বাফেটের দৈনিক গড়ে তিন কোটি ৭০ লাখ ডলার আয়
বিশ্বে অঢেল অর্থের মালিকের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তবে বিপুল বিত্তবৈভব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কারও কারও সাফল্য রীতিমতো ঈর্ষণীয়। তেমনই একজন হলেন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ারেন বাফেট; যাঁকে ‘বিনিয়োগ গুরু’ বলে ডাকা হয়। ২০১৩ সালেই শুধু তাঁর মোট সম্পদের মূল্য এক হাজার ২৭০ কোটি মার্কিন ডলার বেড়ে ছয় হাজার ৩৩০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। বদৌলতে তিনি এখন বিশ্বের চতুর্থ সেরা ধনী।
বাফেট গত বছর দৈনিক গড়ে তিন কোটি ৭০ লাখ ডলার আয় করেন; যা হলিউডের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেত্রী জেনিফার লরেন্সের গোটা বছরের আয়ের সমান। বিশ্বখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে জেনিফার মোট আয় করেন তিন কোটি ৪০ লাখ ডলার।
বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, বাফেটের এই বিশাল সম্পদের মধ্যে ৯৯ শতাংশ বা ছয় হাজার ২৭০ কোটি ডলারই তিনি আয় করেছেন তাঁর ৫০তম জন্মদিনের পরবর্তী সময়ে। আর ৬০তম জন্মদিনের পরে এই হার দাঁড়ায় ৯৫ শতাংশ; অর্থের হিসাবে যা ছয় হাজার কোটি ডলার।
ফোর্বস ম্যাগাজিনের তৈরি করা বিশ্বসেরা ধনীদের তালিকায় বাফেট ছয় হাজার ৩৩০ কোটি ডলার মূল্যের নিট সম্পদ নিয়ে চলতি বছরে চতুর্থ হয়েছেন; যা আাফ্রিকার ঘানা ও এশিয়ার কম্বোডিয়ার সম্মিলিত জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) চেয়েও বেশি। ২০১৩ সালে ঘানা ও কম্বোডিয়ার জিডিপির আকার ছিল যথাক্রমে চার হাজার ৭৯২ কোটি ৮৭ লাখ ১৭ হাজার ৯৪৯ ডলার ও এক হাজার ৫২৪ কোটি ৯৬ লাখ ৮৪ হাজার ৩৯৭ ডলার।
বাফেটের মাত্র এক ঘণ্টার আয় যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিশ্ববিদ্যালয় নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ছয়জন ছাত্রের চার বছরের বেতনের সমান। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে একজন ছাত্রের চার বছরে খরচ পড়ে দুই লাখ ৪৭ হাজার ৯০৮ ডলার। অথচ বাফেট ২০১৩ সালে প্রতি ঘণ্টায় আয় করেছেন ১৫ লাখ ডলার; যা বাংলাদেশের প্রায় এক হাজার ২০০ কোটি টাকার সমান।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে (১৯৩৯-৪৫ সাল) ১৯৪১ সালে বাফেট প্রথম শেয়ার ব্যবসায় নামেন। মাত্র ৩৮ ডলার দিয়ে নিজের জন্য তিনটি ও বোনের জন্য তিনটি শেয়ার কেনেন তিনি। এরপর ওই শেয়ারের ৩০ শতাংশ কমে যায়। এতে কিন্তু তাঁর আত্মবিশ্বাস কমেনি। ওই শেয়ারের দাম আবার ঘুরে দাঁড়াল। যখনই শেয়ারের দাম ৪০ ডলারে উঠল, অমনি তিনি তা বিক্রি করে দিলেন। কয়েক মাস পরে অবশ্য ওই শেয়ারের দাম ২০০ ডলার পর্যন্ত ওঠে।
বাফেট এ পর্যন্ত দুই হাজার কোটি ডলার দান করেছেন।
বাফেট এখন নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে দ্বিগুণ করতে প্রস্তুত। এই খাতে তিনি ইতিমধ্যে দেড় হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছেন এবং আরও দেড় হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের জন্য তৈরি হচ্ছেন। এই তিন হাজার কোটি ডলার দিয়ে দুবাইয়ের বুর্জ আল আরবের মতো ৪৬টি বিলাসবহুল হোটেল নির্মাণ করা সম্ভব।
শেয়ারসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ের মাধ্যমেই শুধু আয় করেন না বাফেট। বছরে মধ্যহ্নভোজনের নিলাম ডেকেও প্রচুর অর্থ আয় করতে পারেন তিনি। যেমন—চলতি বছরের নিলামে অংশ নিয়ে সিঙ্গাপুরের এক ব্যবসায়ী ২২ লাখ ডলারের বিনিময়ে বাফেটের সঙ্গে এক বেলা মধ্যাহ্নভোজ ও কথা বলার সুযোগ পান।