ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ই-কমার্স মেলা

Ecomm Fairক্লিকের ছোঁয়ায় বাণিজ্য’ স্লোগান নিয়ে আগামী ২৫, ২৬ ও ২৭ সেপ্টেম্বর বেগম সুফিয়া কামাল পাবলিক লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, ঢাকা ‘ই-কমার্স ফেয়ার ২০১৪’। এ উপলক্ষে মেলার আয়োজক ‘কমপিউটার জগৎ’ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি হলে ২৩ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনে আয়োজকরা মেলার বিভিন্ন বিষয় গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেন। মেলা ২৫ সেপ্টেম্বর সকাল ১০.০০ উদ্বোধন করবেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, এমপি।
মেলার আহবায়ক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল, উপস্থিত সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, ‘কমপিউটার জগৎ বাংলাদেশের আইসিটি খাতের উন্নয়নে দীর্ঘদিন ধরে নানা উদ্যোগ হাতে নিয়ে এসেছে। ই-কমার্স খাতের প্রসারে আমরা ২০১৩ সাল থেকে ই-কমার্স মেলার আয়োজন করে আসছি। ঢাকা ই-কমার্স ফেয়ার ২০১৪-তে আমরা একটি ই-কমার্স ডিরেক্টরি প্রকাশ করতে যাচ্ছি। বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতের সাথে সংলশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তথ্য এ ডিরেক্টরিতে থাকবে এবং ই-কমার্স উপর দেশে এটাই প্রথম ডিরেক্টরি। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা স্বত্বেও আমরা এ ডিরেক্টরিটি তৈরি করতে পেরেছি। আমরা খুবই আশাবাদী যে, এ ডিরেক্টরি বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতের বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
কমপিউটার জগৎ-এর সহকারী সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল হক বলেন, ‘ই-কমার্স বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিগত কয়েক বছরের ঈদগুলোতে অনলাইন কেনাকাটা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে এবং এবারের রমযানের ঈদেও শতকোটি টাকার অনলাইন কেনাকাটা হয়েছে। এ বিষয়ে এখন আর কোন সন্দেহ নেই, সঠিক সরকারি সহযোগিতা, পৃষ্ঠপোষকতা এবং দিক নির্দেশনা পেলে তৈরি পোশাক খাতের মতো ই-কমার্সও খুব বড় একটি অর্থনৈতিক খাত হয়ে উঠবে, যা দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং হাজার হাজার শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের কাজের সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশের তরুণ সমাজই হচ্ছে ই-কমার্স খাতের প্রাণ। বর্তমানে যেসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে রয়েছে তাদের বেশিরভাগেই তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠিত। কমপিউটার জগৎ ই-কমার্স মেলা আয়োজনের মাধ্যমে এসব তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রচেষ্টাকে সকলের সামনে তুলে ধরতে চায়। একই সাথে সরকারসহ সংশিস্নষ্ট প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়ে তোলা, যাতে এ খাত আরও দ্রুত গতিশীল প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে।’
এখানেই ডটকমের পরিচালক আরিল্ড ক্লোক্করহৌগ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্যে ই-কমার্স সেক্টরের গুরুত্ব অপরিসীম। ই-কমার্স মেলার মতো একটি ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ নেবার জন্যে আমি কমপিউটার জগৎকে ধন্যবাদ জানাই।’ তিনি বলেন যে, বাংলাদেশে ই-কমার্স সেক্টর খুবই দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাবে।
জাতীয় মহিলা সংস্থার, তথ্য আপা প্রকল্পের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মীনা পারভীন বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষকে ই-কমার্সের ব্যপারে সচেতন করার জন্যে ই-কমার্স ফেয়ার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জাতীয় মহিলা সংস্থা নারীদের ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নের জন্যে কাজ করে যাচ্ছে। নারী উদ্যোক্তাদের জন্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে উৎপাদিত পণ্য এবং সেবার বাজারজাতকরণ। এক্ষেত্রে ই-কমার্স বিশাল ভূমিকা পালন করতে পারে।’
আড়ং-এর সিওও, মোহাম্মদ আব্দুর রউফ বলেন,‘বাংলাদেশে ই-কমার্স সেক্টরের ভবিষ্যত খুবই উজ্জ্বল এবং ই-কমার্সের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পেরে আড়ং এবারে ঈদ-উল-ফিতর থেকে তাদের ই-কমার্স ওয়েবসাইট চালু করেছে। প্রথম দিন থেকেই আড়ং আশাতীত সাড়া পেয়েছে বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশীদের কাছ থেকে। যারা এ খাতে সেবা দিচ্ছে তাদের উচিত ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করা।’
ই-কমার্স ভিত্তিক ব্লগ, ইকম বিডি ডটনেটের সম্পাদক রাজিব আহমেদ বলেন, ‘ই-কমার্সের আশীর্বাদ গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে হবে। এটা বাংলাদেশের ই-কমার্স সেক্টরের জন্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’
এবারের মেলাতে আরও বেশি সংখ্যক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য এবং সেবাসমূহ প্রদর্শন করবে। এছাড়াও মেলাতে থাকছে একটি গিগাবাইট গেমিং জোন। এসবের পাশাপাশি মেলাতে সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।
তিনদিন ব্যাপী এ ই-কমার্স মেলার তত্ত্বাবধানে রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিক লাইব্রেরি। এ মেলার প্ল্যাটিনাম স্পন্সর হচ্ছে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ক্লাসিফায়েড ওয়েবসাইট এখানেই ডটকম এবং তথ্যআপা। টিম ইঞ্জিন এবং ওয়েব টিভি নেক্সট এ মেলার গোল্ড স্পন্সর এবং আড়ং সিলভার স্পন্সর।
মেলার পার্টনার হিসেবে রয়েছে দ্যা ডেইলি স্টার, জাতীয় মহিলা সংস্থা এবং গিগাবাইট। এছাড়াও সিকিউরিটি পার্টনার অ্যাভিরা, অ্যাডভার্টাইজমেন্ট পার্টনার গ্রীন অ্যান্ড রেড টেকনোলজিস, ইন্টারনেট পার্টনার ঢাকাকম লিমিটেড, টিভি পার্টনার একাত্তর টিভি, রেডিও পার্টনার ঢাকা এফএম, ওয়বে পার্টনার বাংলানিউজ২৪.কম, ব্লগ পার্টনার সামহোয়্যার ইন ব্লগ, কুয়িরার পার্টনার সোনার কুয়িরার, অনলাইন প্রমোশন পার্টনার ইনফিনিট আউটপুট, লজিস্টিক পার্টনার ধ্রুবতারা, নলেজ পার্টনার বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক, অ্যাপস পার্টনার রেভারী কর্পোরেশন।
এই মেলায় ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুর ৩ টায় জাতীয় মহিলার সংস্থার আয়োজনে তথ্যআপা প্রকল্প ও তার ওয়েবসাইট আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে।
এছাড়াও ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় মেলা প্রাঙ্গনের অডিটোরিয়ামে অ্যাওয়ার্ড নাইটের আয়োজন করা হয়েছে। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের ২০১৩ সালে আইটি/আইটিইএস খাতে বিশেষ অবদানের জন্য ১৬ জন ব্যক্তিকে কমপিউটার জগৎ-এর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা প্রদান করা হবে।
এই মেলায় থাকছে ৬টি সেমিনার। ‘Electronic Banking Services paved theway for E-commerce in the Country’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজক বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘Local E-commerce and Upcoming Bangladesh Market’ আয়োজক জি অ্যান্ড আর। ‘The Progress of Mobile Apps and Games in Bangladesh’ আয়োজক রেভারী কর্পোরেশন লিমিটেড। বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক আয়োজন করেছে ‘ই-বাণিজ্য শুরু ও চালিয়ে যাওয়া।’‘ICT for Youth Entrepreneurship & Innovation’ আয়োজক ধ্রুবতারা এবং ‘ই-কমার্সের সফল ভবিষ্যতের জন্য বর্তমান বাংলাদেশের প্রস্ত্ততি-আমরা কোথায়?’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজক এসএসএল কমার্স।
যেসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান মেলাতে অংশগ্রহণ করছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য রয়েছে এখানেই ডটকম, তথ্যআপা, আড়ং, বাংলাদেশ ব্যাংক, এসএসএল কমার্স, ব্যাংক এশিয়া, ই-সুফিয়ানা, সূর্যমুখী ডটকম, যেমনখুশী ডটকম, সোনার কুরিয়ার সার্ভিস লিঃ, দ্যা কোডেরো লিঃ, সেমিকন প্রাইভেট লিঃ, বাসবিডি ডটকম, সহজ ডটকম, মাইক্রোপার্টস ইউএসএ লিঃ, টি-জোন, অ্যাভিরা, আপনজোন, রেভারি কর্পোরেশন, ধ্রুবতারা, বিডিওএসএন, অধুনা, অনলাইন কেনাকাটা, অপ্সরা ডটকম, এটসেট্রা, নিজোল ক্রিয়েটিভ, বিজয় ডিজিটাল, শপিং২৪বিডি ডটকম, উৎসববিডি, ক্রাফটিক আর্ট, ইয়োরট্রিপমেট, ইনপেস বাজার ডটকম, নুফা এন্টারটেইনমেন্ট ঢাকা পিক্সেল এবং টেক ওয়ার্ল্ড।
ঢাকা ই-কমার্স মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত। প্রতিদিন সকাল ১০.০০ টা থেকে সন্ধ্যা ৮.০০ পর্যন্ত চলবে। মেলার সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য জানতে ভিজিট করুন : e-commercefair.com।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button