বিক্ষিপ্ত পিকেটিংয়ে ২০ দলীয় জোটের হরতাল
রাজধানীসহ সারাদেশে বিক্ষিপ্ত মিছিল-পিকেটিং, গাড়ি ভাংচুর, ককটেল বিস্ফোরণ ও সড়ক অবরোধে চলছে ২০ দলীয় জোটের সকাল-সন্ধ্যা হরতাল। হরতালের সমর্থনে রাস্তায় নামতে পারছে না পিকেটাররা। পিকেটিংয়ের প্রস্তুতি নেয়ার সময় অথবা ঝটিকা মিছিলে ধাওয়া দিয়ে বিএনপি জোটের নেতাকর্মীদের ব্যাপক ধরপাকড় করা হচ্ছে।
বিচারপতিদের অভিশংসন সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর প্রতিবাদে আজ সোমবার সারাদেশে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট সকাল-সন্ধ্যার এ হরতাল আহ্বান করে।
সোমবার সকাল পৌনে ৮টায় হরতালের সমর্থনে রাজধানীর শাহবাগে মিছিল করেছে ছাত্রদল। এসময় পুলিশ তাদের ধাওয়া দিলে কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে তারা। এতে উভয় পক্ষে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এছাড়া রাজধানীর পান্থপথ, পুরানা পল্টন, ফার্মগেট ও সেগুনবাগিচায় মিছিল করেছে ছাত্রদল ও বিএনপি কর্মীরা। দুপুরে রাজধানীর বেইলী রোডে মিছিল করেন ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী সোহেল।
পুরানা পল্টনে মিছিলে ধাওয়া দিয়ে এক পিকেটারকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রদলের মিছিলে ধাওয়া দিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয়। এসময় তিনজনকে আটক করে পুলিশ।
এদিকে হরতালকে কেন্দ্র করে বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে রেখেছে কয়েক প্লাটুন পুলিশ। হরতাল শুরুর প্রাক্কালে কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থান নিয়েছে দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া আগে থেকে অবস্থান নিয়েছেন যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান।
তিনি সাংবাদিকদের এক ব্রিফিংয়ে বিচারপতিদের অভিশংসন সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিল সংসদে পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠাতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেটের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এছাড়া তিনি শান্তিপূর্ণ হরতালে বিভিন্ন স্থানে ২০ দলীয় জোটের মিছিলে ধাওয়া ও পিকের্টিংয়ে বাধাসহ নেতাকর্মীদের আটকের প্রতিবাদ ও শান্তিপূর্ণ হরতালে নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের হামলা-আটকের নিন্দা জানান।
হরতালকে ঘিরে রাজধানীতে ব্যাপক নিরাপত্তা বেষ্টনি গড়ে তোলা হয়েছে। প্রতিটি মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন ছাড়াও সাদা পোশাকে নিয়োজিত রয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনী। এছাড়া, বিজিবি, পুলিশ ও র্যাবের টহল রয়েছে। ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা যাতে সড়কে পিকেটিংয়ে নামতে না পারে সেজন্য ২০ থেকে ৩০ গজের সীমানা পর পর পুলিশের অবস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে।
এদিকে রাজধানীতে হরতালে গণপরিবহণ চলাচল অন্যান্য দিনের চেয়ে একেবারে কম। ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল বন্ধ। ঢাকা থেকে বাইরে এবং বাইরে থেকে ঢাকায় দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে এ যানগুলোতে যাত্রী কম থাকায় সময় মতো তা ছেড়ে যাচ্ছে না।
এদিকে রাজধানীর বাইরে হরতালের চিত্র সম্পূর্ন ভিন্ন। রাজধানীর বাইরের জেলাগুলোতে হরতালে জনজীবন প্রায় অচল বলে আমাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছে। চাঁদপুরে গাছ ফেলে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীারা। এছাড়া পুলিশের কড়াকড়িতেও তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাজশাহী, খুলনা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লাসহ বেশ কয়েকটি জেলায় হরতালের সমর্থনে মিছিল করেছে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। স্থানীয়ভাবে কিছু রিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ছাড়া এসব জেলায় সবধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ।
এছাড়া পিকেটিংকালে, পিকেটিংয়ের প্রস্তুতি নেয়ার সময় এবং মিছিলে ধাওয়া দিয়ে সাতক্ষীরায় ১৬, মাগুরায় ১৫, কুষ্টিয়ায় ৪৬, চাঁদপুর ৫, ও মেহেরপুরে ৭ জনসহ বিভিন্ন জেলায় বিএনপি জোটের নেতাকর্মীদের ব্যাপক আটক করার খবর পাওয়া গেছে।
অপরদিকে হরতালের পিকেটিংয়ের সময় সিলেটে ছাত্রদলের দুই গ্রুপে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সমাবেশ থাকায় ওই জেলায় হরতাল প্রত্যাহার করেছে বিএনপিসহ স্থানীয় ২০ দলীয় জোট।