রাসুল (সা:) রওজা সরানোর খবর : প্রচারনা ও বাস্তবতা
রাসুল সা: রওজা সরিয়ে নেয়া সংক্রান্ত একটি খবরকে কেন্দ্র করে মুসলিম বিশ্বে এখন তোলপাড় চলছে। লন্ডনের ইন্ডিপেনডেন্ট, ডেইলি মেইল সহ কয়েকটি পত্রিকায় ফলাও করে এখবর প্রকাশ করা হয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর রওজা ভেঙে সরিয়ে নেয়ার একটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে সৌদি আরবে। বলা হয়েছে রাসুলের রওজা জান্নাতুল বাকিতে সরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সৌদি আরবের এক শিক্ষাবিদের সঙ্গে আলোচনার পর এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব এরই মধ্যে মদিনার ‘মসজিদে নববী’ পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
মুল খরর এতটুকু। খবরের বাকি অংশ হচ্ছে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে মুসলিম বিশ্বে এর কী প্রতিক্রিয়া হবে তা নিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য ও বিশ্লেষন।
লন্ডনের প্রভাবশালী এই পত্রিকা গুলোর এই রিপোর্টে সৌদি সরকার বা দু্ই মসজিদ তত্বাবধানের সাথে জড়িত কোন ব্যক্তির মন্তব্য প্রকাশ করা হয়নি। কতদিন আগে সৌদি সরকারকে এই প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে সে সর্ম্পকে কোনো তথ্য দেয়া হয়নি।
এই রিপোর্ট সর্ম্পকে মন্তব্য করেছেন। আমেরিকান মুসলিম স্কলার শায়খ ইয়াসির কাদরি। তিনি তার ফেসবুক পেজে এই রিপোর্ট সর্ম্পকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।তিনি তাতে লিখেছেন
সম্প্রতি দ্যা ইন্ডিপেন্ডেন্ট এ রাসুল (স) এর কবর স্থানান্তর বিষয়ে প্রকাশিত প্রবন্ধটি উত্তেজনা ছড়ানোতে পটু মিডিয়ার কপটতার আরেকটি ইঙ্গিত।
প্রথমত: মনে হচ্ছে সৌদিদের ব্যাপারে এবং তাদের সাথে পবিত্র স্থানগুলির সম্পর্কের বিরুদ্ধে গুজব ছড়িয়ে উত্তেজনা ছড়ানের ব্যাপারে এই নিউজ সংবাদপত্রটি এবং বিশেষ করে সাংবাদিক মিঃ জেরমে টেইলরের অস্বাভাবিক বাতিক রয়েছে।
স্টাটাসে তার রিপোর্টের কিছু লিংক দেয়া হয়েছে
[http://www.independent.co.uk/news/world/middle-east/mecca-for-the-rich-islams-holiest-site-turning-into-vegas-2360114.html
http://www.independent.co.uk/news/world/middle-east/medina-saudis-take-a-bulldozer-to-islams-history-8228795.html
http://www.independent.co.uk/news/world/middle-east/the-photos-saudi-arabia-doesnt-want-seen–and-proof-islams-most-holy-relics-are-being-demolished-in-mecca-8536968.html
http://www.independent.co.uk/news/world/middle-east/saudis-risk-new-muslim-division-with-proposal-to-move-mohameds-tomb-9705120.html ]
দ্বিতীয়ত: রাসুল (স) এর কবর স্থানান্তরের কথিত পরিকল্পনা আসলে সরকারী কমিটির নিকট দেয়া একটি একাডেমিক পেপার। যারা এসকল একাডেমিক পেপার সম্পর্কে জানেন তারা বুঝতেই পারছেন যে এরকম একটি পেপার সাবমিট করাটা কিছুতেই কমিটির প্রকৃত পরিকল্পনা পত্রের প্রকার ও প্রকৃতির মধ্যে পড়ে না।
তৃতীয়তঃ এই পেপারে কোথাও রাসুল (স) এর কবরকে স্পর্শ করার কথা বলা হয়নি। কোনও প্রকৃতিস্থ মুসলমান এটা প্রস্তাব করবেও না। বরং এই পেপারটি যেটা প্রস্তাব করেছে সেটা হল পুরো মসজিদটাকেই আবার পুনর্নির্মাণ পরিকল্পনার আওতায় আনা উচিত যাতে কবরটি মসজিদের সীমানার বাইরে পড়ে। সুতরাং প্রস্তাব প্রণয়নকারী যা প্রস্তাব করেছে সেটা হল মসজিদের সীমানাটাকে পরিবর্তন করতে কবরকে স্থানান্তর করতে নয়।
চতুর্থত: রাসুল (স) এর কবর মসজিদের ভেতরেই হতে হবে এই মতটি একটি সংখ্যালঘিষ্ঠ স্কলারদের মত যা পরিষ্কার ভাবে মেইনষ্ট্রীম সালাফি ও নন-সালাফী স্কলারদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। ঐতিহাসিক ভাবে রাসুলের (স) কবরকে মসজিদে নববী তে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে উমাইয়াদদের সাথে বড় ধরনের কোনও অমত কখনই ছিল না এবং কোনও মাজহাবের বড় স্কলারই কখনও বলেন নি যে মসজিদে নববীর সীমানা নতুন করে নির্ধারণ করতে হবে।
পরিশেষে, এটা হারামাইনের চার পাশে সাউদী নির্মাণ নীতির পক্ষে কোনও সাফাই নয়। এই টপিকটি আলোচনার জন্য একটা বড় আর্টিকেল প্রয়োজন। একটা ফেসবুক একটি মন্তব্যে এটা সম্ভব নয়।
এই পোষ্টের উদ্দেশ্য হল মিডিয়ার উত্তেজনা ছড়ানোর হীনকর্ম কিভাবে চলছে এবং কিভাবে মুসলমানরা খুব সস্তা ভাবে এগুলোর উপর ভিত্তি করে অন্য গ্রুপকে কলঙ্কিত করছে তা বুঝানোর জন্য।
সৌদি দূতাবাসের সাথে ঘনিষ্ট একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা সেৌদি সরকারের নেই। আরেকজন বিশেষঞ্জ জানান নবী রাসুলরা যেখানে ইন্তেকাল করেছেন সেখানে তাদের কবর হয়েছে এগুলো স্থানান্তরের কোনো সুযোগ ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকেও সম্ভব নয়। এ ধরনের কাজ সেৌদি সরকার করবে তা কোনো ভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। মুসলমানদের মধ্যে অবিশ্বাস ও উত্তেজনা ছড়ানো এ ধরনের রিপোর্টের উদ্দেশ্য।