মালয়েশিয়ায় ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার বাংলাদেশী আটক
মনির হোসেন: মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে অবস্থান করা বিদেশী শ্রমিক আটক অভিযানে রোববার সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশী ধরা পড়েছে। ২৪ ঘণ্টার যৌথ অভিযানে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জহুরবারুসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ফ্যাক্টরিতে অভিযান চালিয়ে কয়েক হাজার বিদেশীকে আটক করে পাশের থানা ও ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যায়। এর মধ্যে বাংলাদেশীর সংখ্যা দুই হাজার ৯০০। যাদের কারো কাছে পাসপোর্ট বা কাজের পারমিট ছিল না।
আটক হওয়া বাংলাদেশীদের কেউ কেউ ইমিগ্রেশন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের পায়ে ধরে আকুতি করে বলেছেন, ‘স্যার আমাদের জেলে পাঠিয়ে দেন, তবু দেশে ফেরত পাঠাবেন না’। এমন খবর মালয়েশিয়ার টিভি চ্যানেলগুলোতে প্রচার হওয়ার পর হাজার হাজার বাংলাদেশী নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পালাতে শুরু করেন।
জানা গেছে, গত শনিবার মালয়েশিয়া সময় বেলা ২টা থেকে জহুরবারুর ৭০০ ফ্যাক্টরিতে একযোগে অভিযান চালানো হয়। রোববার দুপুর পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, পাকিস্তান, মিয়ানমার ও বাংলাদেশী নাগরিক ধরা পড়ে।
জহুরবারু থেকে গতকাল হাসান রাজা, মেহেদী হাসান ও উজ্জ্বল নামে বাংলাদেশী জানান, মালয়েশিয়ায় প্রতিদিনই অবৈধ শ্রমিক ধরার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ডিটেনশন ক্যাম্পগুলো ভরে যাওয়ায় অভিযান কিছুটা শিথিল করা হয়েছিল। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে পুলিশ, রেলা, ইমিগ্রেশন ও জিপিজে বড় ধরনের ধরপাকড় অভিযান চালিয়েছে। এই সংবাদ গতকাল রোববার বেলা দেড়টায় মালয়েশিয়ার শীর্ষ টিভি চ্যানেল টিগা-৩ তে সম্প্রচার করা হয়েছে।
তারা বলেন, টিভিতে অন্যান্য দেশের নাগরিকদের দেখানো না হলেও শুধু বাংলাদেশের দুই হাজার ৯০০ নাগরিক আটকের কথা ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দেখা গেছে, কোনো কোনো বাংলাদেশী ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার পা-হাত জড়িয়ে কান্না করছেন। আর বলছেন, ‘স্যার আমরা দেশ থেকে সুদে টাকা নিয়ে এ দেশে এসেছি। আমাদের এখানে মেরে ফেলেন। নতুবা জেলে পাঠান। তবু আমাদের দেশে ফেরত পাঠাবেন না। খবরে বলা হয়েছে বাংলাদেশী যারা ধরা পড়েছে তাদের কারো পাসপোর্টে ওয়ার্ক পারমিট ছিল না।
এ বিষয়টি জানার জন্য গত রাতে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার এ কে এম আতিকুর রহমানের সাথে বার বার যোগাযোগ করা হলেও তিনি টেলিফোন ধরেননি। এর আগে অবশ্য হাইকমিশনার বলেছিলেন, মালয়েশিয়ায় যারা অবৈধভাবে অবস্থান করছে তাদের আউট পাস অথবা ট্রাভেল পাসে দেশে ফিরে যেতেই হবে। এ ছাড়া আর বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই।
এ দিকে অবৈধভাবে অবস্থানকারীদের ব্যাপক ধরপাকড় অভিযান শুরু হলেও থেমে নেই আদম পাচার সিন্ডিকেটের তৎপরতা। এই অভিযানের মধ্যেও প্রতিদিন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, রিজেন্ট, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ও মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সে আদম পাঠানো অব্যাহত রয়েছে। তবে মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন ট্যুরিস্ট ও ভিজিট ভিসাধারীদের মধ্যে সন্দেহজনক ব্যক্তিদের ফিরতি ফ্লাইটে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে বলে বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়।
ইমিগ্রেশন সূত্র জানায়, গত এক মাসে মালয়েশিয়া বিমানবন্দর থেকে প্রায় দুই হাজার সন্দেহজনক ট্যুরিস্টকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে বিমান ও মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের যাত্রীই বেশি।
বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিদিন বিমানের ফ্লাইটে গড়ে ২০ জন করে ফিরতি ফ্লাইটে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। ওই হিসাবে গড়ে মাসে ৬০০ জন। রিজেন্ট ও ইউনাইটেডের সংখ্যা মাসে ২০০। আর মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের প্রতিদিনের তিনটি ফ্লাইটের হিসাবে মাসে এক হাজার যাত্রী ফেরত এসেছে। সর্বশেষ গত ১৫ আগস্ট ১৩ জন ও ১৬ আগস্ট ১৬ জনকে ফিরতি ফ্লাইটে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এর আগে একই ফ্লাইটে ৬৫ জনও ফেরত এসেছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মূলত ঢাকা এয়ারপোর্ট কন্ট্রাক্ট করেই এসব আদম মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করে। তবে অধিকাংশই নিরাপদে ঢুকে পড়তে পারছে। এদের কারণেই এখন মালয়েশিয়ায় অবৈধ শ্রমিকে গিজগিজ করছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।
গতকাল রাতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনের ওসি আব্দুস সালামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যেসব যাত্রীকে মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন ফেরত পাঠাচ্ছে তাদের সবার পাসপোর্ট ভিসা ঠিক আছে। তারপরও কেন তাদের ফেরত পাঠাচ্ছে তা আর আমরা বলতে পারছি না। তবে ইমিগ্রেশন অথরিটি যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এটা আমাদের ক্ষেত্রেও হয়ে থাকে। আমরা যাদের নিয়ে সন্দেহ করি তাদের ফিরতি ফ্লাইটে ফেরত পাঠাই।