লন্ডনে ক্ষুব্দ সাংবাদিকদের প্রতিবাদ সমাবেশ
সমাজকল্যান মন্ত্রীকে অভিলম্বে অপসারন করার জোর দাবী
সমাজকল্যানমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীকে অভিলম্বে মন্ত্রীসভা থেকে অপসারন করার দাবী জানিয়েছেন লন্ডনে কর্মরত সর্বস্তরের সাংবাদিকরা।
গত ১৫ আগস্ট শুক্রবার পূর্ব লন্ডনে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের উদ্যোগে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে এ আহবান জানানো হয়। প্রতিবাদ সমাবেশে সাংবাদিকরা সমাজকল্যান মন্ত্রীর অশ্লীল ও অশ্রাব্য ভাষায় ঘোটা সাংবাদিক সমাজকে গালি দেয়ার ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বলেন, সাংবাদিকরা সভ্যতার কারিগর। বিংশ শতাব্দিতে সমাজ ও রাস্ট্রকে দায়িত্ববোধ এবং সঠিক পথে পরিচালিত করতে সংবাদিকরা অগ্রনী ভুমিকা পালন করে যাচেছন। অথচ এই মহান পেশায় দায়িত্বরত সাংবাদিকদের চরিত্র হননের অপচেস্টা করেছেন মহসিন আলী। রাস্ট্রের একজন দায়িত্ববান মন্ত্রীর মুখে এমন অশ্লীল কথা ও ব্যবহার পুরো জাতিকে হতাশ করেছে। এ জন্য অভিলম্বে মহসিন আলীকে অপসারন করে দেশ ও জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করতে হবে।
পূর্ব লন্ডনের মন্টিফিউরী সেন্টারে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সাপ্তাহিক সুরমা পত্রিকার সাবেক সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাসন।
সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকার সম্পাদক তাইছির মাহমুদ এর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এ প্রতিবাদ সমাবেশে বৃটেনের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত অর্ধশতাধিক সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।
শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাপ্তাহিক বাংলা পোস্ট সম্পাদক ব্যারিস্টার তারেক চৌধুরী।
বক্তব্য রাখেন, লন্ডনবাংলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাপ্তাহিক নতুন দিন সম্পাদক মহিব চৌধুরী, চ্যানেল আই ইউরোপের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ও ইউকে বাংলা প্রেসক্লাবের আহবায়ক রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী শুয়েব, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক শেখ মোজাম্মেল হোসেন কামাল, সাপ্তাহিক সুরমার সম্পাদক আহমদ ময়েজ, সাবেক সম্পাদক সৈয়দ মনসুর উদ্দিন আহমদ, মাসিক দর্পন সম্পাদক রহমত আলী, সাপ্তাহিক লন্ডনবাংলার সহকারী সম্পাদক আকবর হোসেন, লন্ডনবাংলা প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, সাপ্তাহিক ইউরোবাংলা‘র সাবেক সম্পাদক আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারল, দৈনিক সিলেট সুরমার সম্পাদক ফয়সল আলম, চ্যানেল এস‘র বার্তা সম্পাদক কামাল মেহেদী, সাপ্তাহিক সুরমার বার্তা সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম, মাসিক নারী ম্যাগাজিন সম্পাদক শাহনাজ সুলতানা, এটিএন বাংলা ইউকের সিনিয়র রিপোর্টার মুস্তাক আলী বাবুল, সাপ্তাহিক দেশ‘র বার্তা সম্পাদক ফয়সাল আইয়ুব, বাংলাটিভির চীফ রিপোর্টার ইব্রাহিম খলিল, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ পত্রিকার সম্পাদক কয়েছ আলী, মুসলিম উইকলি সম্পাদক মুহাম্মদ সোবহান, দ্যা সানরাইজ টুডে সম্পাদক (নির্বাহী) এনাম চৌধুরী, সাপ্তাহিক লন্ডনবাংলা‘র বিশেষ প্রতিনিধি তৌহিদ আহমদ, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক সৈয়দ জহুরুল হক, সাপ্তাহিক সুরমার হেড অব প্রডাকশন রেজাউল ইসলাম নান্টু, সাপ্তাহিক দেশ‘র স্টাফ রিপোর্টার রোমান বখত চৌধুরী, চ্যানেল এস’র চীফ ক্যামেরাম্যান সুভাষ দাশ, চ্যানেল আই ইউরোপের রিপোর্টার মুহাম্মদ কাওসার, এনটিভি ইউরোপের রিপোর্টার সামিউল ইসলাম চয়ন প্রমুখ।
সমাবেশে মহিব চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকদের নিয়ে মন্ত্রীদের কটাক্ষ নতুন কিছু নয়। তবে মহসিন আলীর সাম্প্রতিক বক্তব্য অভদ্রতার সকল মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এমন বেফাস ও অশ্লীলতার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। মন্ত্রীদের এমন বক্তব্যে সরকারের ইমেজ সংকট দেখা দেবে। সাংবাদিকদের চরিত্র হনন করার অপরাধ থেকে কোনভাবেই মহসিন আলীকে ক্ষমা করা যায়না। এমন অথর্ব ও চরিত্রহীন মন্ত্রীকে কেবিনেট থেকে দ্রুত অপসারনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহবান জানান তিনি।
রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী শুয়েব বলেন, মহসিন আলী সাংবাদিকদের আক্রমন করতে গিয়ে যে শব্দ ব্যবহার করেছেন তার মাধ্যমে প্রমানিত হয়েছে, তিনি কেমন রুচির মানুষ। এমন বক্তব্যের পরও তিনি কিভাবে মন্ত্রী হিশেবে বহাল আছেন, তা ভাবতেই অবাক লাগে। ওয়ান ইলেভেন থেকে রাজনীতিবিদরা যে কোন শিক্ষা নেননি। তার প্রমান দিলেন মহসিন আলী। তিনি সাংবাদিকদের যে হুমকি ধমকি দিচেছন তার জবাব পেতে পারেন যদি ভবিষ্যতে আবারো ওয়ান ইলেভেন চলে আসে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাংবাদিকরা অনেক কিছু চাইলে করতে পারছেননা। কারন তাদের প্রতি জুলুম-নির্যাতন আসছে। তবে প্রবাসে অবস্থানরত সাংবাদিকরা এর বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে। আর এই আন্দোলন চলবে মহসিন আলীকে অপসারন না করা পর্যন্ত।
মোজাম্মেল হোসেন কামাল বলেন, মন্ত্রী যে ভাষায় কথা বলেছেন তা কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়। এর একটি মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত কঠোর আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। একটি বর্বর ও অশভ্যতাকে জাতীয় পর্যায়ে যারাই প্রশয় দেবে তারা মানুষের কাছে অপরাধী হিশেবে চিহিত হয়ে থাকবে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে এই দায়িত্ব নিজে নিয়ে মন্ত্রীকে অভিলম্বে অপসারন করার দাবী জানান তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে নজরুল ইসলাম বাসন বলেন, দেশ ও জাতির সম্মান ও ইজ্জত রক্ষার্থে মহসিন আলীকে থামানো উচিত। তিনি যে গন্তব্যে রওনা দিয়েছেন এটি সমাজ ও সভ্যতাকে কলংকিত করবে। বিশেষ করে সিলেটে বসে তিনি যে ভাষায় কথা বলেছেন, তার কারনে সিলেটের কঐতিহ্যে আঘাত লেগেছে। গোটা সাংবাদিক সমাজ আজ মন্তীর এমন আচরনে ক্ষুব ও বিক্সুব্দ। এমন আচরনকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে গুরুতর অপরাধ হিশেবে বিবেচনা করা উচিত। তাই অভিলম্বে তার অপসারন করে দেশে একটি সুন্দর দৃস্টান্ত স্থাপনের জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানান তিনি।
সামাবেশ থেকে মন্ত্রীর অপসারন দাবীতে হাইকমিশনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান, লন্ডনে আগামীতে সমাজকল্যান মন্ত্রীর যে কোন সভা সমাবেশ বয়কট ও অপসারনের আগ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওযার ব্যাপারে সাংবাদিকরা একমত পোষন করেন।
এদিকে যেহতু বাংলাদেশে এ পর্যন্ত কোন মন্ত্রীকে অপসারনে কোন দৃস্টান্ত নেই। সেহেতু মন্ত্রী মহসিন আলীকে স্ব ইচছায় মন্ত্রী পরিষদ থেকে পদত্যাগ করে দৃস্টান্ত স্থাাপনের জন্য সাংবাদিকরা তার প্রতি আহবান জানান।