বিশ্বব্যাপী ইসরাইলি পণ্য বর্জনের দাবি জোরদার হচ্ছে
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের নির্লজ্জ পাশবিকতার প্রতিবাদে বিশ্বব্যাপী ইসরাইলি পণ্য বর্জনের দাবি জোরদার হচ্ছে। গাজা উপত্যকায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার জন্য যখন আন্তর্জাতিক চেষ্টা জোরদার হচ্ছে তখন ইসরাইলি পণ্য বর্জনের পাশাপাশি ইসরাইলকে যাতে কোনো দেশ অস্ত্রসাহায্য দিতে না পারে সে চেষ্টাও শুরু করেছে অনেকে।
ব্রিটেনের যুদ্ধবিরোধী ও ফিলিস্তিনপন্থি বিভিন্ন সংগঠন ইসরাইলি পণ্য বিক্রি করে-এমন বেশ কিছু ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের সামনে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছে। বিক্ষোভের মুখে ব্রিটেনের দ্বিতীয় শীর্ষ ডিপার্টমেন্টাল স্টোর সেইন্সবেরি গতকাল রোববার ইসরাইলি কোম্পানি কুশার-এর তৈরি সব খাদ্যদ্রব্য সরিয়ে ফেলেছে। শনিবার বার্মিংহামের টেস্কোতে ইসরাইল বিরোধী একটি গোষ্ঠী সেইন্সবেরির একটি স্টোরে হামলা চালানোর পর এ পদক্ষেপ নেয়া হয়।
গত ৮ জুলাই অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর ভয়াবহ হামলা শুরু করে ইহুদিবাদী ইসরাইল। টানা একমাস ধরে তেল আবিবের পাশবিকতায় শহীদ হয়েছেন অন্তত ২,০০০ ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন আরো ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ। মানবিক ত্রাণ তৎপরতা চালানোর পাশাপাশি একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার আলোচনা করার স্বার্থে বর্তমানে গাজায় যুদ্ধবিরতি চলছে।
জুলাই মাসের গোড়ার দিকে গাজায় ইহুদিবাদী আগ্রাসন শুরুর পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই ব্রিটেনের কোনো না কোনো শহরে ইসরাইল বিরোধী বিক্ষোভ হয়ে আসছে। দেশটির ফিলিস্তিনপন্থি বিভিন্ন সংগঠন শুরু থেকেই ইসরাইলি পণ্য বর্জনের আহ্বান জানিয়ে আসছিল।
আয়ারল্যান্ডের ফিলিস্তিনপন্থি সংগঠনগুলো রাজধানী বেলফাস্টের বেশ কিছু স্টোর থেকে ইসরাইলি পণ্য সরিয়ে ফেলতে এসব স্টোরের মালিকদের বাধ্য করেছে। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের বিক্ষোভকারীরা ইসরাইলি পণ্য বর্জনের আহ্বান জানানোর পাশাপাশি কী কী কারণে শান্তিকামী মানুষ এ কাজ করবে তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। রোববার নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডের সমুদ্রবন্দরে একদল বিক্ষোভকারী ইসরাইলি পণ্যবাহী একটি জাহাজ ভিড়তে দেয়নি। অবশ্য পরে পুলিশের সহযোগিতায় ইসরাইলের অন্যতম বড় পরিহণ কোম্পানি জিম-এর জাহাজটি অকল্যান্ড বন্দরে নোঙ্গর করতে সক্ষম হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন জনগণের তীব্র প্রতিবাদের মুখে পশ্চিম তীরের ইসরাইলি উপশহরগুলো থেকে পোলট্রি ও ডেইরি পণ্য আমদানি স্থগিত করেছে। এর আগে ইউরোপীয় কমিশন গত ফেব্রুয়ারি মাসে পূর্ব জেরুজালেম ও গোলান মালভূমির ইসরাইলি উপশহরগুলো থেকে সব ধরনের পোলট্রি ও ডেইরি পণ্য আমদানি স্থগিত করে দিয়েছিল।
এদিকে ইসরাইলি দৈনিক ডি মারকেজ জানিয়েছে, বেশ কিছু ইউরোপীয় কোম্পানি ইসরাইল থেকে পণ্য আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। ব্রিটিশ আমদানিকারকরা তেল আবিবকে জানিয়ে দিয়েছে, এই মুহূর্তে ব্রিটেনে ইসরাইলি পণ্যের কোনো ক্রেতা নেই।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গাজায় ইহুদিবাদী আগ্রাসন শুরুর আগেও ইসরাইলে অর্থনৈতিক মন্দা চলছিল। এবার বিশ্বব্যাপী অবৈধ রাষ্ট্রটির পণ্য বর্জনের রব ওঠার ফলে তেল আবিবের অবস্থা আরো শোচনীয় হয়ে পড়বে। এ ছাড়া, গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগ্রামীদের রকেট হামলার ফলে ইসরাইলে এখন আর কোনো উদ্যোক্তা বিনিয়োগ করতে রাজি নয়। ফলে সার্বিকভাবে ইহুদিবাদী সরকারের জন্য আগামীতে আরো কঠিন দিন অপেক্ষা করছে।