সাক্ষাতকারে ধর্ম ও বিশ্বাস নিয়ে ওবামা

Obama[আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বড় বড় রাজনৈতিক নেতার মধ্যে এ যাবৎ ধর্ম ও বিশ্বাস নিয়ে যে ঐতিহ্য পরিলক্ষিত হয়েছে ওবামা সেখানে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছেন। তিনি এদের গতানুগতিক চিন্তা-চেতনার বাইরের মানুষ। বিশ্বাস-সন্দেহ, আশা-ভীতি, উচ্চাকাক্সা-বিনয় এসব চিন্তা-চেতনার ক্ষেত্রে ওবামার অবস্থান একেবারেই আলাদা। নিত্যদিন বিশ্বাস কিভাবে জীবনে প্রভাব রাখে সে বিষয়ে ওবামার সাথে কথা বলেন নিউজউইকের লিসা মিলার ও রিচার্ড ওলফ।] নিউজউইক : একজন সৃষ্টিকর্তার ওপর বিশ্বাস স্থাপনের ব্যাপারে মিশেল এবং আপনি কি কন্যাদের সাথে কথা বলেন?
ওবামা : আমরা অবশ্যই কথা বলি। তবে ধারাবাহিক ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে তা আমরা করি না। এক সাথে হলে খেতে-বসলে বিষয়টি নিয়ে তাদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করি। তাদের অনুসন্ধিৎসু মন। বিশ্বাস ও সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে তাদের কোনো জিজ্ঞাসা থাকলে আগ্রহ নিয়ে কথা বলি। আমি খুব ভালো বিশ্বাসী। তাদের ওপর চাপানো হয় না। তাদের জিজ্ঞাসা আর আগ্রহের দিকে খেয়াল রেখে বোঝানোর চেষ্টা করি।
নিউজউইক : আপনি বলেছেন ট্রিনিটিতে খুব বেশি ধর্মোপদেশ আপনি শোনেননি। সেখানে কতবার আপনি গিয়েছেন?
ওবামা : প্রথম দিকে প্রায়ই যেতাম। আমরা তখন একা ছিলাম। মাসে দুই-তিনবার যেতাম। প্রথম সন্তান মারিয়া হওয়ার পর চার্চে যাওয়ার হার কমে গেল তা কয়েক বছর অব্যাহত থাকল। তবে মাসে দু’বার যাওয়া হতো। সিনেট নির্বাচনে দাঁড়ানোর পর প্রতি রোববার যেতে শুরু করলাম। এবার একাধিক চার্চে। নির্বাচনী প্রচার ও বেশি মানুষের কাছে যাওয়ার সুযোগ হতো এর মাধ্যমে। অনেক সময় চলে যেত। এই সময়টাতে একসাথে কয়েক মাস ট্রিনিটিতে যাওয়ার সুযোগ হয়নি।
নিউজউইক : আপনি আপনার বাইবেলটি নিয়েই সফর করেন। এখনো কি এ ধারা অব্যাহত আছে?
ওবামা : এখনো প্রায়ই বাইবেলটি সাথেই নিই। মাঝে মাঝে পারা যায় না। এতগুলো প্যাকেট হয়ে যায় ব্রিফকেসে জায়গা হয় না। অনেক সময় ভুলেও যাই। এটা এমন একটি জিনিস যার পাঠ আমাকে জাগতিক ভাবনার বাইরে নিয়ে যায়। সুখের অনুভূতি জাগায়। সন্ধ্যায় বাইবেল পাঠের অভ্যাস আমার।
নিউজউইক : সৃষ্টিকর্তার জগৎ নিয়ে আপনার ভাবনা কী? পৃথিবীতে মানুষের দ্বারা এটি অর্জন সম্ভব কি?
ওবামা : আমি একজন বড় বিশ্বাসী। শুধু কথায় নয়, কাজ ও বাস্তবতায়। সৃষ্টিকর্তার করুণা ছাড়া তার জগতে প্রবেশ সম্ভব নয় বলে আমি মনে করি। যা যিশুখ্রিষ্টের প্রত্যাবর্তন ছাড়া সম্ভব নয়। তবে ক্রমান্বয়ে এ পথে উন্নতি সম্ভব।
নিউজউইক : বিশ্বাসের পথে সন্দেহ-সংশয়ের ভূমিকা কী?
ওবামা : আমার বই ‘অডাসিটি অব হোপে’ বিষয়টি নিয়ে লিখেছি। যিশুখ্রিষ্টকে ত্রাণকর্তা হিসেবে গ্রহণের পরও তা হতে পারে। মা মারা গেলে বিষয়টি নিয়ে আমার সন্দেহ হয়। সবসময় মনে আমার সন্দেহ জাগে।
নিউজউইক : ব্যক্তিগত জীবনে আপনি কি প্রার্থনা করেন প্রতিদিন?
ওবামা : হ্যাঁ, আমি তা করি। প্রতিদিনই।
নিউজউইক : কী জন্য প্রার্থনা করেন?
ওবামা : পাপ ও খুঁত যা আমার জীবনে অসংখ্য তা মোচনের জন্য। আমার পরিবার রার জন্য এরপর সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাকে উচ্চকিত করার জন্য। এটি আমি খুব সাধারণভাবে করি, প্রবলভাবে নয়। সবশেষে সেসব মানুষের জন্য যারা কষ্টের মধ্যে রয়েছে যাদের একটি সাহায্যকারী হাত দরকার।
নিউজউইক : কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে কি আপনি সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন? এ ধরনের প্রার্থনা কি কাজে লেগেছিল?
ওবামা : এটা একান্ত ব্যক্তিগত প্রশ্ন। মিশেলকে বিয়ের সময় করেছিলাম। এটি আমার জীবনের একটি বড় সিদ্ধান্ত। যেভাবে প্রার্থনা করেছিলাম সেভাবে কাজ হয়েছে। সৃষ্টিকর্তার কাছে পাওয়া যায়। প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থিতার জন্যও প্রার্থনা করেছি। এটাও খুব বড় একটা সিদ্ধান্ত ছিল। এতে জয়-পরাজয়ের সরাসরি প্রভাব আমার পরিবার এমনকি দেশের ওপরও পড়ে। জয়ের মধ্য দিয়ে আমার ওপর বিশাল একটি দায়িত্ব বর্তিয়েছে। এ জন্য প্রার্থনায় আমি অনেক সময় ব্যয় করেছি।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button