সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে আমেরিকা কতটুকু সফল?

আমেরিকার প্রায় অর্ধেক মানুষ মনে করেন ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলার পর বিগত সময়ের তুলনায় বর্তমানে দেশটি সবচেয়ে নিরাপত্তাহীন হয়ে পয়েছে।
১১ই সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলার বার্ষিকীর প্রাক্কালে এক জনমত জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, বিভিন্ন সরকার সন্ত্রাস বিরোধী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করলেও মার্কিন নাগরিকরা এখনো নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছে। ১১ই সেপ্টেম্বরের ঘটনাকে আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে ধরা হয়। প্রায় ২০০ বছর পর এই প্রথম মার্কিন মুল্লুুকে এত বড় হামলার ঘটনা ঘটে। তাও আবার যেনতেন জায়গায় হামলা হয়নি বরং আমেরিকার অর্থনীতির একেবারে প্রাণকেন্দ্র নিউইয়র্কে ওই ভয়াবহ হামলা চালানো হয়। ১১ই সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলায় নিউইয়র্কের বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্রের দুটি ভবন ধ্বসে পড়ার ঘটনাকে ১৯৪১ সালে পার্ল হারবার বন্দরে মার্কিন নৌ ঘাঁটিতে বিমান হামলার ঘটনার সঙ্গে তুলনা করা যায় যা কিনা আমেরিকাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়াতে বাধ্য করেছিল। ১১ই সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলার পরপরই তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লুউ বুশ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এ ঘোষণা দেয়ার এক মাসের কম সময়ের মধ্যে আমেরিকা আল-কায়দাকে নির্মূল করার অজুহাতে আফগানিস্তানে হামলা চালিয়ে দেশটি দখল করে নেয়। এর মাত্র দুই বছর পর ২০০৩ সালে আমেরিকা ইরাকেও হামলা চালায়। এরপর থেকে আমেরিকা সন্ত্রাসীদের দমনের অজুহাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গুপ্তচর বৃত্তিসহ সামরিক হস্তক্ষেপ করা অব্যাহত রেখেছে। এ লক্ষ্যে মার্কিন কর্মকর্তারা বিপুল অংকের অর্থ ব্যয় করা ছাড়াও নতুন নতুন পদ্ধতিতে নির্যাতন ও গোয়েন্দা চক্র গড়ে তোলার মতো নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু তারপরও বিশ্ববাসী এখনো সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদের কবল থেকে মুক্ত হতে পারেনি।
১১ই সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলার বার্ষিকীর প্রাক্কালে গত কয়েকদিনে মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ করে ইরাক ও সিরিয়ায় যেসব ঘটনা ঘটেছে তা থেকে বোঝা যায়, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় মার্কিন সরকারগুলোর পরিকল্পনা কার্যত ব্যর্থ হয়েছে। সম্প্রতি আইএসআইএলের হাতে দুজন মার্কিন সাংবাদিক নিহত হওয়ার ভিডিওচিত্র প্রকাশিত হয়। আইএসআইএল হুমকি দিয়ে বলেছেন, তারা মার্কিনীদের রক্ত ঝরাবে  এবং হোয়াইট হাউজে আইএসআইএলের পতাকা উড়ানো হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যদিও আমেরিকার বিরুদ্ধে আইএসআইএলের এ ধরণের হুমকি বাস্তবায়ন এত সহজ হবে না কিন্তু তারপরও এ হুমকি থেকে বোঝা যায়, ১১ই সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলার ১৩ বছর পরও আমেরিকা আল-কায়দার চাইতে আরো বেশি বিপদজনক গোষ্ঠীর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। অভ্যন্তরীণ নানা সমস্যা সত্ত্বেও আল-কায়দা আমেরিকা ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার জন্য আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে একই মতাদর্শে অনুপ্রাণিত সোমালিয়ার আল-শাবাব ও নাইজেরিয়ার বোকো হারামের মত গোষ্ঠীগুলোও ওই অঞ্চলের জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠেছে।
যাইহোক বিগত বেশ ক’বছরের ঘটনাবলীর দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে আমেরিকায় যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন তারা কেউই সন্ত্রাসবাদের হুমকি রোধ করতে পারেনি এবং আগামী দিনেও তারা পারবে কিনা তাতে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button