লন্ডনে বর্ণাঢ্য আয়োজনে পিঠা মেলা অনুষ্ঠিত
সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ: শনিবার বেলা ১২টায় লন্ডনের রিজেন্টস লেক ব্যাঙ্কুয়েটিং হলে ব্রিটেনের জনপ্রিয় বাংলা চ্যানেল-বাংলা টিভির উদ্যোগে বাঙালির চিরন্তন গ্রামীণ-নাগরিক- সংস্কৃতি ঐতিহ্যবাহী পিঠামেলার আয়োজন করা হয়। আর এই মেলা উদ্বোধন করেন টাওয়ার হ্যামলেটস বারার এক্সিকিউটিভ মেয়র লুতফুর রহমান। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের বিদায়ী হাই কমিশনার মিজারুল কায়েস।
মেলা উপলক্ষে রিজেন্টস লেকের এই বিশাল হলরুমে প্রবাসী বাঙালিদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। লন্ডন শহর, শহরতলী ও ব্রিটেনের বিভিন্ন শহর থেকে নানা বয়সের নারী পুরুষ মেলায় অংশ গ্রহণ করেন ও দিনব্যাপী এই মেলা থেকে হরেক রকমের পিঠা ক্রয় করেন। মেলার ফাকে ফাকে ছিলো পিঠা উৎসব নিয়ে বাংলা টিভির আয়োজনে আলোচনা, সঙ্গীতানুষ্ঠান, নাটক ও চিত্র প্রদর্শনীর। বিভিন্ন পর্বের অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে অংশ গ্রহণ করেন কবি লেখক শামীম আজাদ, বাংলা টিভির চেয়ারম্যান, পরিচালক ডঃ দিনাক সোহানী পিংকী, যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সভাপতি সুলতান শরীফ, সাধারণ সম্পাদক সাজিদুর রহমান ফারুক, আওয়ামীলীগ নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, নিউহ্যামের কাউন্সিলর রহিমা হক, ডকল্যান্ডস পারফর্মিং আর্টস এর প্রেসিডেন্ট স্মৃতি আজাদ, নিউট্রিশনিষ্ট আগুন সহমিকা সহ আরো অনেকে। পিঠা মেলায় আলোকচিত্রী হিসেবে ছবি তুলেছেন লিপি হালদার।
মেলায় হরেক রকমের পিঠা যেমন ভাপা পিঠা, ফুলি পিঠা, সন্দেশ ছাড়াও আরো অনেক বাহারি পিঠা স্টল নিয়ে বসেন প্রবাসী বাঙালি রমণীরা। এদের মধ্য থেকে দর্শকদের ভোট আর বিচারকদের চূড়ান্ত বিচারের মাধ্যমে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয় বিকেলে। স্টলগুলোর মধ্য থেকে পিঠা বানানোর পদ্ধতি, হাইজিন, আর মজাদার পিঠা ইত্যাদি বিবেচনায় প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন উম্মে রাবেয়া, দ্বিতীয় পুরস্কার মমতাজ শাজান, আর তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছেন মলি ফুয়াদ। বিজয়ীদের মধ্যে আকর্ষণীয় পুরস্কার প্রদান করেন বাংলা টিভির চেয়ারম্যান ও অতিথি বৃন্দ।
সব মিলিয়ে অনুষ্ঠানটি ছিলো পুরো বাঙ্গালিয়ানায় পরিপূর্ণ। দেশের গান আর কবিতা আবৃত্তি, কৌতুক আর নাট্যাভিনয় ছিলো মনোমুগ্ধকর- যা দর্শকদের প্রচুর আনন্দ দিয়েছে। বাংলা টিভি প্রতিবছরই এধরনের উৎসবের আয়োজন করে থাকে। দর্শকেরা বলছেন এবারের পিঠা মেলা আগের যেকোন সময়ের তুলনায় এবারের অনুষ্ঠান ছিলো ব্যতিক্রম ধর্মী এবং অনেক বড় ধরনের আয়োজন। রিজেন্টস লেকের নীচের ফ্লোর এবং উপরের ফ্লোর উপচে পড়া মানুষের ভিড় লক্ষ করা গেছে। অনুষ্ঠান যখন শেষ হয়েছিলো তখনো লোকজন আসছিলেন।
রিজেন্টস লেকের দ্বিতীয় তলাতে ছিলো কালচারাল প্রোগ্রাম, নীচের তলাতে বিশাল স্ক্রিনের মাধ্যমে দর্শককে দেখানোর ব্যবস্থা ছিলো চোখে পড়ার মতো।
এবারের বিচারকদের আসনে একজন শেফও ছিলেন, তার নাম এম এ রহিম। অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, বাঙালির এই চিরন্তন ঐতিহ্য পিঠা নগর জীবনের আধুনিকতার ছোঁয়া আর পিজ্জা ও ফার্স্ট ফুডের ভিড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে। শেফ এম এ রহিম আরো বলেন, ক্যাটারার্স শেফ এসোসিয়েশনের মাধ্যমে তিনি আজকের এই অনুষ্ঠানের নানা ঐতিহ্যবাহী পিঠাসমূহ এবং আমাদের শ্বাসত গ্রামীন জনপদে যে সব পিঠার প্রচলন রয়েছে, সবগুলো পিঠা তারা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করবেন। মুহুর্মুহু করতালি আর অন্যান্য বিচারকদের ধন্যবাদের মাধ্যমে শেফ রহিমের বক্তব্য বিপুলভাবে সমাদৃত হয়।
অনেক প্রবাসী ইউরোপের বিভিন্ন শহর থেকেও পরিবার পরিজন নিয়ে এসেছিলেন। ছিলেন ব্রিটিশ মূলধারার অনেক সেলেব্রিটি ও রাজনীতিবিদও। সকলেই বাংলা টিভির এই আয়োজনের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
মেলার বিচারক হিসেবে যারা ছিলেন তারা হলেন ক্যাটারার এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল এম এ মুনিম, শহমিকা আগুন, স্মৃতি আজাদ, শামীম আজাদ, সাঈদা চৌধুরী, হূসনা মতিন, শায়লা সিমি, মোজাহিদুল চৌধুর।