মিয়ানমারে নতুন করে সহিংসতায় আতঙ্ক সর্বত্র
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে নতুন করে সহিংসতার আয়োজন করেছে সেদেশের উগ্র রাখাইন বৌদ্ধরা।
রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্থানীয় রাখাইনদের প্রতি নির্দেশ জারি করেছে সেখানকার জাতীয় বৌদ্ধ ধর্মীয় সংগঠন।
গত ৯ সেপ্টেম্বর প্রচারিত এ ঘোষণায় নির্দেশ দেয়া হয়েছে’অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বাঙালিদের গোপনে আশ্রয়দানকারীদের অথবা মুসলিমদের খুঁজে বের করে শাস্তি দিতে হবে’।
ঐ ঘোষণায় অরো বলা হয়েছে, মিয়ানমারবাসীদের জান-মালের নিরাপত্তার স্বার্থে ‘বোরকা বা নেকাব পরিধান করে চলাফেরা বন্ধ করে দিতে হবে’। এ ব্যাপারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের গ্রাম, পাড়া ও মসজিদের উপর কঠোর নজর রাখার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সাথে ঘনিষ্ট যোগাযোগ রেখে কাজ করার জন্য বলা হয়েছে।
মিয়ানমারের বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারের নামে এ ঘোষণা প্রচারের পর রোহিঙ্গা মুসলমানদের মধ্য নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে রোহিঙ্গা এডুকেশন ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রামের সাধারণ সম্পাদক জনাব জমির উদ্দিন জানান, নতুন ঘোষণার পর মিয়ানমারের মুসলমানরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন, মিয়ানমার থেকে মুসলমানদের উৎখাত করার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার আংশ হিসেবে এ নতুন ঘোষণা দিয়েছে উগ্র রাখাইন গোষ্ঠী। আর এর পেছনে মূল মদতদাতা হচ্ছে ‘নাইন সিক্স নাইন’ নামের একটি উগ্র বৌদ্ধ সংগঠন। সরকার তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে।
উল্লেখ্য, মিয়ানমার সরকার ১৯৮২ সালে সেদেশের নাগরিকত্ব আইনে সংশোধনী এনে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করে। এর পর থেকে মুসলিম অধ্যুষিত আরাকান প্রদেশের রোহিঙ্গাদের উপর নেমে আসে সরকারী বাহিনী ও সরকারের মদদপুষ্ট উগ্র রাখাইনদের নির্মম আত্যাচার।
এরইমধ্যে কয়েকদফা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার শিকার হয়ে কয়েক হাজার মুসলমান নাগরিক নিহত হয়েছেন। কয়েক লক্ষ নাগরিক পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে দেশান্তরী হয়েছেন। আরো কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলমান নারী-শিশুদের নিয়ে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। প্রচুর সংখ্যক রোহিঙ্গা নৌকাযোগে পালিয়ে যেতে গিয়ে সাগরে ডুবে মরেছে। বিশ্ববাসীর কাছে রোহিঙ্গা মুসলমানরা আজকে সবচেয়ে নিগৃহীত জনগোষ্ঠী। তাদের বলা হচ্ছে রাষ্ট্রহীন নাগরিক।