কার্গো কন্টেইনারে ব্রিটেনে ঢুকার পথে ১ জন নিহত
সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ: ব্রিটেন, আমেরিকা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য সহ নানা উন্নত দেশে নিজের জীবন মান উন্নত করার লক্ষে কিংবা একটুখানি চাকরীর আশায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পন্থায় আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের বহু নাগরিক নানা কসরত, নানা পন্থা অবলম্বন করে থাকেন। কেউ কেউ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে চলেন, কেউ বাস, লড়ি, ট্র্যাম, ট্র্যাকে করে নানা ঝুপড়ি খাঁচায় আবদ্ধ হয়ে বর্ডার ক্রস করে কাঙ্ক্ষিত দেশে ঢুকার চেষ্টা হরহামেশাই করে থাকেন। এক্ষেত্রে পোয়া বারো মধ্যস্থতাকারী দালাল ও ফড়িয়াদের।এই ফাকে দালালেরা নানা ফন্দি ফিকির আর লোভনীয় ট্র্যাপে ফেলে ভুক্তভোগীদের সর্বস্বান্ত করে থাকে। কেউ কেউ সফল হন, তবুও এই সফলতার পর কারো কারো জীবনের গতিপথ হয় পরিবর্তন, একটু আনন্দ ফিরে আসে, তবে বেশীর ভাগের জীবন আরো দুর্বিসহ উঠে।এমন সংবাদ পত্র পত্রিকায় মাঝে মাঝে উঠে আসে, সংবাদের শিরোনামে কর্তৃপক্ষ হয় সজাগ। একটু নড়া চড়া, তারপর যেমন ছিলো- সব কিছু আগের মতোই চলে। দালালেরা কিছুদিনের জন্য থাকে চুপ চাপ। তারপর আবার নতুন উদ্যমে সব কিছু ম্যানেজ করে শুরু সেই একই কাজ- আদম পাচার।
আজকাল ইউরোপ হয়ে ব্রিটেন ঢুকা বেশ কঠিন এক কাজ বলতেই হবে। কেননা, ব্রিটেনের বর্ডারে সব দিকেই এখন কড়াকড়ি। তার উপর পূর্ব ইউরোপের মানব-স্রোত ব্রিটেনে ঢেউ এসে লাগায় ভিতর থেকেই সরকারের উপর অসম্ভব চাপ রয়েছে। বর্ডার এজেন্সি প্রায়ই এখন বাসা বাড়ি, রেস্টুরেন্ট, কোম্পানি, ওয়ার হাউস, কলেজ, হাসপাতাল, মসজিদ, মন্দির সর্বত্রই রেডের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে তারা অনেক সফলতাও পাচ্ছে।এই অবস্থায় বর্ডার এজেন্সির চোখ ফাঁকি দিয়ে এবং আধুনিক স্ক্যানার ও ল্যাজার মেশিনের নজর এড়িয়ে ব্রিটেনে অবৈধভাবে ঢুকা প্রায় অসম্ভব এক কাজ বলা যায়। তারপরেও দালালেরা বসে নেই।
এমনি এক সিকিউরিটি চেকের সময় ব্রিটেনের টিলবারি ডকে বেলজিয়াম থেকে পি এন্ড ও ফেরির মাধ্যমে ৫০টি কন্টেইনার সার্চ করে ৩১ জন ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত নাগরিকদের অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় উদ্ধার করেছে। বর্ডার এজেন্সি ও পুলিশের যৌথ চেকের সময় ধরা পড়ে এ সব কন্টেইনারের ভিতরে মানুষ পাচার হচ্ছে। পুলিশ চেকের সময় কন্টেইনারের ভিতরে একজন মৃত্যু বরন করেন, বাকি ৩০ জনকে মুমুর্ষ অবস্থায় স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। তাদের সকলেই অবৈধভাবে বেলজিয়াম থেকে ব্রিটেনে ঢুকতে চাইছিলেন। পুলিশ কারো পরিচয় এখনো প্রকাশ করেনি, শুধু বলছে সকলেই ইন্ডিয়ান অরিজিন বলে তাদের ধারণা।
টিলব্যারি ডকে এসেক্সের পুলিশ আজ সকাল ৬.৩০ মিনিটের সময় অভিযান চালিয়ে এসব কন্টেইনার থেকে এদের গ্রেপ্তার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করে বলে জানানো হয়েছে।
পুলিশের সুপারিন্টেনডেন্ট ট্রেভর রাউস বলেন ১ জনের মৃত্যুকে তারা “হোমিসাইড” হত্যাকাণ্ড হিসেবেই দেখছেন।
পুলিশ বলছে ফেরির মধ্যে আরো ৫০টি কন্টেইনার তারা সার্চের আওতায় নিয়েছেন। তাদের ধারণা অন্যান্য কন্টেইনারগুলোতেও আরো মানুষ পাচারের জন্য নিয়ে আসা হতে পারে।
পুলিশ বলছে এই মুহূর্তে তাদের স্বাস্থ্যগত দিকেই তারা নজর দিচ্ছেন। কারণ এদের অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন।
হাসপাতালের এক্সিডেন্ট এন্ড ইমার্জেন্সি সার্ভিসের একজন মুখপাত্র সংবাদ পত্রের জন্য এক ষ্ট্যাটমেন্টে জানিয়েছেন, আনুমানিক ৬.৩৭ মিনিটে ডক থেকে তারা কল পান একজন ডেড বডির সংবাদ ও বাকি অনেকের অবস্থা সংকটাপন্ন। এম্বুল্যান্স সার্ভিস, দুটি র্যাপিড রেসপন্স কার, দুইজন ডিউটি অপারেশনাল ম্যানেজার, ডাক্তার সহ তাৎক্ষণিক টিম তারা ডকে পাঠান।তাৎক্ষনিক ট্রিটম্যান্ট দিয়ে ৩০ জনের মধ্যে ৭জনকে সাউথেন্ড হাসপাতালে, ৯ জন লন্ডন হোয়াইট চ্যাপেল হাসপাতালে আর বাকী ১৮ জনের মধ্যে শিশু সহদের বাসিলডন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করেন।
পরে এসেক্স পুলিশের মুখপাত্র সাংবাদিকদের জানান, তারা টিলবারি ডক ফেরি থেকে কন্টেইনারের ভিতর থেকে নারী পুরুষ শিশু সহ ৩১ জনকে এরেস্ট করেছেন, তাদের মধ্যে একজন মৃত্যু বরণ করেছে কন্টেইনারের ভিতরে, বাকি ৩০ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করেছেন, তাদের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।
বেলজিয়ামের জিবার্গ পোর্ট হলো ইউরোপের গেট ওয়ে- যা তাদের ওয়েব সাইটেও এরকম দাবী করা হয়েছে। নিকট ১৯৮৫ সালে এই পোর্টের টোট্যাল ট্র্যাফিক যেখানে ১৪ মিলিয়ন ছিলো, ২০১২ সালের দিকে এসে সেই সংখ্যা তিনগুণ বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ৪৩.৫ মিলিয়নে, যা বর্তমানে আরো বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইনভেস্টিগ্যাশন অব্যাহত আছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।