প্রতিশ্রুতি পূরণের আশ্বাস ক্যামেরনের
স্বাধীনতা প্রশ্নে স্কটল্যান্ডের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ ঐতিহাসিক গণভোটে ‘না’ রায় দিয়েছে। ফলে তারা যুক্তরাজ্যের মধ্যে থেকে যাবে। গণভোটের আগে প্রচারণার সময় প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন স্কটল্যান্ডবাসীকে না ভোট দেওয়ার জন্য আকুল আবেদন জানিয়েছিলেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ওই অঞ্চলের জন্য অধিকতর ক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার। সেসব প্রতিশ্রুতির পূর্ণ বাস্তবায়ন করা হবে বলে শুক্রবার জানিয়েছেন তিনি।
স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দেওয়া স্কটদের উদ্দেশে ক্যামেরন বলেন, ‘আমি আপনাদের কথাও শুনেছি। যুক্তরাজ্যের লোকজন যে উপায়ে শাসিত হচ্ছে, তাতে পরিবর্তন আনার জন্য এটা একটা সুযোগ।’
স্বাধীনতার বিপক্ষে প্রচারাভিযানের নেতা অ্যালিস্টার ডার্লিং বলেছেন, স্কটল্যান্ডবাসী পরিবর্তন চেয়ে যে বার্তা দিয়েছেন, তা অবশ্যই শোনা হবে।
যুক্তরাজ্যের অখণ্ডতা রক্ষায় লন্ডন এখন স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতাকামী নেতাদের বিভিন্ন দাবি পূরণের ওপর গুরুত্ব দেবে। এই দাবির মধ্যে রয়েছে সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন, বিশেষ কিছু ক্ষমতা, স্থানীয় আয়কর ও রাজস্ব বিষয়ে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এবং কল্যাণমূলক খাতে ব্যাপক নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি।
যুক্তরাজ্যের শীর্ষ তিন রাজনৈতিক দল কনজারভেটিভ পার্টি, লেবার পার্টি এবং লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এডিনবরার কাছে অধিকতর ক্ষমতা হস্তান্তরে একমত হয়েছে। গণভোটের প্রচার কার্যক্রমের শেষ দিকে ওই তিন দলের নেতারা লিখিত অঙ্গীকার করেন, স্কটল্যান্ডের জনগণ স্বাধীনতার বিপক্ষে রায় দিলে তাদের আরও ব্যাপক ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।
স্কটল্যান্ডে সম্ভাব্য পরিবর্তনের লক্ষ্যে একটি সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন হাউস অব কমন্সে স্কটিশ আইনপ্রণেতা (এমপি) ও যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন। দেশটির সব দলই সেটি অনুমোদন করেছে। ওই সময়সীমা অনুযায়ী স্কটল্যান্ডে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যেই একটি আইনের (স্কটল্যান্ড অ্যাক্ট) খসড়া তৈরি করা হবে। পরে ভোটাভুটির জন্য তা হাউস অব কমন্সে উত্থাপন করা হবে। তবে যুক্তরাজ্যে আগামী বছরের মে মাসে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনের আগে আইনটি পাস হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
স্কটল্যান্ড, ওয়েলস এবং উত্তর আয়ারল্যান্ড বর্তমানে নিজ নিজ ভূখণ্ডের জনসংখ্যার ভিত্তিতে যুক্তরাজ্য সরকার থেকে রাষ্ট্রীয় অর্থ বরাদ্দ পেয়ে থাকে। এখন স্কটল্যান্ডকে আয়কর-সংক্রান্ত বাড়তি ক্ষমতা দেওয়া হলে বিষয়টি নিয়ে ওই তিন ভূখণ্ডের আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষের মধ্যে বড় ধরনের বিরোধ হতে পারে।
স্বাধীন স্কটল্যান্ড আন্দোলনের নেতা স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির (এসএনপি) প্রধান এবং স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার অ্যালেক্স স্যামন্ড রাজস্বের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের দাবি আদায়ে ছাড় দেবেন না। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনকে তাঁর প্রতিশ্রুতির প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের শীর্ষ দলগুলোকে অভ্যন্তরীণ নানা মতবিরোধ সত্ত্বেও অভিন্ন প্রস্তাব নিয়েই কাজ করতে হবে। আর স্কটল্যান্ডে বাড়তি ক্ষমতা হস্তান্তরের ফলে ওয়েলস এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের হাতেও আরও অধিকতর ক্ষমতা দেওয়ার দাবি উঠতে পারে।
যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী স্কটল্যান্ডের হাতে আরও ক্ষমতা দেওয়া হয় কি না, সেটিই এখন দেখার বিষয়। তবে তার জন্য লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার থেকে স্কটিশ পার্লামেন্টে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।