হামাসের বিজয় : নেতানিয়াহুর বিপর্যয়

Gazaমাহমুদ সাজ্জাদ:
গাজায় যুদ্ধ বিরতির মধ্য দিয়ে হামাসের জয় হয়েছে বলে দাবি করছে দলটির নেতারা। যুদ্ধবিরতির পর হামাস ও ইসলামিক জিহাদের নেতারা গাজায় জনসভায় প্রকাশ্য এই ঘোষনা দেন।
গাজায় হামাসের রাজনৈতিক শাখার সিনিয়র নেতা মাহমুদ আল জাহার ও ইসলামিক জিহাদের মোহাম্মদ আল হিন্দি উল্লসিত জনতার সামনে বক্তব্য রাখেন।
মাহমুদ জাহার বলেন গাজায় বিমান বন্দর নির্মান করা হবে। আমাদের বিমান বন্দরে কেউ হামলা করলে তাদের বিমান বন্দরে হামলা চালানো হবে। হামাসের রকেট হামলায় ইসরাইলের বেনগুরিয়ান বিমান বন্দর বন্ধ থাকার দিকে তিনি ইংগিত করেন।
এদিকে ইসরাইলের যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তায় নাটকীয়ভাবে ধস নেমেছে। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ওপর বর্বর আগ্রাসন শুরুর পর থেকে তার এ জনপ্রিয়তায় ধস নামে। শেষ পর্যন্ত তার সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
জনপ্রিয়তায় ধ্বসের মধ্যে হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে আজ থেকে যুদ্ধ বিরতি কার্যকর হয়েছে। হামাস নেতার বলেছন এই যুদ্ধ বিরিতর মধ্য দিয়ে তারা বিজয় অর্জন করেছেন।
এতোদিন গাজায় বিমানবন্দর নির্মাণ ও সমদ্রবন্দর স্থাপনের মত যেসব দাবিকে ইসরাইল অগ্রাহ্য করে আসছিল চুক্তিতে তাও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
চুক্তিতে আশু পদক্ষেপ ও দীর্ঘমেয়াদী ইস্যু শিরোনামে দুটো চ্যাপ্টারে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।
আশু পদক্ষেপ
• হামাস ও অন্যান্য সশস্ত্র যোদ্ধারা ইসরাইলের অভ্যন্তরে রকেট ও মর্টার হামলা বন্ধ করবে।
• ইসরাইল বিমান ও স্থল অভিযানসহ সব ধরণের সামরিক হামলা বন্ধ করবে।
• গাজায় মানবিক সহায়তা ও নির্মাণ সামগ্রীসহ পণ্যপ্রবাহ নিশচিত করতে ইসরাইল আরো সীমান্ত ক্রসিং খুলে দেবে।
• মিশরের সাথে পৃথক চুক্তির মাধ্যমে গাজার সাথে রাফা সীমান্ত খুল দেয়া হবে।
• ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস হামাসের কাছ থেকে গাজা সীমান্ত এলাকার প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। ইসরাইল ও মিশর আশা করছে যে গাজায় অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ প্রবেশ প্রতিহত করা হবে।
• ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অর্থ সহায়ায় গাজা পুনগর্ঠনে সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ।
• ইসরাইল বাফার জোনকে আরো সংকুচিত করবে। বর্তমানে ৩০০ মিটার থেকে কমিয়ে এটাকে ১০০ মিটারে নিয়ে আসা হবে। এতে গাজাবাসী সীমান্তে আরো বেশি জায়গায় কৃষি কাজ করার সুযোগ পাবেন।
• গাজা উপকূলে মাছ ধরার এলাকা বর্তমানের ৩ মাইল থেকে বাড়িয়ে ৬ মাইল করা হবে। যুদ্ধবিরতি বহাল থাকলে এটা ধীরে ধীরে আরো বাড়ানো হবে। চূড়ান্তভাবে ফিলিস্তিনিরা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ১২ মাইল পর্যন্ত এলাকায় মাছ ধরার অনুমতি পাবে।
দীর্ঘমেয়াদী ইস্যু নিয়ে আলোচনা
• হামাস চায় ইসরাইলে কারাগারে বন্দি শত শত ফিলিস্তিনির মুক্তি।
• প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসও চান বন্দি ফিলিস্তনিদের মুক্তি।
• ইসরাইল চায় হামাস ও অন্যান্য যোদ্ধাদের হাতে যুদ্ধে নিহত ইসরাইলি সেনাদের দেহাবশেষ ফেরত।
• হামাস যায় আমদানি রপ্তানি সুবিধাসহ গাজায় একটি সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করতে। ইসরাইলের নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার গ্যারান্টি পেলে এটা নিয়ে অগ্রগতি হতে পারে।
• হামাস চায় আটক তহবিলের অবমুক্ত করা যাতে তাদের ৪০ হাজার পুলিশ ও অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তার বেতন দেয়া যায়। গত বছর থেকে সরকারি স্টাফদের বেতন দিতে পারছে না হামাস।
• ফিলিস্তিনিরা চায় গাজায় নির্মিত ইয়াসির আরাফত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চালু করতে। ১৯৯৮ সালে এটি চালু হলেও ২০০০ সালে ইসরাইলি বোমা নিক্ষেপের পর থেকে এটি বনধ আছে। এটি আবার পুননির্র্মাণ করতে হবে।
এদিকে সোমবার ইসরাইলের চ্যানেল-২-এ প্রকাশিত এক জনমত জরিপে দেখা যায়, গাজা আগ্রাসন শুরুর আগে যেখানে নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তা ছিল ৮২ ভাগ সেখানে তা কমে এখন দাঁড়িয়েছে শতকরা ৩৮ ভাগে।
জরিপ তথ্য অনুযায়ী, নেতানিয়াহু সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বেশিরভাগ ব্যক্তি তার যুদ্ধ-ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কথা তুলে ধরেছেন।
এর আগে আরো চারটি জরিপে নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তা কমা যাওয়ার চিত্র ফুটে উঠেছে।
গত ৮ জুলাই থেকে ইসরাইল গাজার ওপর আগ্রাসন শুরু করে এবং এ পর্যন্ত ইসরাইলি সেনাদের বিমান, ট্যাংক ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ২১৩৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং প্রায় ১১,০০০ জন আহত হয়েছে।
জরিপে বলা হয়, জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি কমেছে গত চার দিনে। গাজার আশপাশের বসতি থেকে অধিবাসীদের সরিয়ে নেয়া শুরুর পরই এ ধস নামলো।
তিন সপ্তাহ আগেও নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তা ছিল ৬৩ শতাংশ।
গাজা বসতি নিয়ে সরকারের নীতির বিরোধীতা করেছে ৬৮ শতাংশ অধিবাসী। মাত্র ২৪ শতাংশ নাগরিক সরকারকে সমর্থন করেছে।
ইসরাইলে স্কুলের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু নিয়েও দেখা গেছে ভিন্নমত। ৬৩ শতাংশ মানুষ মনে করে গাজা অভিযান যতদিন চলবে, ততদিন দক্ষিণ অঞ্চলে ক্লাস বন্ধ রাখা উচিত। ১৮ শতাংশ নাগরিক বলেছে, ক্লাস যথাসময়ে শুরু হতে পারে। মজার ব্যাপার হলো এই হিসেবের উল্টো দিকে মাত্র ১৫ শতাংশ মানুষ যুদ্ধ শুরুর পর ক্লাস বন্ধ রাখাটাকে সমর্থন করেছে।
গাজায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন দমনে ব্যর্থতার জন্য নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ সমালোচনা তীব্র হওয়ার প্রেক্ষিতে তার জনপ্রিয়তায় এই বড় ধরণের ধস নামলো। ইসরাইলের বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে গাজায় যুদ্ধে ইসরাইল নয় হামাস তার লক্ষ পুরন করেত পেরেছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button