ব্রিটেনে স্থায়ী হচ্ছেন তারেক রহমান
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ব্রিটেনে স্থায়ী হওয়ার চেষ্টা করছেন। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন তিনি। এ মাসের শুরুতে পেয়েছেন ‘রেসিডেন্ট পারমিট’। ফলে নাগরিকত্ব পাওয়া এখন সময়ের ব্যাপার। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের নেয়া সব প্রচেষ্টা আপাতত ব্যর্থ হয়ে গেল বলে দাবি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। ২০১২ সালে ব্রিটেন সরকার তারেক রহমানকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, তারেক রহমান ব্রিটেনের নাগরিকত্ব পেলে বাংলাদেশের নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। প্রার্থী হতে হলে তাকে বিদেশি নাগরিকত্বটি ত্যাগ করতে হবে।
জানা গেছে, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার সম্প্রতি বিশেষ কিছু উদ্যোগ নেয়। এরই অংশ হিসেবে সরকার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়। তবে যুক্তরাজ্য সরকার তাতে সায় দেয়নি। ব্রিটিশ সরকার আপাতত তাকে ফিরিয়ে দেয়ার পক্ষে নয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে সংলাপে বসতে বাধ্য করা এবং নেত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নিতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে বিএনপি। এজন্য রমজান মাসজুড়ে ঈদের পর কঠোর আন্দোলনের হুমকি দেয়া হয়। এ অনুযায়ী শনিবার ‘গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে’ কালো পতাকা মিছিল করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিশদলীয় জোট। রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, এ জোটভুক্ত দলগুলো আগামীতেও দেশি-বিদেশি নানা ইস্যুতে এমন ‘নরম’ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করবে। এরপর নভেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে তারা সরকারকে সংলাপে বসতে বাধ্য করতে চাইবে। জনমত তাদের অনুকূলে এলে চাইবে সরকারের পদত্যাগ নতুবা মধ্যবর্তী নির্বাচন।
এ কৌশল ভন্ডুল করতেই সরকার চাইছিল তারেককে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে। এরই অংশ হিসেবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সহায়তাও চাওয়া হয়। তবে এতে কার্যত সাড়া মেলেনি। যুক্তরাজ্য সরকার তার আইন-রীতি উপেক্ষা করে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা কাউকে হস্তান্তর না করার নীতিতে অটল রয়েছে। এ কারণেই সেখানে তাকে রেসিডেন্ট পারমিট দিয়েছে তারা। ফলে সেখানে নির্বিঘ্নে অবস্থান করার আইনি ভিত্তি পেলেন তারেক রহমান। এর পরই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন বলে কয়েকটি পত্রিকা খবর প্রকাশ করে।
জানা যায়, কেউ একাধারে পাঁচ বছর ব্রিটেনে থাকার পর তিনি ব্রিটিশ নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন। তবে এ সময়ের মধ্যে ওই ব্যক্তি স্বদেশে পাড়ি জমাতে পারেন না। স্বদেশে গেলে তার রাজনৈতিক আশ্রয় ভিসা বাতিল হয়ে যায়।
তারেকের যুক্তরাজ্যে অবস্থানের বিষয়ে লন্ডনে বসবাসকারী ইমিগ্রেশন ল’ বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা বলেন, যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া ব্যক্তি রাজনৈতিক কর্মকা-সহ যে কোনো আয়মূলক কাজে যুক্ত হতে পারেন, শুধু ব্রিটিশ আইন লঙ্ঘন করতে পারবেন না। যুক্তরাজ্য ইমিগ্রেশন রুল ৩৩৪-বি ধারা অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা যেসব সুবিধা পান, রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা ব্যক্তিও তা পাবেন। ব্রিটিশ অ্যাসাইলাম অনুযায়ী রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা ব্যক্তির নাগরিকত্ব পেতে ছয় বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। সাত বছরের মাথায় তিনি নাগরিকত্ব পান। তারেক রহমান বাংলাদেশের আইনে অভিযুক্ত। এ কারণে যুক্তরাজ্য কি তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে পারে- এ প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার আবু বকর বলেন, তা পারে না। তারেক রহমান যুক্তরাজ্যে কোনো অপরাধ করলে তাকে যুক্তরাজ্যের আইন অনুযায়ী সাজা ভোগ করতে হতো। কিন্তু সরকার চাইলেই তাকে ফেরত পাঠাতে পারে না। কারণ এক্ষেত্রে এদেশের আদালতের অনুমতি লাগবে। আবু বকর মোল্লা বলেন, এঙ্ট্রাডিশন অ্যাক্ট-২০০৩ (প্রত্যর্পণ আইন) অনুযায়ী, রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকাকালে কাউকে তার স্বদেশে ফেরত পাঠানোর আগে যুক্তরাজ্য সরকারকে আদালতের অনুমতি নিতে হবে। ইন্টারপোল তারেক রহমানকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে যুক্তরাজ্য সরকারের সাহায্য চাইতে পারে কিনা- এমন প্রশ্নে ব্যারিস্টার আবু বকর বলেন, হ্যাঁ, সেটা পারে। তবে যুক্তরাজ্য সরকারকে আদালতের বিচারকদের সন্তুষ্ট করতে হবে। তা না হলে তারেককে ফেরত পাঠাতে পারবে না।
উল্লেখ্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালে যৌথ বাহিনী তারেক রহমানকে গ্রেফতার করে। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে পাড়ি জমান তিনি। তারপর থেকেই তিনি যুক্তরাজ্যে বসবাস করে আসছেন।