প্লিজ! জন্ম, মৃত্যু ও কবর নিয়ে বাড়াবাড়ি করবেন না !
গোলাম মাওলা রনি
আরো অনেকের মতো আমিও ওসব ব্যাপারে ছিলাম বেশ উদাসিন। অর্থাৎ পক্ষেও ছিলাম না আর বিপক্ষেও ছিলাম না। কারো প্রিয়জনের জন্মদিবস কিংবা মৃত্যুদিবস ঘটা করে পালিত হলে আমি ওসবের মধ্যে মন্দ কিছু দেখতাম না। কিংবা পরিবারের কেউ মারা গেলে মৃত ব্যক্তির কবরের ওপর বিশাল এক সৌধ নির্মাণ করে তাতে শ্বেতপাথরের জীবনবৃত্তান্ত স্থাপন করার মধ্যেও দোষত্রুটি খুঁজতে যেতাম না; কিন্তু একটি হিন্দি সিনেমা দেখার পর আমার চিন্তাজগতের অনেক কিছুই ওলটপালট হয়ে গেল। এরপর আমি এসব বিষয় নিয়ে যথাসম্ভব পড়াশোনা করলাম। অভিজ্ঞ লোকদের সাথে পরামর্শ করলাম এবং সবশেষে অনুসিদ্ধান্তে পৌঁছালাম যে, জন্মদিবস, মৃত্যুদিবস এবং কবর নিয়ে বাড়াবাড়ি করা ঠিক নয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়ার আগে হিন্দি সিনেমার কাহিনীটুকু বলে নেই।
ছবির নাম অগ্নিসাক্ষী। নানা পাটেকার ও মনীষা কৈরালা স্বামী স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করছিলেন। নানা পাটেকার সেই চরিত্রে অদ্ভুত এক মানুষের ভূমিকা এত সাবলীলভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন, যার তুলনা অন্য কারো সাথে করা সম্ভব নয়। এক রাতে তিনি স্ত্রীরূপী মনীষার সাথে শুয়ে ছিলেন আনন আলয়ে; কিন্তু কিছুতেই ঘুমাতে পারছিলেন না। পাশের বাড়ির ছাদে একটি জন্মদিনের অনুষ্ঠান হচ্ছিল। হইহুল্লোড়, নাচগান, খানাপিনার শব্দে নানা পাটেকার ধৈর্য হারিয়ে ফেললেন। তিনি পিস্তল হাতে ঘটনাস্থলে হাজির হলেন। আয়োজকদের জিজ্ঞেস করলেন এসব কী হচ্ছে? তারা উত্তর করল আমাদের মালিকের জন্মদিন পালিত হচ্ছে। কে আয়োজন করেছে? তারা জানাল মালিকের স্ত্রী। ইতোমধ্যে ভদ্রমহিলা নানা পাটেকারের সামনে এগিয়ে এলেন এবং তাকেও জন্মদিনের অনুষ্ঠানে শরিক হতে বললেন। রাত তখন গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছিল এবং দীর্ঘক্ষণ ঘুমানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার কারণে তার মেজাজ এমনিতেই বিগড়ে ছিল। তার ওপর অনুষ্ঠানস্থলে নর-নারীদের বেলেল্লাপনা এবং ঢোল, ডগর, ড্রামের উচ্চ শব্দে নানা পাটেকারের মেজাজ আরো বিগড়ে গেল। সে ভদ্র মহিলাকে প্রশ্ন করল আচ্ছা, তোমার জামাই এই দুনিয়ায় পয়দা হওয়ার কারণে জমিনের এমন কী হয়ে গেল কিংবা আমাদের এমন কী পুরস্কার জুটল যার কারণে এই এলাকার সবাইকে রাত জেগে নিজ নিজ ঘরের বিছানায় শুয়ে তোমাদের ঢোলের শব্দ, চিৎকার চেঁচামেচি ও মদ্যপ শরীরের উদ্দাম নৃত্যের বিরক্তিকর আওয়াজ শুনতে হবে। ভদ্র মহিলা নিরুত্তর। নানা পাটেকার অত্যন্ত ধীরস্থিরভাবে পিস্তলের গুলিতে ঢোলমোল সব ফাটিয়ে দিলেন এবং অভ্যাগতদের তাড়িয়ে দেয়ার আগে বললেন যাও! নিজ ঘরে গিয়ে ঘুমাও এবং আমাদের ঘুমাতে দাও।
সিনেমাটি দেখার পর আমি আর কোনো দিন আমার প্রিয়জনের জন্মদিন আয়োজন করিনি। অন্য দিকে কেউ দাওয়াত দিলেও যাইনি। আমাদের ঢাকার বাড়ির আশপাশের প্রতিবেশীরা প্রায়ই ঘটা করে তাদের ছেলেমেয়ে কিংবা স্বামী-স্ত্রীর জন্মদিন পালন করেন। তারা বাইরে থেকে ব্যান্ড পার্টি ভাড়া করে আনেন এবং গভীর রাত পর্যন্ত হিন্দি গান বাজিয়ে নাচানাচি করতে থাকেন। এসব শুনতে আমার একদম ভালো লাগে না। মাঝে মধ্যে মনে হয় নানা পাটেকারের মতো আমিও অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হয়ে কিছু সংলাপ ছেড়ে আসি এবং ওদের ঢোলগুলো ফুটো করে দেই; কিন্তু তা তো আর সম্ভব হয় না। তাই নিজে নিজে কষ্ট পাই এবং ওদের ঢোলের শব্দে গভীর রজনীতে নির্ঘুম সময় কাটাতে কাটাতে বেদনার তীরে নিজের হৃদয়কে ফুটো করতে থাকি। হঠাৎ করে একদিন আমার মনে হতে লাগল আমি কোনো অসামাজিক ব্যক্তি নয়তো! এ ধরনের অনুষ্ঠান নিয়ে কেউ তো কিছু বলছে না তবে আমি কেন একা একা কষ্ট পাচ্ছি? আমার কি কোনো মানসিক সমস্যা আছে? আমার কি মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত? এসব কথা আলোচনার জন্য আমি আমার দু’জন পি ত বন্ধুর শরণাপন্ন হলাম। আমার মতে তারা যথেষ্ট জ্ঞানী। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিক জীবনে সফল। তারা যথেষ্ট ঠাণ্ডা মেজাজের অধিকারী এবং সুপরামর্শদাতা।
বন্ধুদের আমি আমার মনের কষ্টের কথাগুলো বললাম ও তাদের জিজ্ঞেস করলাম, আমার কি মনোরোগবিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া উচিত? আমি আরো বললাম, অন্য মানুষের আনন্দ ফুর্তি দেখে আমার কষ্ট পাওয়ার মধ্যে কোনো ঈর্ষা বা পরশ্রীকাতরতা কাজ করে কি না! আমার কথা শুনে বন্ধুরা অনেকক্ষণ হাসল। আমি ভারি আশ্চর্য হয়ে তাদের হাসির কারণ জিজ্ঞেস করলাম। তারা সাথে সাথে উত্তর না দিয়ে আরো কিছুক্ষণ হাসল। তারপর বলল তুমি যা চিন্তা করো, এর জন্য যদি মনোরোগবিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হয় তবে আমরা যা করি তার জন্য আমাদের নির্ঘাত পাগলা গারদে ঢোকানো উচিত। এ কথা বলে তারা আরেক দফা হাসল এবং নিজেদের কথা বলা শুরু করল। প্রথমেই বলল, কায়েস (ছদ্মনাম)। কায়েসের পাশের বাড়ির ছাদে প্রায়ই ওই বাড়ির লোকজন গভীর রাত পর্যন্ত হইহল্লা করেন। ওরা সারা রাত এমন করেন এবং সারা দিন ঘুমান। কায়েসের খুব ইচ্ছে হয় ওদের ধমক দিতে; কিন্তু সাহসে কুলায় না। একবার ভাবে থানায় গিয়ে অভিযোগ করে আসি; কিন্তু তাতেও ভয়। এ দিকে সারা রাত না ঘুমাতে না ঘুমাতে তার অবস্থা কাহিল থেকে কাহিলতর হয়ে গেল। সে চিন্তা করল, রাতে যখন লোকগুলো হল্লা শুরু করবে তখন সে বদমাশদের তীর মারবে। বাজারে গিয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তীর পেল না। পেল গুলতি। সে ভালো একটি গুলতি ও ১০০ মার্বেল কিনে আনল এবং গোপনে বেলকনিতে লুকিয়ে রাখল। এখন তার মনে আনন্দ আর ধরে না। গভীর রাতে সে হল্লারত দুষ্টু বেয়াদব নারী-পুরুষদের পাছায় গুলতি মারবে আর ওরা ব্যথায় পো পো করে পালিয়ে যাবে ভাবতেই তার মনটা খুশিতে ভরে উঠল। মনের আনন্দে সারা দিন কোনো কাজই করতে পারল না। অফিসে বসে হঠাৎ হঠাৎ হেসে ওঠে। কর্মচারীরা সবাই ভয় পেয়ে গেল। কায়েস অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকল কখন রাত আসবে এবং কখন সে গুলতি মারবে? সন্ধ্যার পর খোশমেজাজে বাসায় ফিরে কায়েস দেখে স্ত্রী রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে আছে আর ১০ বছরের ছেলেটি অঝোরে কাঁদছে। স্ত্রীর কাছ থেকে কায়েস শুনল যে তার শিশুপুত্র ঘর থেকে টাকা চুরি করে বাজারে গিয়ে গুলতি ও মার্বেল কিনে এনেছে। আজ বিকেলে পাশের বাড়ির মোটা মোটা কয়েক মহিলা যখন ছাদে হাঁটাহাঁটি করছিল, তখন সে মহিলাদের লক্ষ্য করে গুলতি ছোড়ে। পাশের বাসার মহিলারা এই কিছুক্ষণ আগে দলবেঁধে এসে যাচ্ছেতাই অপমান করে গেল।
কায়েসের কথা শোনার পর আমি আর অন্য বন্ধুরটি শোনার প্রয়োজন মনে করলাম না। তার চেয়ে বরং তিন বন্ধু মিলে মানুষের মৃত্যুদিবস উদযাপন ও কবর নিয়ে গুরুগম্ভীর আলোচনা শুরু করলাম। আমার অপর বন্ধুর নাম বিলাস (ছদ্মনাম)। মস্তবড় ঐতিহাসিক এবং স্বনামধন্য লেখক। বিলাস বলল এটা আমার কিছুতেই মাথায় ঢোকে না কেন একজন মানুষ মারা যাওয়ার সাথে সাথে লোকটির সন্তান বা সন্ততিরা মৃত ব্যক্তির স্মরণে মহা ধুমধামে ভোজসভার আয়োজন করে। কার মৃত্যুদিবসে কে কতটি গরু বা ছাগল জবাই করেছে এবং কোন বাড়ির রান্না ভালো হয়েছে এসব নিয়ে অভ্যাগত মেহমানেরা যখন আলোচনা করেন, তখন বিলাসের নাকি খুব খারাপ লাগে। অন্য দিকে, মৃত মানুষের স্মরণ মাহফিল খেতে বসে যদি কেউ বলে, গোশত রান্না দারুণ হয়েছে। লবণ ঠিকমতো দেয়া হয়নি। অথবা ওমুক ওমুককে কেন দাওয়াত দেয়া হয়নিÑ এসব তর্কবিতর্ক কথাবার্তা শুনলে বিলাসের নাকি মরে যেতে ইচ্ছে করে। বিলাস যা বলল তা আমাদের সমাজের প্রতিদিনকার একটি সাধারণ চিত্র। আমি বললাম, দোস্ত, তোমার মতো জ্ঞানীগুণী লোকের কাছে এত সাধারণ মানের মন্তব্য মানুষজন আশা করে না। তুমি আমাদের বড় বড় পণ্ডিতের লেখা বই থেকে মৃত ব্যক্তির মরণ উৎসব সম্পর্কে চমকপ্রদ কিছু কথা বলো।
আমার কথা শুনে বিলাস বেশ নড়েচড়ে বসল এবং গম্ভীর হওয়ার ভাব ধরে বলল, কিছু চীনা বাদাম দাও তো। আমি বললাম, চীনা হবে না! কাজুবাদাম আছে। ও বলল, তাই দাও। কাজুতেই চলবে। আমি জানি বিলাস হঠাৎ ক্ষীণ অদ্ভুত অদ্ভুত সব কাণ্ড তার জ্ঞানগরিমার প্রতি আমাদের নির্ভরতা প্রায় শতভাগ। বদমাশটা যাতে কাজুবাদাম এবং মৃত ব্যক্তি নিয়ে অদ্ভুত কোনো ঠাট্টা-মশকরা না করতে পারে, সেজন্য তার হঠাৎ করেই বাদাম খাওয়ার আগ্রহের ব্যাপার জিজ্ঞেস না করে আমরা চুপচাপ তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। বিলাস বললÑ তোমরা কি ভেবে দেখেছ যে, সর্বকালের ইতিহাসে তোমরাই হলে দুনিয়ার সবচেয়ে নিষ্ঠুর মাংশাসী প্রাণী। মানুষ যত পশুপাখি হত্যা করেছে তা পৃথিবীর কোনো হিংস্র প্রাণী কল্পনাও করতে পারে না। মানুষ তার প্রয়োজনে না পারে এমন কোনো কর্ম নেই। একই পরিবারের সবাইকে অর্থাৎ মা-মেয়ে, বাবা-ছেলে, ভাই-বোন সবাইকে এক সাথে হত্যা করে তাদের গোশতের চাহিদা মেটানোর জন্য। পৃথিবীর কোনো প্রাণী তাদের স্বজাতির মাংস খায় না। বাঘ সিংহ তো দূরের কথা, এমনকি হায়না-কুকুর, বিড়ালও নিজেদের গোত্রের কাউকে মেরে তাদের রক্ত-মাংস খেয়েছে এমন নজির বিরল; কিন্তু মানুষ খেয়ে আসছে। পৃথিবীতে এখনো অনেক উপজাতি আছে, যারা মানুষের মাংস খায়। আর মৃত মানুষের মাংস খাওয়া তো নস্যি। হিরো ডোটাস লিখেছেন প্রাচীন বিশ্বের অনেক জায়গায় কারো বাবা-মা মারা গেলে মৃত ব্যক্তির ছেলেমেয়েরা মহা ধুমধামে তাদের বাবা-মায়ের মাংস রান্না করে খেয়ে ফেলত। ফলে মানুষের রুচিবোধ নিয়ে যেমন অনেক ভালো ভালো উদাহরণ রয়েছে, তেমনি নীচুতা নিয়েও নিকৃষ্টসব উদাহরণ কিলবিল করছে।
বিলাস আরো বললÑ মানুষকে সৃষ্টিই করা হয়েছে ভুলো মন দিয়ে। ফলে মানুষ ভুলে যায়। আর আল্লাহ এটা করেছেন জমিনের কল্যাণের জন্যই। মানুষ যদি সারা জীবন তার প্রিয়জনের মৃত্যুর স্মৃতিকে হৃদয়ে ধারণ করত, তবে সারা পৃথিবী থমকে যেত। মানুষ সহজাতভাবে যেমন প্রিয়জনের মৃত্যুর কথা ভুলে যায়, তেমনি কেউ চেষ্টা করেও কোনো মৃত ব্যক্তির নাম কোনোকালের মানুষজনকে মনে করাতে পারবে না। আমরা বলি মহৎ মানুষের মৃত্যু কেউ ভোলে না। এটা মিথ্যা কথা। কেবল কয়েকটি ধর্মের প্রতিষ্ঠাতার জন্মমৃত্যুর দিনটি ওই ধর্মের অনুসারী কিছু মানুষ অনাদিকাল থেকে স্মরণ করে আসছে। এর বাইরে মানুষ কেবল স্মরণ করে মৃত মানুষের কিছু কর্মকে; কিন্তু তার মৃত্যুদিবস নিয়ে অতশত ভাবে না। এই বঙ্গে গত এক হাজার বছরে শায়েস্তা খান, আলাউদ্দিন হুসেন শাহ কিংবা গিয়াস উদ্দিন আজম শাহের মতো মহান, জনপ্রিয়, প্রজাহিতৈষী এবং ধার্মিক ভালো মানুষ বাদশাহ আর কে ছিল? কিন্তু তাদের মৃত্যুদিবস কেন এই ব-দ্বীপে পালিত হয় না। কিংবা তারও আগে ছিলেন রাজা হর্ষবর্ধন, শশাংক ও গোপাল। রাজা গোপালই পৃথিবীর প্রথম এবং একমাত্র রাজা যিনি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং তার বংশ প্রায় ৪০০ বছর এই ভূ-খণ্ড শাসন করেছে। কই, গোপালের মৃত্যুদিবস কোথায় গেল। অতি সাম্প্রতিক ইতিহাসে, অর্থাৎ গত ৪০০ বছরের মধ্যে পুরো এশিয়ায় সম্রাট আকবরের মতো জনপ্রিয়, ক্ষমতাবান ও প্রজ্ঞাবান সম্রাট একজনও জন্ম নেননি। তার জন্মদিন কি তার সন্তানেরা বা বংশধরেরা পরবর্তী প্রায় ৩০০ বছরে একবারের জন্যও পালন করেছে? বিলাস এবার ভারতবর্ষ ছেড়ে তার পাণ্ডিত্য পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তেও নিয়ে গেল। সে বলল রোমান সম্রাট জাস্টিনিয়াম, কনসটাটাইন, জুলিয়াস সিজার এদের জন্মদিন কে কবে কোন কালে পালন করেছে? আর এদের মৃত্যুদিন! কেউ খোঁজ রাখেনি এবং রাখছেও না। মুসলমানদের মধ্যে খলিফা হারুন, খলিফা মামুন, সম্রাট ওরহান, সম্রাট সুলায়মান, সুলতান আবদুর রহমান, হজরত উমরসহ বাকি তিন খলিফার মৃত্যুদিবস কে কখন পালন করেছে? কাজেই তোমার আমার বাবা-মায়ের মৃত্যু নিয়ে যে বাড়াবাড়ি আমরা করছি, তা প্রকারান্তে এসব কর্মকাণ্ডের মূল্য আল্লাহর কাছে একটি মশার ডানার সমান মূল্যও বহন করে না।
কথা বলতে বলতে বিলাস হঠাৎ থেমে গেল এবং আমাদের দিকে তাকিয়ে একমুঠো কাজুবাদাম মুখে পুরল। তারপর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললÑ ইতিহাস সব সময়ই তার আপন গতিতে চলে। পৃথিবীর কারোই সাধ্য নেই কোনো কর্মবীরকে ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে। অথবা কোনো সাধারণ মানুষকে অসাধারণ বানিয়ে ইতিহাসে জায়গা করে দেয়। ইতিহাস তার আপন গতিতে প্রতি ১০০ বছর পরপর একটি পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করে। ওই পাণ্ডুলিপিতে যার নাম লিখিত থাকেÑ তিনিই হন নায়ক বা মহানায়ক। আমাদের বাংলা ছবির নায়িকা ময়ূরী বা অপু বিশ্বাস খাইছি তোরে, খামছি দিমু ইত্যাদি নামের ছবি বানিয়ে কাউকে নায়ক বানানোর চেষ্টা করতে পারে। তবে সেই নায়ক হবে বায়োস্কোপের নায়ক কিন্তু ইতিহাসের নয়।
আমি বিলাসের কথা শুনে অনেকটা স্তব্ধ হয়ে গেলাম। বললাম দোস্ত, এবার কবর নিয়ে কিছু বলো। সে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললÑ দুনিয়ার সবচেয়ে বড় কবর রচনা করেছিল ফেরাউনরা। আর সাদামাটা কবরে শুয়ে আছেন হুজুর সা:, সাহাবা এবং প্রিয়তমা পত্নীরা। এখন তুমি মা ফাতেমা, মা খাদিজা কিংবা হজরত উসমানের মতো কবর রচনা করবে, নাকি ফেরাউনের মতো কবর বানাবে তা একান্তই তোমার ব্যাপার। তবে মাত্র সাড়ে তিন হাত জায়গার একটি সাদামাটা কবরও যদি মানুষ আজীবন সংরক্ষণ করত, তবে এযাবৎ যত মানুষ মরেছে কেবল তাদের কবরের জন্য এই পৃথিবীর পুরো জমিনের মতো আরো হাজারটা জমিন লাগত।
–সাবেক সংসদ সদস্য