আলোর নগরী হিসেবে মদিনার পুনর্নির্মাণ
মদিনা মুনাওয়ারা মুসলিম উম্মাহর আধ্যাত্মিক প্রাণকেন্দ্র। শাব্দিক অর্থ আলোকিত নগরী। ঐতিহাসিকভাবে এটি ছিল ধর্মীয় ও বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞান বিতরণের নগরী। এখনো প্রতি ওয়াক্ত নামাজের পরে মসজিদে নববির পিলারগুলো ঘিরে বসে যায় দরসের আসর। আধ্যাত্মিক জ্ঞানেরই আসর এগুলো।
পবিত্র এই নগরীকে আন্তর্জাতিক জ্ঞানচর্চার উপযোগী অর্থনৈতিক কারবারের নগরী হিসেবে গড়ে তোলার সম্ভাবনার কথা উঠে এসেছে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বকর্মসূচি বিষয়ক রিপোর্টে পবিত্র নগরী মদিনা বিশেষ স্থান লাভ করেছে। ‘দি কম্পিটিটিভনেস অব সিটিজ’ শীর্ষক রিপোর্টটি এ মাসে প্রকাশিত হয়। এতে কয়েকটি মৌলিক প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়। যেমন- মদিনার মতো একটি পবিত্র ও অসাধারণ ধর্মীয় নগরী কি একবিংশ শতাব্দীতে নিজেকে আবার জ্ঞান অর্থনীতির নগরী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে? একটি নগর আবাসন প্রকল্প কি মদিনার জন্য এই পরিকল্পনার চালিকাশক্তি হতে পারে?
রিপোর্টে বলা হয়, পবিত্র মদিনা নগরীতে প্রতি বছর হজ ছাড়াও ওমরা পালনের জন্যও লাখ লাখ মানুষ আসেন। এখানকার আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান, গণিত ও অন্যান্য বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আধুনিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে সম্মেলন আয়োজন করা যেতে পারে। এই প্রকল্প থেকে একটি বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও করপোরেট কমিউনিটি গড়ে ওঠে কি না, তা ভবিষ্যতে দেখার বিষয়। কিন্তু নগরীর পুনঃপ্রতিষ্ঠা ভবনাদি নির্মাণ পর্যন্ত অপেক্ষমাণ থাকতে পারে না। গতানুগতিক অর্থে সাংস্কৃতিকভাবে সংবেদনশীল উপায়ে ধর্মীয় পর্যটনকে সমৃদ্ধ করতে পারে সম্মেলন পর্যটন। ফলে বিনিয়োগকারী, অবসরপ্রাপ্ত এমনকি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য তা আবেদন সৃষ্টি করতে পারে।
ভবনাদি নির্মাণের আগেই মদিনা সহজেই অনানুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে পারে বিভিন্ন সম্মেলনের। যেমন মাসের শুরু সপ্তাহেই আসতে পারেন চিকিৎসাবিদেরা, দ্বিতীয় সপ্তাহে জ্যোতিষ বিজ্ঞানীরা এবং তৃতীয় সপ্তাহে আসতে পারেন ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞেরা। ধর্মীয় কার্যাবলির সাথে যুক্ত হতে পারে বুদ্ধিবৃত্তিক প্রণোদনা। মোটকথা ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় উভয় ঐতিহ্য রক্ষা করেই জ্ঞানচর্চা ও বিস্তারে অবদান রেখে ‘আলোর নগরী’ হিসেবে মদিনা আবার দখল করতে পারে বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্বের আসন।
২০০৬ সালে সৌদি আরব নতুন জ্ঞান অর্থনৈতিক নগরী নির্মাণের ইচ্ছা ঘোষণা করে। অবশ্য এক সময় এই প্রকল্পের পেছনে ভূমি উন্নয়নকারী, নগরনেতা ও সৌদি পরিকল্পনাকারীদের সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলে মনে করা হতো। তাছাড়া নগরীর কেন্দ্রস্থলের নির্দিষ্ট এলাকায় নারী ও অমুসলিমদের ভ্রমণে বিধিনিষেধ এ ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু খাদেমুল হারামাইন বাদশাহ আবদুল্লাহর দৃষ্টিতে নগরের প্রতিযোগিতার বিষয়টি যদি মদিনার জন্য প্রযোজ্য হয়, তাহলে বিশ্বে প্রকৃতপক্ষে এমন কোনো শহর নেই যা একবিংশ শতাব্দীর নতুনভাবে আন্ত:সংযুক্ত বিশ্বে কারবারের নতুন চিন্তা দ্বারা লাভবান হতে পারে।
সূত্র : অ্যারাব নিউজ, অনুবাদ আলমগীর কবির।