রাশিয়াকে মোকাবেলায় একজোট ন্যাটো নেতারা
ইউক্রেন সঙ্কট নিয়ে আলোচনার জন্য দুই দিনের এক সম্মেলনে যোগ দিতে যুক্তরাজ্যের ওয়েলেস শহরে জড়ো হয়েছেন ন্যাটো নেতারা। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া ওই সম্মেলনে তারা রাশিয়াকে মোকাবেলায় একসাথে কাজ করার একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ওয়েলসের নিউপোর্টে ন্যাটো বৈঠকে রাশিয়া ছাড়াও ইরাক ও সিরিয়ায় প্রভাব বিস্তারকারী ইসলামি স্টেটের হুমকি মোকাবেলার বিষয় নিয়েও আলোচনা করা হবে। ইতোমধ্যে আইএসকে ধ্বংস করার সঙ্কল্প ব্যক্ত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। সম্মেলনে যোগ দেয়ার আগে বুধবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, মার্কিন নাগরিকদের শিরচ্ছেদ করে যুক্তরাষ্ট্রকে ভয় দেখানো যাবে না এবং মধ্যপ্রাচ্যে আইএসের শক্তি নিঃশেষ না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র লড়ে যাবে। মঙ্গলবার দ্বিতীয় মার্কিন সাংবাদিকের শিরচ্ছেদের ভিডিও প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি এ মন্তব্য করেন।
এ দিকে ন্যাটো প্রধান অ্যান্ড্রেস ফগ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, স্নায়ুযুদ্ধের পর ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি।
রুশ আগ্রাসন মোকাবেলায় ইউক্রেনকে সহায়তা করতে একসাথে কাজ করার শপথ নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ওবামা এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। বৃহস্পতিবার এই দুই নেতার একটি যৌথ বিবৃতি ‘টাইমস’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এই সম্মেলনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার নোটিশে কয়েক হাজার সেনা মোতায়েনের একটি পরিকল্পনা অনুমোদন করা হতে পারে।
বৃহস্পতিবার ২৮ সদস্যের ন্যাটো সম্মেলন শুরু হওয়ার আগে ইউক্রেন নিয়ে আলোচনার জন্য ‘ন্যাটো-ইউক্রেন কাউন্সিল’ নামে একটি আলাদা সেশন শুরু হয়। কিয়েভের প্রতি নিজেদের সমর্থন ব্যক্ত করার লক্ষ্যে নেয়া ওই কাউন্সিলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেট্রো পোরেশেংকোর সাথে আলোচনা করবেন ন্যাটো নেতারা।
এ দিকে ন্যাটো সম্মেলন শুরুর প্রাক্কালে বুধবার সাত দফার এক ‘ইউক্রেন শান্তি পরিকল্পনা’ ঘোষণা করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ওই পরিকল্পনায় শুক্রবার থেকে লড়াই বন্ধের একটি প্রস্তাব রয়েছে। এ ছাড়া ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে লড়াইরত রুশপন্থী বিদ্রোহী এবং সরকারি বাহিনী উভয় পেেক অস্ত্র ত্যাগ করারও আহ্বান জানিয়েছেন পুতিন। তবে দ্রুত তার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ইউক্রেন।
পুতিন প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেন ইউক্রেনীয় প্রধানমন্ত্রী আর্সেনি ইয়েৎসেনিয়ুক।
রাশিয়ার আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে পশ্চিমা দেশগুলোকে বিভ্রান্ত করতেই প্রস্তাবটি পেশ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ইয়েৎসেনিয়ুক। বুধবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘ন্যাটো সম্মেলনের আগে নতুন এই প্রস্তাবটি দেয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চোখের ওপর পর্দা টেনে দেয়ার জন্য। আর রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইইউর (ইউরোপীয় ইউনিয়ন) এড়ানোর অযোগ্য নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত বন্ধ করার উদ্যোগ হিসেবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ শেষ করার সবচেয়ে ভালো পরিকল্পনা একটিই আছেÑ সেটি হলো রাশিয়ার সরকারি সেনা, ভাড়াটে সেনা ও তার সন্ত্রাসীদের ইউক্রেইনের মাটি থেকে প্রত্যাহার করা।’
পূর্ব ইউক্রেনের পাঁচ মাসব্যাপী সঙ্ঘাত বন্ধে পুতিন ও তার মধ্যে শান্তি পরিকল্পনার বিষয়ে একটি সমঝোতা হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কো, তা সত্ত্বেও পুতিন প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে এ মন্তব্য করলেন ইউক্রেনীয় প্রধানমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার ওয়েলসে ন্যাটো সম্মেলন শুরুর প্রাক্কালে প্রস্তাবটির বিস্তারিত তুলে ধরেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। শুক্রবার প্রস্তাবটি নিয়ে ইউক্রেন কন্ট্যাক্ট গ্রুপ (যার মধ্যে কিয়েভের প্রতিনিধিরাও আছেন), বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহীরা, মস্কো ও প্যান ইউরোপিয়ান সিকিউরিটি বডি দ্য ওএসসিই’র আলোচনা করার কথা রয়েছে।
এর আগে পাঁচ মাসব্যাপী চলা লড়াইয়ের ইতি ঘটাতে ইউক্রেনীয় বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনী উভয়ের প্রতি অস্ত্রবিরতি করতে ও ব্যাপকভিত্তিক শান্তিচুক্তি মেনে নিতে আহ্বান জানিয়েছিলেন পুতিন।
পুতিন ও তিনি একটি যুদ্ধবিরতির বিষয়ে একমত হয়েছেন পোরোশেংকো এমন ঘোষণা দেয়ার পর অস্ত্র ত্যাগ করার জন্য বিদ্রোহীদের প্রতি সরাসরি আহ্বান জানিয়েছিলেন পুতিন।
এতে অন্তত দুই হাজার ৬০০ জনের প্রাণহানির পর ইউক্রেনের লড়াই বন্ধ হওয়ার আশা জেগেছিল। কিন্তু ইউক্রেনীয় প্রধানমন্ত্রীর বিপরীত মন্তব্যে সেই আশা মুছে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।