‘ডিজিটাল’ এখন চমক নয় দৈনন্দিন জীবনের অংশ
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, বাংলাদেশে এক সময় ‘ডিজিটাল’ শব্দটি ছিল ‘চমক’। কিন্তু এখন তা সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। তিনি বলেছেন, ডিজিটালাইজেশনের ফলে এখন এই খাতের অনেক কিছুই অনেকের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে গেছে। ফলে এটা নিয়ে নানান ধরনের প্রতিযোগিতাও হচ্ছে। গতকাল রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে মোবাইল ফোনের অ্যাপ্লিকেশন তৈরির এক প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করে তিনি এ কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নতুন জ্ঞানের পথে ছেলেমেয়েদের উৎসাহ দিচ্ছেন, এতেই তারা এগিয়ে যাবে। গ্রামাঞ্চলেও পরিবর্তন এসে গেছে, যে বীজ বপণ করা হয়েছিল- তা প্রস্ফুটিত হচ্ছে। মোবাইল ফোনের এসএমএস ও অনলাইনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি, ফল প্রকাশ থেকে শুরু করে যেসব কাজ অনলাইনে হচ্ছে তা বিস্তারিতভাবে অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন নাহিদ। তিনি বলেন, আমরা দায়িত্ব নেয়ার সময় অর্ধেক শিক্ষার্থী ফেল করত। তারা মনে করত- অর্ধেক যদি ফেলই না করে তবে কীসের পরীক্ষা! “গণিত ও ইংরেজিতে বেশি ফেল করত। সাড়ে আট হাজার স্কুল বাছাই করে ইংরেজি-গণিতে সাড়ে ১১ লাখ অতিরিক্ত ক্লাস নিয়েছি। ওইসব বিদ্যালয় থেকে কেউ ওইসব বিষয়ে ফেল করেনি।”
নাহিদ বলেন, এখনকার ছেলে-মেয়েদের ‘আধুনিক বাংলাদেশের নির্মাতা’ করে গড়ে তুলতে সরকার কাজ করছে।
“এজন্য দলীয় নয়, জাতীয় শিক্ষানীতি করা হয়েছে। মৌলিক প্রশ্নে দল-মত নির্বিশেষে আমরা এক হয়েছি।” এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর জামিলুর রেজা চৌধুরী ‘বাংলা অ্যাপ’ বানানোয় আরো মনোযোগী হওয়ার তাগিদ দিয়ে বলেন, বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চেয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তথ্য-প্রযুক্তি ও কম্পিউটার বিজ্ঞানে বেশি শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইটি শিক্ষাকে আয়করের বাইরে নিতে শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষাসচিবকে অনুরোধ জানান তিনি। বিটিআরসি চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস অনুষ্ঠানে জানান, ২০১৫ সালে ‘ফোরজি’ তরঙ্গের নিলাম আয়োজনের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। টেলিযোগাযোগ খাতের বর্তমান অবস্থা এবং বাংলাদেশের অগ্রগতির বিষয়গুলোও তুলে ধরেন তিনি।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম খান বলেন, “আমাদের সাড়ে চার হাজার আইটি গ্রাজুয়েট দরকার। শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রামিং ও জাভা শেখানো দরকার।” অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এথিক্স অ্যাডভান্সড টেকনোলজি লিমিটেড (ইএটিএল) ও প্রথম আলোর যৌথ উদ্যোগে অ্যাপ তৈরির এই প্রতিযোগিতা নয় মাস ধরে চলবে। চূড়ান্ত পর্বে প্রথমস্থান অর্জনকারী অ্যাপ নির্মাতা পাবেন দশ লাখ টাকা পুরস্কার। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারীরা যথাক্রমে পাঁচ লাখ ও দুই লাখ করে টাকা পাবেন। শীর্ষ দশ বিজয়ী পাবেন একটি করে স্মার্ট ফোন ও ইএটিএল-এ চাকরির সুযোগ। এছাড়া অ্যাপ তৈরির জন্য জমা দেয়া ধারণাগুলোর মধ্যে নির্বাচিত সেরা ধারণাপত্রের জন্য থাকবে এক লাখ টাকা করে পুরস্কার। এর আগে ২০১২ ও ২০১৩ সালেও এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এবার মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনও এ আয়োজনের সঙ্গে রয়েছে।
এদিকে অপর এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে দরকার আধুনিক নতুন প্রজন্ম। সেজন্য প্রয়োজন দক্ষতা, জ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বমানের শিক্ষা ব্যবস্থা। তাই শিক্ষায় আরেও বেশি বিনিয়োগের দাবি জানিয়েছেন তিনি। গতকাল রাজধানী জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে (নায়েম) আয়োজিত এক বিতর্ক প্রতিযোগিতার সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এ দাবি জানান। ইউনাইটেড নেশনস পপুলেশন ফান্ড’র (ইউএনএফপিএ) পৃষ্ঠপোষকতায় ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি এ বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।