২০২৪ সালে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হবে চীন
যুক্তরাষ্ট্রকে টপকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠবে চীন। এ সময়ের মধ্যে দেশটির ভোক্তা ব্যয় প্রায় চার গুণ বাড়বে। মার্কিন সংস্থা আইএইচএস ইনকরপোরেশন সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছে।
আইএইএসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ১০ বছর পর চীনের জিডিপি দাঁড়াবে ২৮.২৫ ট্রিলিয়ন ডলারে। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপির আকার হবে ২৭.৩১ ট্রিলিয়ন ডলার। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠবে চীন।
এছাড়া বৈশ্বিক জিডিপিতে চীনের অবদান গত বছর ছিল ১২ শতাংশ, ২০২৫ সালের মধ্যে তা ২০ শতাংশে উন্নীত হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানিটি।
আইএইচএসের এশিয়া শাখার প্রধান অর্থনীতিবিদ রাজিব বিশ্বাস এ প্রসঙ্গে জানান, আগামী ১০ বছরে ভোক্তা ব্যয়ে গতিশীলতার কারণে চীনের অর্থনীতিতে পুনঃভারসাম্য অর্জিত হবে। এটি শুধু চীনের অভ্যন্তরীন অর্থনীতিকেই সহায়তা করবে না, এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রবৃদ্ধিও ত্বরান্বিত করবে।
প্রতিষ্ঠানটির মতে, ২০২৪ সাল নাগাদ চীনে ভোক্তা ব্যয়ে বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি থাকবে ৭.৭ শতাংশ। এর মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক ভোক্তা চাহিদা ও প্রবৃদ্ধির অন্যতম পরিচালক হয়ে উঠবে তা। অন্যভাবে বলতে গেলে, বর্তমানে চীনের ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের ভোক্তা ব্যয় ১০ বছরে বেড়ে ১১ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে।
রাজিব বিশ্বাস বলেন, ‘বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে ক্রমে মনোযোগী হচ্ছে চীন। অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে এর ওপর জোর দেবে দেশটি। আর এর মাধ্যমেই কয়েক দশক ধরে বিদ্যমান স্বল্প খরচের ম্যানুফ্যাকচারিং রপ্তানি নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে একটি উচ্চ মানের অর্থনীতির দেশে রূপান্তরিত হবে চীন, যার প্রধান নিয়ন্তা হবে ভোক্তা চাহিদা।’
গত এপ্রিলে ইন্টারন্যাশনাল কম্পারিজন প্রোগ্রামের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রকে টপকে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠবে চীন। মূলত ক্রয় সক্ষমতার ওপর ভর করে এ অনুমান করেছে সংস্থাটি।
বাণিজ্য উদ্বৃত্তে রেকর্ড
গত আগস্টে চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রেকর্ড ৪৯.৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা কম থাকায় আমদানি হ্রাস এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে রপ্তানি বাড়ার সুবাদেই এ সময় বাণিজ্য উদ্বৃত্ত এতটা বেড়েছে। গতকাল সোমবার দেশটির শুল্ক বিভাগ এ তথ্য প্রকাশ করেছে। খবর ব্লুমবার্গ ও এএফপি।
শুল্ক বিভাগের দেয়া তথ্যানুযায়ী, গত বছরের তুলনায় এবারের আগস্টে আমদানি কমে ১৫৮.৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে রপ্তানি ৯.৪ বিলিয়ন ডলার বেড়ে হয়েছে ২০৮.৫ বিলিয়ন ডলার। জুলাইয়েও দেশটিতে আমদানি কমেছিল। অবশ্য জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে রপ্তানি বাড়ার গতি শ্লথ ছিল। তখন রপ্তানি বেড়েছিল সাড়ে ১৪ শতাংশ।
হংকংয়ে বার্কলেস পিএলসির চীনা শাখার প্রধান অর্থনীতিবিদ জিয়ান চ্যাং বলেন, অব্যাহতভাবে আমদানি কমে যাওয়া অভ্যন্তরীন চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়ারই আভাস। পাশাপাশি অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রমেও ফাটল ধরাতে পারে তা।
অবশ্য ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের অর্থনীতিবিদ জুলিয়ান ইভানস মনে করছেন, ‘উন্নত বাজারগুলোর অবস্থা ক্রমে ইতিবাচক দিকে মোড় নেয়ায় রপ্তানির দিক থেকে ভালোই থাকবে চীন। যদিও অভ্যন্তরীন চাহিদা কম থাকায় আমদানিতে শ্লথগতি বিদ্যমান থাকবে। ফলাফলে আমরা আশা করছি চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্তের এ ধারা বজায় থাকবে।’
আমদানিতে শ্লথগতির কারণে বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে সম্পত্তি খাতে এর প্রভাব স্পষ্ট।
এদিকে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি কিছুটা দুর্বল থাকায় অর্থনৈতিক উত্তরণে বেশ কিছু পদক্ষেপ হাতে নেয় দেশটি।
ছোট কোম্পানিগুলোর জন্য কর অব্যাহতি, নির্দিষ্ট অবকাঠামো খাতে ব্যয়, গ্রামীন অঞ্চল ও ছোট কোম্পানিগুলোর জন্য ঋণ সুবিধা প্রদান ছিল এসব পদক্ষেপের অন্তর্ভুক্ত।