হোয়াইট হাউসে আগুন দিলো ব্রিটেন !
শিরোনাম পড়ে ভড়কে যাওয়ার কিছু নেই। ঘটনাটা বুঝতে হলে ছবির দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। ছবির এই কেকটা গত রোববার টুইটারে পোস্ট করেছিলো ওয়াশিংটনের ব্রিটিশ দূতাবাস। এখানে দেখা যাচ্ছে হোয়াইট হাউসের আদলের একটি বাড়ি। পাশে দুই দেশের দুটি পতাকা। যুক্তরাষ্ট্র আর ব্রিটেন। বন্ধু প্রতীম দুই দেশ। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলে।
এই কেকটা কি তাহলে দুই দেশের বন্ধুত্বের প্রমাণ? মোটেই নয়, হোয়াইট হাউসের আশপাশে দেখা যাচ্ছে কয়েকটা তারাবাতি। আর এ বাতিগুলোই যত সমস্যা।
কারণ এই আগস্ট মাসে পূর্ণ হলো হোয়াইট হাউসে আগুন লাগার ২০০তম বার্ষিকী। অর্থাৎ ১৮১৪ সালের আগস্টে ব্রিটিশ সৈন্যরা হোয়াইট হাউস পুড়িয়ে দেয়। আর সে ঘটনাটা তারাবাতি জ্বেলে য্ক্তুরাষ্ট্রকে মনে করিয়ে দিলো ব্রিটিশরা। শুধু তাই নয়, ছবির ক্যাপশনে তারা লিখেছে ‘সময়টা কেবল জ্বলে যাওয়ার’।
অনেকটা কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা পড়ার মতো।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের গায়ে নুন পড়লেও তারা এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করেনি। তবে টুইটার ব্যবহারকারিদের মধ্যে এই কেকটি নিয়ে ব্যাপক সারা পড়ে যায়।
না কেকটি খাওয়ার জন্য নয়। ওটাতো ভার্চুয়াল কেক, বাস্তবে বানানো হয়নি। তবে খেতে না পারার কারণে অনেক আমেরিকান অবশ্য আফসোসও করেছে। আবার কেউ ভাগ্যে জোটবে না জেনে বলে দিয়েছে, আঙ্গুর ফল টক। অর্থাৎ এর স্বাদ মোটেও ভালো হবে না। সহজ এই কথাটি বলে কিন্তু তারা ঝিকে মেরে বউকেও বুঝিয়ে দিয়েছে। অর্থাৎ ব্রিটিশ দূতাবাসকে জানিয়ে দিলো, অতীতের ক্ষত নিয়ে কৌতুক করা মোটেও উচিত হয়নি।
পোস্টের নিচে অনেক টুইটার ব্যবহারকারিই মন্তব্য করেছে। কোনো কোনো আমেরিকান অপমান বোধ করে লন্ডনে জার্মানির বোমা হামলার কথাও মনে করিয়ে দিয়েছে। কেউ আমেরিকানদের অনুভূতিহীন উল্লেখ করে বলেছেন, তাদের উচিত ব্রিটিশ দূতাবাসকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা।
তবে একজন আমোদে আমেরিকান লিখেছেন, বিষয়টা দারুণ উপভোগ্য। আর সামান্য এ কৌতুক নিয়ে কারো কাছে কারো ক্ষমা চাওয়ার প্রয়োজন নেই।
মূলত পুরো বিষয়টা ছিলো অদ্ভুতরকমের এক কৌতুক। তারপরও টুইটার ব্যবহারকারিদের কয়েকজনের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ও সাত জনের সাত কথা ভেবে ব্রিটিশ দূতাবাস দুঃখ প্রকাশ করে আরেকটি টুইট বার্তা দিয়েছে। সেখানে তারা ব্যাখ্যা দিয়েছে, পোস্টটি ছিলো কেবল কৌতুক করার জন্য। একটু উষ্ণ খুঁচাখুঁচি করে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কটা আরো একটু ঝালিয়ে নেয়া আরকি।
ব্রিটিশ দূতাবাস লিখেছে, ব্রিটেন-যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে। থাকবে এবং ভবিষ্যতেও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলবে।আমরা ইতিহাসের সেই দিনটিকে স্মরণ করে বন্ধুত্বকে আরো শক্তিশালি করতে চেয়েছি।
এবার ইতিহাসের সেই দিনটি সম্পর্কে একটু জেনে নেয়া যাক
হোয়াইট হাউস প্রথম ১৭৯২ সালের ১৩ অক্টোবর স্থাপিত হয়। ১৮০০ সালে নির্মাণকাজ শেষ হয়। এরও চৌদ্দো বছর পর, ১৮১৪ সালে ব্রিটিশ সৈন্যরা আমেরিকা আক্রমণ করে ওয়াশিংটন শহরটি দখল করে এবং ৪ আগস্ট তারা হোয়াইট হাউসে আগুন লাগিয়ে দেয়ায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভবনটি।
পরে বাড়িটি নতুন করে তৈরি করার কাজে হাত লাগানো হয়। এতে আরো তিন বছর সময় লেগে যায়। নতুন ভবনে আগের নকশা ও রঙের পরিবর্তন আসে। সম্ভবত তখনি ভবনের রঙ পাকাপাকিভাবে ধবধবে সাদা করা হয়। এ কারণেই এর নাম হয়ে যায় হোয়াইট হাউস।
এর আগে ভবনটির আরো অনেক নাম ছিলো, প্রেসিডেন্টস প্যালেস, প্রেসিডেন্টস হাউস, এক্সিকিউটিভ ম্যানসন ইত্যাদি। কিন্তু সবচেয়ে প্রচলিত ও আদরের নামটি ছিলো হোয়াইট হাউস।