ব্রিটেনে ডিটেনশন সেন্টারে নিহত রুবেলের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম

নিহত রুবেল (বামে), দেশে থাকা তার মায়ের আহজারী (ডানে)
নিহত রুবেল (বামে), দেশে থাকা তার মায়ের আহজারী (ডানে)

ব্রিটেনের ডিটেনশন সেন্টারে নিহত রুবেল আহমদের (২২) গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। শোকে তার মা নূরজাহান বেগম বার বার মুর্চ্ছা যাচ্ছেন। রুবেল বিশ্বনাথ উপজেলা লামাকাজী ইউনিয়নের সাঙ্গিরাই গ্রামের প্রবাসী আব্দুল জলিলের ছেলে। গত শুক্রবার গভীর রাতে রুবেল মারা যান। তার লাশ দেশে আনার চেষ্টা চলছে বলে পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে। মঙ্গলবার গ্রামের বাড়িতে তার কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।
রুবেলের চাচাত ভাই এনামুল হক মেম্বার জানান, প্রায় সাড়ে ৫ বছর পূর্বে (২০০৯ সালে) ওয়ার্কিং হলিডে মেকার ভিসায় যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমায় রুবেল আহমদ। সেখানে সে প্রায় দুই বছর বৈধভাবে কাজ করে। এরপর স্থায়ীভাবে বসবাসের আশায় আইনজীবির মাধ্যমে অ্যাসাইলাম প্রার্থনা করে। গত ২২ রমজান বৃটেনের কেন্ট সিটির একটি রেষ্টুরেন্টে কর্মরত অবস্থায় তাকে আটক করে সে দেশের আইনশৃংখলা  রক্ষাকারী বাহিনী।
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় রুবেল শারীরিক অসুস্থতায় ভুগে। এরপর রাতে তাকে একটি রুমের মধ্যে একা রেখে বাইরে থেকে রুমটি তালাবদ্ধ করে রাখে নিরাপত্তারক্ষীরা। গভীর রাতে রুবেল ব্যথায় অস্থির হয়ে দরজায় ধাক্কাতে থাকে ও চিৎকার করে। আশপাশ রুমের লোকজন এগিয়ে এসে তালাবদ্ধ দরজা খুলতে কর্তৃপক্ষকে বলে। এরপর রাত প্রায় ১টায় দরজা খুলে কর্তৃপক্ষ। ততক্ষণে রুবেল নিস্তেজ হয়ে যায়। এরপর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় ডিটেনশন সেন্টারে আটক লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এনিয়ে ডিটেনশন সেন্টারে অন্যান্য বন্দিরা আতংকিত হয়ে পড়েন এবং গত শনিবার লিংকনশায়ারের সুইনডেরবির ওই কেন্দ্রে বন্দিরা বিক্ষোভ করেন বলে জানান এনামুল।
এ সংবাদ বাঙালি কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়লে তাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করেছে বলে জানা গেছে।
রুবেলের পরিবার আরো জানায়, অন্য বন্দিদের কাছ থেকে মুঠোফোনে রুবেলের মৃত্যু সংবাদ শনিবার প্রথমে তার আইনজীবীকে জানানো হয়। তিনি এ সংবাদটি পেয়ে বন্দি শিবিরে গেলে কর্তৃপক্ষ তাকে রুবেল সম্পর্কে কোন তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। ফলে ঐ আইনজীবী সংবাদ সম্মেলন করেন। পরে কর্তৃপক্ষ রুবেলের মৃত্যু সংবাদ নিশ্চিত করে ও মর্টন হল ডিটেনশন সেন্টার থেকে প্রায় কয়েক শ’ মাইল দূরে একটি হাসপাতালের মর্গে রুবেলের মৃতদেহ রয়েছে বলে তার আইনজীবীকে জানানো হয়।
বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বৃটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, রুবেলের মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ওই কেন্দ্র থেকে কর্মচারীদের প্রত্যাহার করে দাঙ্গা কারা-কর্মকর্তাদের মোতায়েন করা হয়েছে।
যেভাবে স্বপ্নের দেশ যুক্তরাজ্যে পাড়ি দেয় রুবেল : ২০০৯ সালে সিলেট সদর উপজেলার জাঙ্গাইল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলো রুবেল। পার্শ্ববর্তী ধনপুর গ্রামে ছিল তার নানার বাড়ী। সেখানেই থেকে সে পড়ালেখা করতো। বয়স তখন সতেরর কোটা ছুঁই ছুঁই করছে। ওয়ার্কিং হলিডে ভিসায় দুই বছরের মেয়াদ নিয়ে চলে যায় কিশোর রুবেল স্বপ্নের দেশ যুক্তরাজ্যে। সেখানে গিয়ে তার ফুফুর বাসায় উঠে। কাজ নেয় তার এক আত্মীয়ের রেস্টুরেন্টে। কাজের সুবাদে সেখানে থাকা ও খাওয়া। দুই বছর পর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে রুবেল অবৈধ অভিবাসীর তালিকায় নিজের নাম লেখায়।  এরপর সে আইনজীবীর মাধ্যমে বৃটেনে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য ‘অ্যাসাইল্যাম’ প্রার্থী হয়। সে গত রমজানে আটকের পর আইনজীবীর মাধ্যমে ‘সাইন’-এ ছিলো।
স্বপ্ন পূরণ হলো না রুবেলের : রুবেলের ইচ্ছে ছিলো বৃটেনে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পেলে দেশে এসে বিয়ে-শাদী করে সংসারী হবে। ৪ভাই ২বোনের মধ্যে রুবেল ছিল ২য়। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে মা-বাবার স্বপ্নও ছিলো তাই। তার বাবা প্রবাসে বসবাস করেন। রুবেল টাকা পয়সা রোজগার করে বাড়িতে পাঠাতো। তার পাঠানো টাকায় ইতিমধ্যে নিজ গ্রামের পাশে জমি ক্রয় করে সেখানে বাসা নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। কিন্ত সে বাসা নির্মাণ কাজ শেষ করতে না করতেই রুবেল চলে যায় না ফেরার দেশে। ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায় সব স্বপ্ন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button