুটির ভিত্তিতে ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধ তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ল্যাটিন আমেরিকার ৫টি দেশ বলিভিয়া ব্রাজিল পেরু ইকুয়েডর ও চিলি ইসরাইল থেকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নিয়েছে। দক্ষিন আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান খালেদ মিশালকে চিঠি লিখে সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। হামাসের জন্য এটা ছিলো বড় ধরনের কূটনৈতিক বিজয়।
ইসরাইল বিরোধী জনমত যে পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর কতটা চাপ সৃষ্টি করছে বৃটেন ও স্পেনের ইসরাইলে অস্ত্র বিক্রি পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত তার প্রমান। গাজা প্রশ্নে ব্রিটিশ সরকারের নীতিতে ক্ষুব্ধ হয়ে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সাইয়েদা হুসেইন ওয়ার্সি পদত্যাগ করেন।তিনি জানিয়েছেন, গাজা প্রশ্নে সরকারের নীতি তার পক্ষে আর সমর্থন করা সম্ভব নয় বলে তিনি পদত্যাগ করেন। তিনি তার ট্যুইটারে বলেন, তিনি ‘গভীর অনুশোচনা’ নিয়ে সরে যাচ্ছেন। সাঈদা ওয়ার্সীর পদত্যাগ সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে। তিনি বৃটেনের গাজা নীতির প্রতিবাদের পদত্যাগ করেন।
এছাড়া বৃটেনের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী নিক ক্লেগ শুরু থেকেই গাজায় ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়েছিলেন। গার্ডিয়ান পত্রিকায় এক নিবন্ধে তিনি ইসরাইলকে পরামর্শ দিয়েছিলেন দ্রুত হামাসের সাথে আলোচনায় বসার জন্য। ইউরোপের সাধারন মানুষের মধ্যে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ এই মাত্রায় গিয়েছিলো যে অষ্ট্রিয়ায় একজন চিকিতসক বয়স্ক ইহুদি নারীর চিকিতসা করতে অস্বীকার করে তাকে গাজায় গিয়ে চিকিতসা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। অনেক পশ্চিমা বিশ্লেষক মনে করে ইসরাইলের বর্বরতা অব্যাহত তাহলে ইউরোপ ও আমেরিকায় ইহুদি বিদ্বেষ বাড়তে পারে। ইসলমো ফোবিয়া এবং অ্যান্টি সেমিটিক প্রচারনা হিসাবে তুলে ধরে ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারবে না।
ইউরোপ ও আমেরিকার তুলনায় মুসলিম দেশগুলোতে ইসরাইল বিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে কম। যদিও সাধারন মানুষের মধ্যে ছিলো তীব্র ক্ষোভ। মুসলিম দেশগুলোর শাসকদের দমন পীড়ন আর বিধি নিষেধের কারনে বিক্ষোভ সমাবেশ কম হয়েছে। আরব দেশগুলোর চিত্র অনেকটা একই রকম। এছাড়া অনেক আরব দেশে আভ্যন্তরিন সংঘাত চলছে। তারপও সৌদি আরবে এক জনমত জরিপ থেকে সাধারন মানুষের মনোভাবের প্রতিফলন পাওয়া যায়।
রাকেন ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থার জরিপে দেখা যায় দেশটির ৯৫ শতাংশ নাগরিক ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যুদ্ধকে সমর্থন করেন। ৩ শতাংশ মাত্র দ্বিমত পোষন করেছেন। ২০০০ সৌদি নাগরিকের মধ্যে এই জরিপ চালানো হয়েছিলো। ৮২ শতাংশ মানুষ হামাসের রকেট নিক্ষেপ সমর্থন করেছেন। ১৪ শতাংশ এর বিরুদ্ধে মত দেন। দুই তৃতীয়াংশ লোক ইসরাইলের বিরুদ্ধ সামরিক অভিযান চালানোর পক্ষে মত দেন। ৮৬ শতাংশ সৌদি নাগরিক হামাসের আন্দোলনকে সমর্থন করেন। ৪ শতাংশ লোক মনে করেন মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে সর্ম্পকিত এই সংগঠনের ভিন্ন এজেন্ডা আছে। আর ১ শতাংশ মনে করেন হামাস ইসরাইলের পক্ষের একটি শক্তি। এই জরিপে এক তৃতীয়াংশ সৌদি নাগরিক ইসরাইলের পক্ষে স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে যুদ্ধে যাওয়ার পক্ষে মত দেন।