ইরাক-সিরিয়া সঙ্কটে নতুন মোড়, বিপাকে যুক্তরাষ্ট্র

ISISইরাকের সুন্নি চরমপন্থি গ্রুপ আইসিসকে দমন করতে যুক্তরাষ্ট্র যখন সিরিয়ার ‘মডারেট’ বিদ্রোহীদের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ট করার চেষ্টা করছে তখন এই বিদ্রোহী গ্রুপগুলো উল্টো আইসিসের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করেছে। জানা গেছে, পশ্চিম ঘেঁষা বিশেষ করে মার্কিন মদদপুষ্ট বিদ্রোহী গ্রুপগুলো আইসিসের সঙ্গে অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষর করে ফেলেছে।
ইতিমধ্যে আইসিসের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সামরিক অভিযান পরিচালনা পরিকল্পনার শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ঘাঁটি ব্যবহারের অনুরোধ নিয়ে তুরস্কে গিয়ে ব্যর্থ মনোরথে ফিরেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী জন কেরি। এখন তিনি সহযোগিতা চাইতে গেছেন মিশরে।
বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, আইসিস এবং সিরিয়ার কয়েকটি চরমপন্থি ও উদারপন্থি বিদ্রোহী গ্রুপ অনাক্রমণ চুক্তি করেছে। তারা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে হটানোই এই মুহূর্তে মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, চুক্তিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে মার্কিন সমর্থিত ফ্রি সিরিয়ান আর্মির একাংশও রয়েছে।
এই অনাক্রমণ চুক্তি আইসিসকে দমনে তাদের বিরুদ্ধ গ্রুপগুলোকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে আরো শক্তিশালী করার মার্কিন ঘোষণার কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় তৈরি করলো। এর ফলে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নতুন কৌশল বড় ধরনের হোঁচট খাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের বরাত দিয়ে এএফপি জানিয়েছে, চুক্তিতে তারা সম্মত হয়েছে যে, তাদের প্রধান শত্রু ‘নুসাইরি’ শাসন। নুসাইরি বলতে শিয়াদের একটি গোষ্ঠী আলভি বা আলাওয়াইতকে বুঝানো হয়েছে। প্রেসিডেন্ট আসাদ এ গোষ্ঠীর মানুষ। সিরিয়াতে গোষ্ঠীটি সংখ্যালঘু। আইসিস ও আসাদ বিরোধী বিদ্রোহীদের চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছে রাজধানী দামেস্কের একটি শহরতলীতে যেখানে আইসিসের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
এ ব্যাপারে ব্রুকিং ইনস্টিটিউশনস দোহা সেন্টারের ফেলো চার্লস লিস্টার একটি ওয়েবসাইটের বরাত দিয়ে বলেন, অনাক্রমণ চুক্তিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে মার্কিন সমর্থিত জোট সিরিয়ান রেভলুশনারি ফ্রন্ট রয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক মিডলইস্ট আই জানিয়েছে, চুক্তিটি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র বর্ণিত ‘মডারেট’ বিদ্রোহী এবং ইসলামিক স্টেটের মধ্যে। আর এর মধ্যস্থতা করেছে সিরিয়ার আল কায়েদা ঘনিষ্ট আল নুসরা ফ্রন্ট।
গত মার্চে ফরেন পলিসি সাময়িকীতে সিরিয়ান রেভলুশনারি ফ্রন্টকে সিরিয়ার ইসলামি যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সবচেয়ে বড় সুযোগ বলে বর্ণনা করেছে। ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, গ্রুপটি ২৫ হাজার যোদ্ধাকে নিয়ন্ত্রণ করে। আর এর নেতাদের পশ্চিমা মদদপুষ্ট সিরিয়ান ন্যাশনাল কোয়ালিশনের সঙ্গে ঘনিষ্ট যোগাযোগ রয়েছে।
এর নেতারা পশ্চিমাদের সুনজরে আসে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে আইসিসকে সাফল্যের সঙ্গে পরাজিত করার পর।
ফ্রি সিরিয়ান আর্মির একাংশ সিরিয়ান রেভলুশনারি ফ্রন্টকে অজিহাদি সংগঠন বলা হয়- এদের গত বছর থেকে সরাসরি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি এদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দেয়া বাবদ ৫০ কোটি ডলার বরাদ্দ দেয়ার জন্য ওবামা কংগ্রেসকে অনুরোধ জানিয়েছেন। আইসিসকে দমনের জন্য তাদের ব্যবহারের অভিপ্রায় তিনি গত বুধবারের ভাষণেও বলেছেন।
এখন এই চুক্তির বিষয়টি নতুন সঙ্কট নাকি কৌশল। কী বলে একে ব্যাখ্যা করা যায়? এই মুহূর্তে কোনোটাই পরিষ্কার নয়। তবে সময়ের সাথে সাথে মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির নিগুঢ় কৌশলটি বুঝা যাবে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button