গাজার শিশু ও গর্ভবতীরা যে কারণে ইসরায়েলের টার্গেট

Gazaফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের বর্বরতা পূর্বের সব সীমাকে ছাড়িয়ে গেছে। হামাসকে দমনের নামে এ অভিযান চালানো হলেও শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ, নারী এবং শিশুরাও।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজায় চলতি বছরের ৮ জুন থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলের আগ্রাসনে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত ১৯৭৩ জনের প্রাণহানি হয়েছে। নিহতদের ৭২ শতাংশই বেসামরিক লোক। এদের মধ্যে ৪৫৯টি শিশু এবং ২৩৮ জন নারীও রয়েছে।
গাজার গর্ভবতী নারী এবং তাদের অনাগত শিশুরাও ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে।
ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় ৯ ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়েছে, যা জাতিসংঘের পরিসংখ্যানে অন্তর্ভুক্ত নয়।
প্রশ্ন উঠেছে- ইসরায়লে কেন গাজার গর্ভবতী নারী এবং তাদের শিশুদের টার্গেটে পরিণত করছে?
কারণ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত ২০ জুলাই খান ইউনিসে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আবু জামা গোত্রের ২৫ সদস্য নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে ১৮ শিশু এবং ৫ নারী ছিলেন, যারা হামলার ঠিক আগে ইফতার করতে বসেছিলেন। নিহত নারীদের ৩ জনই ছিলেন গর্ভবতী।
ইসরায়েলের হামলা থেকে বাঁচতে গাজার ১ কোটি ৮০ লাখ বাসিন্দাদের একমাত্র আশ্রয়স্থল জাতিসংঘের শরণার্থী শিবির। হামলা শুরুর পর থেকে জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলগুলোতেই ৩৪৪ শিশুর জন্ম দিতে বাধ্য হয়েছেন ফিলিস্তিনি নারীরা।
তবে সব নিয়ম–নীতি বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সেসব স্কুলেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গত ২২ জুলাই জাতিসংঘের একটি স্কুলে ইসরায়েলের হামলায় ১৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়। এর এক সপ্তাহ পরেই আরেকটি স্কুলে নিহত হন আরও ১৭ জন। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
অথচ হামলায় বেসামরিক লোক নিহত হওয়ার জন্য হামাসকেই দায়ী করেছে ইসরায়েল। তাদের দাবি, সন্ত্রাসী সংগঠন হামাস গাজার নিরীহ মানুষদের মানববর্ম হিসেবে ব্যবহার করায় হামলায় বেসামরিক লোক নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে।
অথচ বিবিসিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধানে এ ধরনের মানববর্মের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
গাজার সাধারণ মানুষ বলছেন, হামাসের পক্ষ থেকে কোনো মানববর্ম তৈরি করা হয়নি বা এ কাজে হামাস কখনও কোনো আহ্বান জানায়নি; চাপও দেয়নি।
তাদের দাবি- ইসরায়লের কাছে যদি এ ধরনের প্রমাণ থাকে তা যেন জনসম্মুখে প্রকাশ করে।
ইসরায়েল মনে করছে, গর্ভবতী মায়েদের হত্যার মাধ্যমে অনাগত ‘সন্ত্রাসী’কে হত্যা করা যাবে। কেননা, এসব মায়েরাই তাদের সন্তানের জন্য মানববর্ম।
ইসরায়লের সংসদ সদস্য ও সেনা কর্মকর্তার বক্তব্যেও কেন ইসরায়েল নিরীহ ফিলিস্তিনি, গর্ভবতী নারী ও অনাগত শিশুদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে- এসব প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায়।
সম্প্রতি ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল ওরেন শাচর বলেন, আমরা তাদের পরিবারকেও হত্যা করলে, তারা ভীত হয়ে পড়বে।
আয়ালেট শ্যাকড নামের ইসরায়েলি পার্লামেন্টের এক সদস্য হামাসকে ‘সাপের দল’ হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, ‘সন্ত্রাসবাদের সাথে যুক্ত নয় এমন অসংখ্য নারী-পুরুষের মাঝে সন্ত্রাসীরা লুকিয়ে থাকে। তাই, তারা সবাই আমাদের শত্রু এবং তাদের সবারই মৃত্যু প্রাপ্য। এখন এদের সাথে মায়েরাও অন্তর্ভুক্ত। তাদের নিঃসন্দেহে মৃত সন্তানের পথে পাঠানো উচিত। কেননা মায়েরাই এসব সাপের জন্ম দেয়। অন্যথায়, একই ধরনের আরও সাপ জন্ম নেবে।’
-স্টপ ওয়ার কোয়ালিশন অনুসারে সংক্ষেপে অনুলিখিত

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button