অখণ্ড ব্রিটেন বনাম স্বাধীন স্কটল্যান্ড

Scotlandতবারুকুল ইসলাম: স্কটল্যান্ড স্বাধীন হওয়া উচিত, না উচিত নয়-এ প্রশ্নে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর)। এ গণভোটের ফলাফলের উপর নির্ভর করছে স্কটল্যান্ড-এর ভাগ্য। স্কটল্যান্ডের জনগণ স্বাধীনতার পক্ষে রায় দিলে যুক্তরাজ্যের মানচিত্রই শুধু ছোট হবে না, বিশ্ব অর্থনীতি এবং রাজনীতিতে ব্রিটেনের অবস্থানের আমূল পরিবর্তন অনিবার্য বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। স্কটল্যান্ড স্বাধীন হওয়া উচিত কি-না এ প্রশ্নে স্কটল্যান্ডে প্রায় ৪২ লক্ষ ভোটার হ্যাঁ/ না রায় দেবে।
ব্রিটেনের বর্তমান ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পার্টির জনপ্রিয়তা স্কটল্যান্ডে ঐতিহাসিকভাবে নগণ্য। এমন বাস্তবতা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন গত এক সপ্তাহে দুইবার ছুটে গেছেন স্কটল্যান্ডে। গত সোমবার তিনি নিজ দলের অবস্থানের কথা স্বীকার করে স্কটিশদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘আপনারা যদি আমাকে পছন্দ না করেন আমি আর কখনো স্কটল্যান্ডে আসব না। আপনারা না চাইলে বর্তমান সরকার আর ক্ষমতায় আসবে না। কিন্তু আপনারা যদি যুক্তরাজ্য থেকে আলাদা হয়ে যান, তবে এ সম্পর্ক আজীবনের জন্য ভেঙ্গে যাবে।’ যুক্তরাজ্যের অখণ্ডতার বিষয়টি তিনি বিবেক, আবেগ এবং হূদয় দিয়ে বিবেচনা করার আহ্বান জানান।
ব্রিটিশ রানী বলেছেন, তিনি মনে করেন স্কটল্যান্ডের মানুষ তাদের ভবিষ্যতের বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করবে। সম্প্রতি ইউকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট নেতা নাইজেল ফ্যারেজ বলেন, যুক্তরাজ্যকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য রানী যদি কিছু বলতেন তাহলে তা ‘বেটার টুগেদার’ ক্যাম্পেইনের জন্য অনেক ভাল হত। ফ্যারাজের ঐ বক্তব্যের পর রানীর এমন মন্তব্য আসল। তবে বাকিংহাম প্যালেস থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা প্রশ্নে রানী তার রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চান।
গণভোটের তিনদিন আগে অর্থাত্ ১৫ সেপ্টেম্বর সোমবার সর্বশেষ প্রকাশিত তিনটি জরিপে ‘নো’ ক্যাম্পেইন এগিয়ে থাকলেও একটি ক্যাম্পেইনে এগিয়ে ছিল ইয়েস ‘ক্যাম্পেইন’। তবে সবগুলো জরিপে ‘ইয়েস’ এবং ‘নো’ ক্যাম্পেইনের অবস্থান একেবারে কাছাকাছি। এর মধ্যে বেটার টুগেদার ক্যাম্পেইনের পক্ষে সার্বেশান জরিপে- ‘নো’ ৫৪% এবং ‘ইয়েস’ ৪৬%, দৈনিক অবজারভারের পক্ষে ওপিনিয়াম জরিপে- ‘নো’ ৫৩% এবং ‘ইয়েস’ ৪৭%, সানডে টাইমসের পক্ষে প্যানেলবেইস জরিপে- ‘নো’ ৫১% এবং ‘ইয়েস’ ৪৯% বলে প্রতিয়মান হয়েছে। অপরদিকে সানডে টেলিগ্রাফের পক্ষে আইসিএম জরিপে ‘ইয়েস’ ক্যাম্পেইনের পক্ষে সমর্থন ছিল ৫৪% এবং ‘নো’ ক্যাম্পেইনের পক্ষে সমর্থন ৪৬%। এসব জরিপে ভোট প্রদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেননি এমন ভোটারদের বিবেচনায় নেয়া হয়নি। প্রতিটি জরিপে ৭শ থেকে ১ হাজার ভোটারের মতামত যাচাই করা হয়েছে।
জরিপে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী অন্তত ১৭ শতাংশ ভোটার এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। তারা জানেন না কোন পক্ষে তারা ভোট দেবেন। শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় স্বাধীনতার পক্ষ এবং বিপক্ষ উভয় শিবির এসব ভোটারদের মন জয় করার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের মতে এরাই হবে গণভোটের ফলাফল নির্ধারক।
১৭০৭ সালে একটি চুক্তির বলে স্কটল্যান্ডকে যুক্তরাজ্যের আওতাভুক্ত করে ইংল্যান্ড। স্বাধীন স্কটল্যান্ড প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৩৪ সালে স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (এসএনপি) যাত্রা শুরু করে। দলটির দাবি অনুযায়ী ১৯৯৭ সালে অনুষ্ঠিত গণভোটের রায়ের মাধ্যমে স্কটল্যান্ডে ১৯৯৯ সাল থেকে প্রাদেশিক সরকার প্রতিষ্ঠা হয়। ২০০৭ সালে এসএনপি প্রথমবারের মত মাইনোরিটি সরকার গঠন করে। ২০১১ সালে দলটি স্বাধীন স্কটল্যান্ড প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে। এরপর ওয়েস্টমিনস্টারে ক্ষমতাসীন ক্যামেরন সরকারের সাথে দীর্ঘ দেনদরবার শেষে ২০১২ সালে স্বাধীনতা প্রশ্নে গণভোট আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়।
গণভোটের জন্য ১৮ সেপ্টেম্বরকে বেছে নেন এলেক্স স্যামন্ড। কারণ এদিন প্রাদেশিক পার্লামেন্ট প্রতিষ্ঠার দাবি নিয়ে অনুষ্ঠিত গণভোটের ১৭ বছর পূর্ণ হবে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button