গ্রেফতারে ভয় পাই না : খালেদা জিয়া
সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, সরকার বিভিন্ন মামলা দিয়ে আমাকে গ্রেফতারের ষড়যন্ত্র করছে। মামলা, গ্রেফতার করে আন্দোলন দমানো যাবে না।
মঙ্গলবার বিকেল সোয়া ৫টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিয়াজ মুহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিসি এসব কথা বলেন।
খালেদা জিয়া বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময়ও আমাকে গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে দেশ ছাড়ার কথা বলা হয়েছিলো। কিন্তু আমি দেশ ছেড়ে যাইনি। এখনো গ্রেফতারে ভয় পাই না।তিনি বলেন,আমাকে জেলে নেয়ার ষড়যন্ত্র করছেন? আমি জেলে যাওয়ার ভয় পাই না।কিন্তু পরবর্তীর কথা একবার ভেবে দেখেন। আমার কাছে সব দুর্নীতির নথিপত্র আছে। তখন আপনাদের অবস্থা কি হবে।
খালেদা জিয়া বলেন, হাসিনা মামলা দিয়ে আমাকে ভয় দেখাতে চায়। হাসিনা আমি ভয় পাই না। হাসিনা বহু অপরাধ করেছে। তার দলের লোকেরা বহু অপরাধ করেছে। তাদের বিচার হয় না। উল্টো আমার দলের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।
সংবিধান সংশোধনের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করতেই এ সংশোধনী। ফলে সরকার যা বলবে সেভাবেই রায় দিতে হবে। সংবিধানের নতুন সংশোধনীর ফলে এখন বিচার বিভাগকে ভয় দেখিয়ে সরকার রায় করাবে। সরকারের পছন্দমতো রায় না দিলে এই আইনে তাঁদের অপসারণ করবে। বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করতেই সংসদে আইন করা হচ্ছে।
জনগণের ভোটবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থেকে নতুন নতুন আইন পাশ করে সরকার নিজেই আইন লঙ্ঘন করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সরকার দেশের মানুষকে কিছুই দিতে পারেনি। হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করে। খুনী সরকারের ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই।খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ হলো হাটি হাটি খাই খাই-যা পাই তাই খাই। এটাই হলো আওয়ামী লীগ।
বিএনপি চেয়ারপার্সন অভিযোগ করেন, লুটপাট করার জন্য এই সরকার দেশের কারখানা বন্ধ করে বিদেশ থেকে সার আমদানি করে। এরা বিদ্যুৎখাতে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছে। দুর্নীতির মাধ্যমে শেয়ার বাজার ও ব্যাংক ধ্বংস করে দিয়েছে।
তিনি হাসিনার সমালোচনা করে বলেন, হাসিনা ৮৬ সালে বিক্রি হয়েছিলেন এরশাদের কাছে। এরশাদের কাছে টাকা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জাতির সাথে বেঈমানী করে স্বৈরাচারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। আপনি জাতির কাছে জাতীয় বেঈমান হিসেবে পরিচিত।
খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি র্যাব গঠন করেছিল সন্ত্রাস দমন করতে। কিন্তু বর্তমান সরকার বিরোধী দল-মতকে দমনে এখন র্যাবকে ব্যবহার করা হচ্ছে। সাত খুনের ঘটনা হাসিনা জানতেন। নারায়ণগঞ্জের এই খুনের ঘটনার সাথে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জড়িত। এ সময় তিনি র্যাব বিলুপ্তির দাবি জানান।
তিনি আরো বলেন, মানুষের ভোটে এই সরকার ক্ষমতায় আসেনি। এজন্য দেশের মানুষের কথা তারা চিন্তা করে না।তিনি সরকার পতনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহবান জানিয়ে বলেন, একদিন হরতাল দিয়েছি। সময় আছে সংলাপে বসুন। অন্যথায় এমন কর্মসূচি দেবো সরকার পালাবার পথ পাবে না।
জনসভার সভাপতিত্ব করেন- জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও পৌর বিএনপির সভাপতি এডভোকেট শফিকুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া, ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় ভাইস-চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত আমিনী, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিরুল ইসলাম খান আলীম, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব জহিরুল হক খোকন, যুগ্ম-আহ্বায়ক খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল, জিল্লুর রহমান, এডভোকেট শফিকুল ইসলাম, রফিকুল হক, এডভোকেট গোলাম সারোয়ার খোকন, সিরাজুল ইসলাম, খেলাফত মজলিসের জেলা নেতা হাফেজ মাওলানা এমদাদুল্লাহ, মাওলানা মোহাম্মদ আলী ও ইসলামী ঐক্যজোটের জেলা সেক্রেটারি হাফেজ ইদ্রিস প্রমুখ।
খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গীদের মধ্যে রয়েছেন- বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান, অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা আবদুস সালাম, খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা সমন্বয়কারী মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে ইলাহি আকবর, সাবেক মহিলা সংসদ সদস্য রেহেনা আক্তার রানু, সাবেক ছাত্রদল নেতা কামরুজ্জামান রতন, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান প্রমুখ।