টাকা-পয়সা ছাড়াই পৃথিবীতে সর্বাপেক্ষা ‘সুখি’ মানুষের জীবন-যাপনের রহস্য !
শিরোনাম পড়ে হয়তো ভীষণ অবাক হয়ে ভাবছেন, টাকা ছাড়াও কি জীবন যাপন করা যায়? কীভাবে সম্ভব? অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্য! টাকা ছাড়া জীবন যাপনের কথা আমরা যেখানে ভাবতেই পারি না, সেখানে এক ব্যক্তি নিজের জীবন অনায়াসেই চালিয়ে নিচ্ছেন টাকা ছাড়াই। হ্যাঁ, আয়ারল্যান্ডের মার্ক বয়েল আক্ষরিক অর্থেই টাকা ছাড়া জীবন যাপন করছেন!
তিনি বলেন, ৭ বছর আগে যখন তিনি বিজনেস ও ইকোনোমিকসে ডিগ্রী নিচ্ছিলেন তখন মোটেও জানতেন না যে তিনি একটা সময়ে গিয়ে টাকা ছাড়া জীবন যাপনের পথটাকেই বেছে নেবেন নিজের জন্য। তার পরিকল্পনা ছিলো পড়াশোনা শেষ করে অনেক ভালো চাকরি করবেন, দারুণ সফলতা অর্জন করে বন্ধুদের চাইতে অনেক এগিয়ে থাকবেন, দামী দামী জিনিস কিনবেন নিজের জন্য। কিন্তু জীবনের এসব পরিকল্পনা হঠাৎ করেই বদলে ফেলেন তিনি।
পড়াশোনার শেষ করার পরে বেশ বড় কোম্পানিতে চাকরিও জুটিয়ে ফেলেছিলেন। অরগানিক ফুড কোম্পানির চাকরিটা বেশ ভালোও লাগছিলো তার। এভাবেই হয়তো তার জীবনটা এগিয়ে যেত সামনের দিকে যদি না তিনি ‘গান্ধী’ নামের ভিডিওটি কিনতেন। এই একটি ভিডিওটিই তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে অন্যদিকে। এবং অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে গত পনের মাসে তিনি একটি টাকাও আয় করেননি এবং একটি টাকাও খরচ করতে হয়নি তাকে!
জীবন সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি বদলের ঘটনাটি ঘটে একদিন সন্ধ্যায় বন্ধুর সাথে আড্ডা দেয়ার সময়। বন্ধুর সাথে জীবনদর্শন সম্পর্কে নানান কথা আলাপ আলোচনা হচ্ছিলো তার। আলোচনার সময়ে তিনি মহাত্মা গান্ধীর একটি উক্তির দ্বারা প্রবল ভাবে প্রভাবিত হয়ে পড়েন। উক্তিটি ছিলো “be the change you want to see in the world”। উক্তিটি তার মনে গেঁথে যায় এবং তিনি নিজের জীবনটাকে বদলে দেয়ার কথা ভাবতে শুরু করেন। দুই বন্ধু মিলে পরিবেশ দূষণ, যুদ্ধ এবং সমাজের নানা কলুষিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। তখন তার মনে হয় যে এসব কিছুর সমাধান একা করার বিষয়টি বিশাল সমুদ্রে একফোঁটা জলের মতই ক্ষুদ্র ও অর্থহীন।
বন্ধু চলে যাওয়ার পরে একা একা গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে যান তিনি। এরপর হঠাৎ তিনি অনুধাবন করতে পারেন, পৃথিবীর সকল সমস্যার গোড়া হলো টাকা। টাকার জন্যই সমাজে এতো অশান্তি আর হানাহানি। এরপর তিনি নিজের জীবনটাকে বদলে দেয়া শুরু করেন। তিনি বলেন “যদি আমরা নিজেদের খাবার নিজেরাই উৎপাদন করি এবং তার এক তৃতীয়াংশ প্রকৃতিতেই রেখে দেই, ঘরের সাজ বদলানোর সময় পুরোনো ভালো ফার্নিচার গুলো ফেলে না দেই তাহলে পরিবেশ অনেকটাই রক্ষা পাবে। আমাদেরকে যদি আমাদের নিজেদের খাবার পানি নিজেদেরই পরিষ্কার করে নিতে হতো তাহলে হয়তো পানিকে নানান রকমের দূষিত পদার্থ দিয়ে নোংরা করতাম না আমরা”।
এবার জানা যাক কীভাবে তিনি টাকা ছাড়াই জীবনযাপন করছেন সে ব্যাপারে। নিজের খাবার নিজেই উৎপাদন করে নেন তিনি। আর তাছাড়া প্রাকৃতিক নানান গাছপালার থেকেও খাবার সংগ্রহ করেন। খাবারের বর্জ্য রেখে দেন গাছের সার হিসেবে ব্যবহারের জন্য। থাকেন একটি ক্যারাভ্যানে। তিনি গোসল করেন নদীতে। দাঁত মাজার জন্য ব্যবহার করেন মাছের কাঁটা ও ফ্যানেল সিড। যাতায়াতের জন্য তিনি নিজস্ব সাইকেলটি ব্যবহার করেন। আর নিয়মিত সাইকেল চালানোর কারণে জিমে যাওয়ার প্রয়োজন হয়না তার। আলোর প্রয়োজন হলে মৌচাক থেকে প্রাকৃতিক মোম আহরণ করে মোমবাতি তৈরি করে নেন।
তাকে জিজ্ঞেস করা হয় যে তিনি তার আগের জীবন থেকে কী কী হারিয়েছেন নতুন এই জীবনযাত্রায়। তিনি উত্তর দেন- ট্র্যাফিক জ্যাম, হতাশা, বিষণ্ণতা, মেদ সমস্যা, আত্নহত্যার ইচ্ছা, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি। অনেকেই বলেছিলেন মার্ক বয়েলে পারবেন না টাকা ছাড়া জীবনযাপন করতে। কিন্তু তিনি টাকা ছাড়া ১৫টি মাস অনায়াসেই কাটিয়ে দিয়েছেন এবং বেশ সুখী জীবনযাপন করছেন।