সাঈদীর রায়ের রিভিউ চান ক্যাডম্যান

Cadmanআন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আলেমে দ্বীন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আমৃত্যু কারাদন্ড স্থগিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার টবি ক্যাডম্যান। তিনি বলেন, স্বচ্ছ ও সঠিক বিচারের স্বার্থে আন্তর্জাতিকভাবে নিযুক্ত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালতের মাধ্যমে এই সাজার রিভিউ করতে হবে। তিনি আন্তর্জাতিক কমিউনিটি বিশেষ করে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিশনকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান, যেন বিশেষ প্রক্রিয়ায় সাঈদীর মামলার সঠিকভাবে রিভিউ করার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার অগ্রাধিকার হিসেবে নিতে পারে।
গত সোমবার ইস্ট লন্ডনের একটি রেস্টুরেন্টে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আন্তর্জাতিক ডিফেন্স টিম আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা, ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম।
১৭ সেপ্টেম্বর আল্লামা সাঈদীর আপিল নিয়ে আমৃত্যু কারাদান্ডের রায় দেন সুপ্রিমকোর্ট। এর আগে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ৮টি অভিযোগে অভিযুক্ত করে এবং ২টিতে মৃত্যুদন্ড দেয়।
সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, বিচারের ব্যাপারে সরকারের নানা ধরনের হস্তক্ষেপ ও  অসদাচরণ নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে নিন্দা জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, শুনানিকালে ডিফেন্স পক্ষ থেকে বলা হয়, আল্লামা সাঈদী ১৯৭১ সালের ৮ মে পারেরহাটের ইব্রাহিম কুট্টির অপহরণ ও হত্যার সাথে জড়িত না থাকার পক্ষে দেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল ট্রাইব্যুনাল বিবেচনা করেনি। এ ব্যাপারে ইব্রাহিম কুট্টির বিধবা স্ত্রী মমতাজ বেগমের দেয়া এফআইআর ও চার্জশিটের সার্টিফাইড কপিও জমা দেয়া হয়। মমতাজ বেগমের দেয়া এফআইআর এ পাকিস্তানী সৈন্য কর্তৃক তার স্বামী হত্যার কথা উল্লেখ করে। সেখানে সাঈদীর কোনো কথা উল্লেখ করা নেই।
তিনি বলেন, প্রসিকিউশন এ ঘটনা প্রমাণ করার জন্য সাক্ষী এনেছে। কিন্তু মমতাজ বেগম জীবিত থাকার পরও তাকে সাক্ষী হিসেবে ডাকেনি প্রসিকিউশন। বরং ডিফেন্স পক্ষ থেকে তাকে আনার আবেদনও প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এর রেকর্ড তলব করার ব্যাপারে ডিফেন্স পক্ষের আবেদন নাকচ করে দেয় সুপ্রিমকোর্ট।
টবি বলেন, সাঈদীর মামলার বিষয়ে ডিফেন্স পক্ষ সুখরঞ্জনবালীর ভিডিও সাক্ষাতকারসহ অন্যান্য ডক্যুমেন্ট জমা দিয়েছিল। এর সাথে ট্রাইব্যুনালের প্রাঙ্গণ থেকে বালীর অপহরণ নিয়ে ডকুম্যান্টও দাখিল করা হয়েছিল। তার অপহরণ নিয়ে জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও আইনী সংস্থা নিন্দা জানিয়েছিল।
টবি আরো বলেন, বালী ছিল প্রসিকিউশনের সাক্ষী। তাকে ডিফেন্স পক্ষ থেকে ডাকা হয়েছিল এই ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য যে, তার ভাই বিশাবালী সাঈদী ছাড়া অন্য কারো দ্বারা নিহত হয়েছে এবং তদন্ত সংস্থা কর্তৃক দাখিলকৃত তার জবানবন্দী ভুয়া ছিল। ২০১২ সালের ৫ নবেম্বর সে ট্রাইব্যুনালের অঙ্গন থেকে আইনশৃংখলা বাহিনী কর্তৃক অপহৃত হয়। সে দীর্ঘ সময় তাদের হাতে আটক ছিল, সেখানে তাকে নির্যাতন করা হয়, পরবর্তীতে তাকে ভারতের সীমান্তের ওপারে ঠেলে দেয়া হয়।
এই মামলার শুনানির সময়ই ট্রাইব্যুনালের বিচারক, প্রসিকিউটর ও সরকার পক্ষের যোগসাজশ নিয়ে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে দ্যা ইকনোমিস্ট পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আইনী বিধান অনুযায়ী সর্বোচ্চ সাজা দেয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। এ ব্যাপারে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক কনভেনশনে সুরক্ষা দেয়া আছে। বাংলাদেশ এই কনভেনশনে অনুস্বাক্ষর করেছে। সাঈদীর সর্বোচ্চ সাজা দেয়ার ক্ষেত্রে এর যথাযথ অনুসরণ করা হয়নি।
তিনি বলেন, সুপ্রিমকোর্ট মৃত্যুদন্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়েছে। পাশাপাশি তার স্বাভাবিক মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত কারাদন্ডে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বাংলাদেশী আইনে এ ধরনের সাজা হয় না। এটা আইন সিদ্ধ নয়। এতে সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণের ব্যতয় ঘটেছে।
তিনি বলেন, গত ১৮ সেপ্টেম্বর ইউরোপীয় পার্লামেন্ট কর্তৃক নেয়া রেজ্যুলেশনেও সুস্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গুমের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠনের কথাও বলা আছে। কিন্তু এখনও তা করা হয়নি। (`Emphasises the importance of an independent and impartial and accessible judicial system to enhance respect for the rule of law and for the fundamental rights of the population, and of reforming the international crimes tribunal’.)
আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আলেমে দ্বীন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আমৃত্যু কারাদ- স্থগিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এই আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার টবি ক্যাডম্যান। তিনি বলেন, স্বচ্ছ ও সঠিক বিচারের স্বার্থে আন্তর্জাতিকভাবে নিযুক্ত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালতের মাধ্যমে এই সাজার রিভিউ করতে হবে। তিনি আন্তর্জাতিক কমিউনিটি বিশেষ করে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিশনকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান, যেন বিশেষ প্রক্রিয়ায় সাঈদীর মামলার সঠিকভাবে রিভিউ করার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার অগ্রাধিকার হিসেবে নিতে পারে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button