ইসলামিক স্টেটের দখলে ব্রিটেনের সমান ভূখণ্ড!
ইসলামিক স্টেটের যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে বিমান হামলা অব্যাহত রাখলেও সুন্নীপন্থী এই সংগঠনের কার্যক্রম ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে। ইরাক ও সিরিয়ার এক তৃতীয়াংশের বেশি এলাকা এখন তাদের দখলে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমানে ইরাক ও সিরিয়ার যেসব এলাকা আইএসের দখলে রয়েছে তার মোট আয়তন ব্রিটেনের সমান।
যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার কারণে ইরাকে আইএসের কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়লেও তা দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলহীন সিরিয়ার বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে। সেখানে ইসলামিক স্টেট রীতিমত একটি আধুনিক সরকার পরিচালন করছে।
ইরাক ও সিরিয়ার পর কট্টরপন্থী এই সংগঠনটি দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতও শক্তি সঞ্চার করছে বলে জানা গেছে।
ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারতসহ দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশেই তাদের তৎপরতা খবর পাওয়া যাচ্ছে।
ইন্দোনেশিয়া
২০০২ সালে ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে বোমা হামলার জন্য আলোচিত সংগঠন জেমাহ ইসলামিয়া (জেআই)। আল-কায়েদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংগঠনটির কারাবন্দী নেতা আবু বকর বশির কারাগারে থেকেই গত মাসে আইএসের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন।
গত সপ্তাহে আইএস-সংশ্লিষ্ট ইসলামপন্থীরা সেখানকার ইউনেসকো-ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্র বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়ায় জাভায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
আইএসের নেতা ও তাদের ‘খিলাফত’ রাষ্ট্রের স্বঘোষিত ‘খলিফা’ আবু বকর আল-বাগদাদির সমর্থনে ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যেই কট্টরপন্থীদের সমবেত হচ্ছে।
আইএসের পতাকা বহনের অভিযোগে চলতি মাসে সাতজনকে আটক করা হলেও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। কারণ, ইন্দোনেশিয়া আইএসকে নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দিলেও সংগঠনটিকে সমর্থনের জন্য কারও বিচার করার আইনি ভিত্তি তৈরি করা হয়নি।
মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়া গত ১৩ আগস্ট ১৯ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের ঘোষণা দেয়। কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, তারা আইএসে যোগ দিতে সিরিয়ায় যাওয়ার পরিকল্পনা করছিল। রাজধানী কুয়ালালামপুরের বিভিন্ন পানশালায় বোমা হামলারও পরিকল্পনা ছিল তাদের। আইএসে যোগ দিতে মালয়েশিয়া থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০ জন মধ্যপ্রাচ্যে গেছে বলে ধারণা করা হয়।
পাকিস্তান
পাকিস্তানের এক্সপ্রেস ট্রিবিউন পত্রিকার খবরে বলা হয়, খাইবার পাখতুনপাখওয়া প্রদেশের পেশোয়ারে সম্প্রতি ‘ফাতাহ’ (বিজয়) শিরোনামে আইএসের পুস্তিকা বিলি করা হয়েছে। পশতু ও দারি ভাষায় ছাপা ওই পুস্তিকা আফগান সীমান্তবর্তী অন্য এলাকায়ও বিলি হয়েছে।
আফগানিস্তান
আফগানিস্তানের জঙ্গি সংগঠন হিজব-ই-ইসলামি ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা আইএসে যোগ দিতে পারে। তালেবানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গ্রুপটির কমান্ডার মিরওয়াইস বলেন, আইএস যদি সত্যিকারের ইসলামি খিলাফত গড়ে তুলতে পারে, তবে তারা সংগঠনটির সঙ্গে যোগ দেবেন।
ভারত
ইন্দোনেশিয়ার পর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মুসলমান রয়েছে ভারতে। দেশজুড়ে আইএসের প্রতি সহানুভূতিশীল লোকের সংখ্যা বাড়তে থাকায় ভারত চরমভাবে উদ্বিগ্ন। এরই মধ্যে দেশটি থেকে অন্তত চারজন আইএসে যোগ দিতে মধ্যপ্রাচ্যে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে লড়াইয়ে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
সম্পদশালী সংগঠন
ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের গবেষক মাইকেল নাইটস, যিনি নব্বইয়ের দশক থেকে ইরাকের উপর গবেষণা করে আসছেন। তিনি ইসলামিক স্টেট সংগঠনটির সম্পদের কয়েকটি হিসেব বেশ জোরের সাথেই বিষয়টি উল্লেখ করেছে। তিনি মনে করছেন, এ সংগঠনটির এখন পর্যন্ত আয় ২ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।
নাইটসের এক হিসেবে, তাদের দৈনিক আয় ২০ লাখ থেকে ৪০ লাখ ডলার।
আইএস (সাবেক আইএসআইএস) সবসময়েই একটি ধনী সংগঠন ছিল। কারণ এ সংগঠনটি সমগ্র ইরাকে প্রায় পাঁচ বছর ধরে বড় বড় অভিযান চালিয়ে আসছে।
বিশেষজ্ঞরা সনাক্ত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে জোটবদ্ধ উপসাগরীয় দেশগুলোর সম্পদশালী দাতাদের সাথে আইএসের লেনদেনের সম্পর্ক রয়েছে।
‘তবে উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে তাদের জন্য খুব বেশি অনুদান আসে না,’ বলেন নাইটস।
আইএসের আয়ের বেশিরভাগই আসে তেলের ব্যবসা থেকে। তারা ইরাক ও সিরিয়ার বেশ কিছু তেলের খনি দখল করে নিয়েছে। এ তেলের খনিগুলো থেকে তারা সীমান্তবর্তী এলাকায় তেল রপ্তানি করে।
নাইটসের হিসেবে, তারা দৈনিক ৩০ থেকে ৪০ হাজার ব্যারেল তেল উত্তোলন করে।