বিনিয়োগে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করবে জাপান

বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে জাপানি উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করবে জাপান সরকার। হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক বক্তৃতায় একথা জানান দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অরগানাইজেশন (জেট্রো) ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের সহ-আয়োজক ছিল বিনিয়োগ বোর্ড ও এফবিসিসিআই।
শিনজো আবে বলেন, জাপানি বিনিয়োগ আকর্ষণে যে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ, সেটাকে জাপান স্বাগত জানায়। বিগ-বি (বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট) হিসেবে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন শিনজো আবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত মে মাসে জাপান সফর করেন। বিষয়টি উল্লেখ করে জাপানি প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে সময় পাঁচ-ছয় বছরের মধ্যে ৬০০ কোটি ডলারের সহায়তার আশ্বাস দেয়া হয়েছিল। ইতিমধ্যে ১২০ কোটি ডলারের চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। এ সময় তিনি দেশের বিনিয়োগ পরিবেশকে আরও উন্নত করার আহ্বানও জানান। ঢাকা সফরের প্রথম বক্তৃতায় জাপানকে এগিয়ে নিতে নিজের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন শিনজো আবে। ১৪ বছর পর জাপানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঢাকায় আসা আবে তার দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে নিজের নীতি তুলে ধরেন। মন্দাক্রান্ত জাপানি অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আবে যে নীতি গ্রহণ করেছেন, তা ‘আবেনোমিকস’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাপানের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আমি আবেনোমিকসের প্রয়োগ ঘটাচ্ছি। এ জন্য জাপানের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমি আজ বাংলাদেশ সফর করছি। বঙ্গোপসাগরের তীরে বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকা (বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট-বিগ বি) প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ অগ্রাধিকারে থাকবে বলে জানান জাপানের প্রধানমন্ত্রী। জাপান ও বাংলাদেশের সম্পর্ককে ‘ভাই-বোনের’ সম্পর্ক হিসেবে অভিহিত করে দুই দেশের উন্নয়নে উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের সহায়তা প্রত্যাশা করেন তিনি। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে একযোগে কাজ করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে এক্ষেত্রে নিজের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। ব্যবসায়ীদের অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় আবে শেখ হাসিনার টোকিও সফরের চার মাসের মধ্যে নিজের ঢাকা সফরের কথা তুলে ধরে বলেন, এই বছরটি বাংলাদেশ ও জাপানের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে, এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক নতুন মাত্রায় উন্নীত হলো।
কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে জাপানি সহায়তার কথা উল্লেখ করেন আবে। বাংলাদেশকে সহযোগিতায় জাপানের বাজারে বাংলাদেশের তৈরী পোশাকের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়ার কথাও তুলে ধরেন তিনি। অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সেখানে উভয় দেশের পণ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনার চিত্র তুলে ধরা হয়। জাপানের অবকাঠামো নির্মাণ, গার্মেন্টস, মেডিকেল, খাদ্যপণ্য, নিরাপদ পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা সভায় উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মসূচি সম্পন্ন হওয়ার পর জাপানের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে দেখা করতে যান। এরপর হোটেলে ফিরে সংসদে বিরোধী দলের নেতা ও রাজপথের বিরোধী দলের নেতার সঙ্গে পৃথক বৈঠকে অংশ নেন। রাতে সোনারগাঁও হোটেলে শেখ হাসিনার দেয়া নৈশভোজে অংশ নেবেন তিনি। আজ সকালে ঢাকা ছাড়ার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করার কথা রয়েছে জাপানি প্রধানমন্ত্রীর। জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইয়োশিরো মোরির পর আবেই ঢাকায় এলেন। ২০০০ সালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে এসেছিলেন মোরি।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button