লন্ডনে বাঙালি-বিয়ের ধুম
তবারুকুল ইসলাম: লন্ডনে বাঙালিদের বিয়ের যেন রীতিমত ধুম লেগেছে। বিশেষ করে বাঙালি অধ্যুষিত পূর্ব লন্ডনে বিয়ের এত আয়োজন হচ্ছে যে হল ভাড়া পাওয়াই মুশকিল। এবার গ্রীষ্মের ছুটিতে রমজান মাস থাকার কারণে থেমে ছিল অনেক বিয়ের আয়োজন। আবার দেশটিতে স্পাউস ভিসায় কড়াকড়ি এবং নতুন প্রজন্মের পছন্দের প্রতি গুরুত্ব দেয়ার কারণে লন্ডনে বিয়ে আয়োজনের প্রবণতা বেড়েছে। বিয়ের অস্বাভাবিক খরচ নিয়েও অনেকে আছেন বিপাকে।
ভিনদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করলেও বাঙালি পরিবারগুলো সাধারণত বাংলাদেশে তাদের সন্তানদের জন্য বিয়ের ব্যবস্থা করেন। নিজস্ব সংস্কৃতির প্রতি টান এবং শেকড়ের সাথে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য প্রবাসী পরিবারগুলো এমনটি প্রধান্য দেয়। কিন্তু যুক্তরাজ্যের বাঙালিদের ক্ষেত্রে সেই রীতির অনেকটা পরিবর্তন লক্ষ্যণীয়। দেশটিতে ইমিগ্রেশন আইনের কড়াকড়ির ফলে অনেকে বাধ্য হয়ে যুক্তরাজ্যেই বিয়ের ব্যবস্থা করছেন।
উল্লেখ্য, ইউরোপিয় ইউনিয়ন বহির্ভূত কোনো দেশ থেকে স্বামী বা স্ত্রীকে ব্রিটেনে নিতে হলে স্পন্সরকারীর আয় বছরে ১৮ হাজার ৬০০াউন্ড থাকতে হয়। ব্রিটেনে ন্যূনতম মজুরীতে পূর্ণকালীন কাজ করলে বছরে সর্বোচ্চ ১৩ হাজার পাউন্ড আয় করা সম্ভব। ফলে স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য বাংলাদেশে এসে বিয়ে করা একটি বড় বাধা।
পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাবেক কাউন্সিলার শাহাব উদ্দিন আহমেদ বেলাল জানান, ইমিগ্রেশন আইনের কড়াকড়ি, সাংস্কৃতিক পার্থক্য এবং পরিবার পরিজন নিয়ে বাংলাদেশে যাওয়ার ঝামেলার কথা বিবেচনা করে তিনি লন্ডনেই ছেলের জন্য পাত্রি দেখেছেন। ২৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার তাঁর ছেলের বিয়ে। বাসার কাছাকাছি বিয়ের আয়োজন করবেন বলে প্রায় ৬ মাস আগেই হল বুকিং দিয়ে রেখেছেন।
তারিফ আহমদের ছোট বোনের বিয়ে হয়েছে গত মঙ্গলবার। তিনি জানান, বোনের পছন্দমত তারা যুক্তরাজ্যেই বিয়ের ব্যবস্থা করেছেন। সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক পার্থক্যের কারণে যুক্তরাজ্যে বেড়ে ওঠা ছেলে-মেয়েরা বাংলাদেশে বেড়ে ওঠা কাউকে বিয়ে করলে দাম্পত্য জীবনে মানিয়ে নেয়ার ঝুঁকি থাকে বলে তিনি মনে করেন।
পূর্ব লন্ডনের ইম্প্রেশন ইভেন্ট ভেন্যুর সত্ত্বাধিকারী হাবিবুর রহমান জানান, চলতি মাসের শুরু থেকেই সপ্তাহে সাত দিনই তাদের হল বুকিং রয়েছে। শুক্রবার ছাড়া অন্যদিনগুলোতে বেশির ভাগই দিনে দুটি করে বিয়ের বুকিং রয়েছে। স্কুল ছুটি এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে আগামী ৬ মাসের বেশি সময় পর্যন্ত নতুন বুকিং নেয়া সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।
যুক্তরাজ্যে বিয়ে আয়োজনের খরচও অস্বাভাবিক। মোটামুটি মানের একটি বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য হল ভাড়া, আপ্যায়ন, গহনা এবং সাজ সরঞ্জাম মিলিয়ে খরচ হয় প্রায় ৩০ হাজার পাউন্ড (৩৯ লাখ টাকা)। কিন্তু যারা যুক্তরাজ্যে বিয়ের আয়োজন করছেন তারা বলছেন, এ খরচ বাংলাদেশে গিয়ে বিয়ে আয়োজনের খরচ থেকে কম। বাঙালি বিয়ের এমন অস্বাভাবিক খরচ ব্রিটিশ মিডিয়ারও শিরোনাম হয়েছে। পূর্ব লন্ডন থেকে প্রকাশিত ইস্ট লন্ডন এডভারটাইজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে মসজিদের ঈমামদের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে, যাতে তারা বিপুল অর্থ খরচ করে বিয়ে আয়োজনের সংস্কৃতিকে নিরুত্সাহিত করে।