চূড়ান্ত রায়ে সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ড

Saydiমানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড সাজার পরিবর্তে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন ‍আপিল বিভাগ।
বুধবার সকালে প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ রায় দেন।
বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
নিয়ম অনুযায়ী সকাল সোয়া নয়টায় আপিল বিভাগ বসার কথা থাকলেও আজ কয়েক দফা পিছিয়ে বসে ১০টা ৬ মিনিটে। আর ১০টা ১০ মিনিটে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন আদালত।
রায়ে ১০, ১৬ ও ১৯ নং অভিযোগে মাওলানা সাঈদীকে আমৃত্যু যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আর ৭ নং অভিযোগে ১০ বছর এবং ৮ নং অভিযোগে তাকে ১২ বছর কারাদণ্ড দেন আদালত।
এছাড়া ৬, ১১ ও ১৪ নং অভিযোগে জামায়াতের এই নেতাকে বেকসুর খালাস দেন আদালত। এর আগে ৮ ও ১০ নং অপরাধে সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
রায় ঘিরে মঙ্গলবার রাত থেকে সুপ্রিমকোর্ট ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। বুধবার সকাল থেকে এই নিরাপত্তা আরো বাড়ানো হয়। রাজধানী ঢাকার মত সারা দেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। অন্তত ১০টি জেলায় নামানো হয় বিজিবি।
মাওলানা সাঈদীর আপিলের শুনানি শেষে গত ১৬ এপ্রিল রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখেন আপিল বিভাগ। গতকাল মঙ্গলবার আজ রায়ের জন্য কার্য তালিকার তিন নম্বরে মামলাটি রাখা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পিরোজপুর এবং বরিশালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ২০টি অভিযোগ আনা হয়েছিল মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারে ইব্রাহিম কুট্টি এবং বিসাবালী নামের দুজনকে হত্যার ঘটনায় সাঈদীর ফাঁসির আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
ট্রাইব্যুনালের এ রায়ের বিরুদ্ধে উভয়পক্ষের আপিল শুনানি শেষ করতে দীর্ঘ আট মাসে ৪৯ কার্য দিবস সময় নেন। এরপর মামলাটি রায়ের জন্য পাঁচ মাস অপেক্ষমান রাখেন আদালত।
এর আগে জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার আপিল নিষ্পত্তি করে রায় কার্যকর করা হয়েছে। আর আব্দুল আলীম মৃত্যুবরণ করায় তার আপিল কার্য তালিকা বাদ দিয়েছেন আদালত।
গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ট্রাইব্যুনাল ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেন। এর এক মাস পর ২৮ মার্চ আপিল করে উভয়পক্ষ।
গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে এ মামলার আপিল শুনানি শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন- এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল এমকে রহমান। তাদের সহযোগিতা করেন প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী।
আসামিপক্ষে শুনানি করেন- খন্দকার মাহবুব হোসেন, এডভোকেট এসএম শাহজাহান। তাদের সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার তানভীর আহমেদ আল আমীন।
সাঈদীর বিরুদ্ধে আনীত ২০টি অভিযোগের মধ্যে সন্দেহাতীতভাবে ৮টি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১। এর মধ্যে দুটি অভিযোগে অর্থাৎ ৮ ও ১০ নং অপরাধে সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড হয়েছে।
এছাড়া ৬, ৭, ১১, ১৪, ১৬ ও ১৯ নং অভিযোগ প্রমাণিত হলেও এগুলোতে কোনো সাজার কথা ঘোষণা করেননি ট্রাইব্যুনাল।
২০১১ সালের ৩ অক্টোবর প্রথম ব্যক্তি হিসেবে সাঈদীর বিচার শুরু হয় ট্রাইব্যুনালে। প্রসিকিউশনের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় ওই বছরের ৭ ডিসেম্বর। সাঈদীর বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তাসহ ২৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনাল। আসামিপক্ষে সাক্ষ্য দেন ১৭ জন।
এরও আগে ২০১১ সালের ১১ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। ১৪ জুলাই সাঈদীর বিরুদ্ধে সে অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা এক মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেপ্তার হন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। ওই বছরের ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক দেখানো হয় তাকে। ২০১০ সালের ২১ জুলাই থেকে ২০১১ সালের ৩০ মে পর্যন্ত সম্পন্ন হয় তদন্ত কার্যক্রম।
সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে উভয়পক্ষে যুক্তিতর্ক শেষ হয় ২০১২ সালের ডিসেম্বরে। ওই বছরের ৬ ডিসেম্বর থেকে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক।
তবে স্কাইপে কথোপকথনের জের ধরে বিচারপতি নিজামুল হকের পদত্যাগের পর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে ফের শুরু হয় যুক্তিতর্ক। সব প্রক্রিয়া শেষে ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখা হয় মামলাটি।
এদিকে, আপিল বিভাগে এখন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে- জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযম, বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলা। এর মধ্যে আপিল শুনানির শেষ পর্যায়ে রয়েছে- সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মামলা।
এছাড়া মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ চারটি মামলা ট্রাইব্যুনালে রায়ের অপেক্ষমান আছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button