ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত ৫ লক্ষাধিক মানুষ : ৩শ’ মামলায় ১ লাখ আসামী
আবু সাইদ বিশ্বাস (সাতক্ষীরা) : রাজনৈতিক কারণে সাতক্ষীরায় বিএনপি-জামায়াতের ৫ লক্ষাধিক মানুষ ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ৩শ’ মামলায় বিরোধী দলের লক্ষাধিক আসামী করা হয়েছে। এ সব মামলার বেশির ভাগ আসামী ঘর ছাড়া। ফলে লক্ষাধিক পরিবারের ৫ লাখ সদস্য ঈদের আনন্দ কাটাবে পুলিশী আতংকে। আর ১৩ শহীদ পরিবারের ঈদ কাটবে কবরের পাশে। গত ঈদে যারা পরিবারের সাথে সময় কাটিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেছিল আজ তারা গহীন কবরে।
বর্তমান সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি, ব্যর্থতা, টেন্ডারবাজি, হত্যা, খুন, গুম-এর প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছে এসব পরিবার। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় থেকে জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় পরবর্তী সহিংসতায় সাতক্ষীরায় সরকারি বাহিনীর হাতে শাহাদাৎ বরণ করে ১৩ জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মী। এসব হত্যাকা-ের ঘটনায় পুলিশ এবং আ’লীগ বাদী হয়ে লক্ষাধিক নিরীহ মানুষকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেছে। আসামী করা হয়েছে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের। সর্বশেষ গত ১৬ জুলাই কালিগঞ্জে পুলিশের গুলীতে নিহত দশম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্র শিবিরের সাথী আরিফ বিল্লাহর পিতা আফতাব উদ্দীনকে পুত্র হত্যার দায়ে উল্টা হত্যা মামলার প্রধান আসামী করেছে পুলিশ। পুত্রের দাফনের আগেই পিতাকে হত্যা মামলার আসামী করা ইতিহাসে নজিরবিহীন। এছাড়া যারা শহীদ হয়েছে তাদের প্রত্যেককেই এসব হত্যা মামলার আসামী করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের মামলা বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ আলী জানিয়েছেন, বর্তমান সরকারের আমলে সাতক্ষীরায় জামায়াতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ২১০টি মামলা করেছে সরকার পক্ষ। এসব মামলায় ৪৮শ’ এজহারভুক্ত আসামীসহ ৭৮ হাজার অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে জেলখানায় রয়েছে ২১০ জন আর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন ৫০৬ জন। অন্যদিকে জেলা বিএনপি দাবি করেছে এ সরকারের আমলে সাতক্ষীরায় বিএনপির বিরুদ্ধে কমপক্ষে ৯০টি মামলা দায়ের করেছে সরকার। সব মিলিয়ে ৩শ’ মামলায় এক লাখ পরিবারের ৫ লাখ সদস্য মামলা আতংকে।
হয়রানিমূলক মামলায় সাতক্ষীরা কারাগারে আটক রাখা হয়েছে জামায়াতের জেলা নায়েবে আমীর অধ্যাপক মইনুল হক, শ্যামনগর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জামায়াত নেতা গাজী নজরুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি সাবেক শিবিরের কেন্দ্রীয় তথ্য গবেষণা সম্পাদক আজিজুর রহমান, কালিগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমীর প্রভাষক মোসলে উদ্দীনসহ দুই শতাধিক।
জেলার ৭৮টি ইউনিয়নের ৮শ’ ইমাম এসব মামলায় আসামী হওয়ায় ঈদের নামাযে ইমামতি করতে পারছে না তারা। আলেম-ওলামাদের ওপর নগ্ন হামলা বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কেউ কখনো দেখেনি বলে তারা জানান। আলেমদের শিরোমণি হাফেজ রবিউল বাশারকে দু’টি হত্যা মামলাসহ ডজনখানিক মামলায় আসামী করা হয়েছে। সাবেক এমপি কাজী শামসুর রহমানের পুত্র হাফেজ কাজী সাইদুর রহমানকে মসজিদে প্রবেশকালে গ্রেফতার করে জেলখানায় আটকে রাখা হয়েছে। পাটকেলঘাটার আল আমিন মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দীন, একই মাদরাসার আরবি প্রভাষক বিশিষ্ট বক্তা মাওলানা রেজাউল করিমকে দীর্ঘদিন কারাগারে আটক রাখা হয়। আটক করা হয় একই থানার খলিশখালী দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মাসুম বিল্লাহ, পশ্চিমপাড়া বাজার মসজিদের ইমাম মাওলানা আহসান হাবিব, মাগুরা মসজিদের ইমাম মাওলানা কবিরুলকে। এসবের কারণে সাতক্ষীরার বেশির ভাগ মানুষ বর্তমান সরকারের কর্মকা-ে নাখোশ। প্রশাসনের কর্মকা-ের কারণে খোদ আ’লীগের অনেক নেতাই এখন এলাকায় কথা বলতে পারে না। সাতক্ষীরার অনেক এলাকাতে আ’লীগের ভাল কথা বললেই প্রতিবাদ জানায় সাধারণ রিকসাভ্যান শ্রমিক। এলাকাবাসী মনে করেন, সরকারের ইসলামবিরোধী কর্মকা-ের জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে জনসাধারণ। আগামী নির্বাচনে জেলার সবকটি আসনই ঘরে তুলবে ১৮ দলীয় জোট বলে মনে করেন স্থানীয় বিএনপি-জামায়াত নেতৃবৃন্দ। তাই আগামী নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয়ের আশংকায় আ’লীগ দিশেহারা হয়ে জামায়াতের জেলা পর্যায়ের সকল নেতা-কর্মীদের কারাগারে আটকে রেখে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জামায়াত জানান। জামায়াতের জেলা সেক্রেটারি নুরুল হুদা বলেন, হত্যা, খুন ও হামলা-মামলা করে সাতক্ষীরায় জামায়াতের রাজনীতি বন্ধ করা যাবে না। ইসলাম রক্ষার প্রয়োজনে যদি আরো নির্যাতনের শিকার হতে হয় তবে তাই করবে জনগণ। তিনি আরো বলেন, ১৩ জন শহীদের পর সাতক্ষীরার ২০ লাখ মানুষ জামায়াতের দিকে ঝুঁকছে। কোন ষড়যন্ত্র ইসলামী আন্দোলনের এ জয়কে ঠেকাতে পারবে না। তাই সময় থাকতে কেয়াটেকার সরকার ব্যবস্থা মেনে নেয়ার দাবি জানান তিনি।