অস্ত্র তৈরিতে নয় শিক্ষায় বিনিয়োগ করুন
বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অস্ত্র তৈরিতে নয়, শিক্ষার জন্য বিনিয়োগ করুন। তাতেই বিশ্ব একটি শান্তির সংস্কৃতি পাবে। তিনি বলেন, ২০৩১ সালের মধ্যে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করে ১২ কোটি তরুণ ও কর্মঠ কর্মশক্তি নিশ্চিত করবে বাংলাদেশ। বুধবার জাতিসংঘে ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিল হলে আয়োজিত ‘গ্লোবাল এডুকেশন ফার্স্ট ইনিশিয়েটিভ’ শীর্ষক হাই লেভেল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।
এবারের প্রতিপ্রাদ্য ছিল ‘বিশ্বের জন্য আমরা মানসম্পন্ন শিক্ষা চাই’। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এর উদ্যোগ এবং ২০১৫ উত্তর সময়ে তার অগ্রাধিকারগুলোর বিষয় উল্লেখ করা হয়।
উচ্চ পর্যায়ের এ আলোচনায় মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন। আলোচনায় অংশ নেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম, ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভো জোসিপভিক, তিউনিশিয়ার প্রেসিডেন্ট মুনসিফ মারজুকি, ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী হেলে থরনিং ও গায়ানার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড রামোটার। এসময় দর্শক সারিতে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা।
বিশ্ব নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, সম্পদের জন্য গ্লোবাল এডুকেশন ফার্স্ট ইনেশিয়েটিভের এ ফোরামে আমাদের অবশ্যই একটি বিশ্ব অংশীদারিত্বমূলক ও সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে পৌছতে হবে। আজ গোটা বিশ্বে যুদ্ধাস্ত্র তৈরির যে ব্যয়, তা আমাদের শিক্ষাসামগ্রী উৎপাদনের দিকে ঘুরিয়ে দিতে হবে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দেও প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আসুন আমরা সবাই মানসম্পন্ন শিক্ষার জন্য বিনিয়োগ করি, যা আমাদের একটি অসহিংস শান্তির সংস্কৃতি উপহার দেবে। তিনি বলেন, একমাত্র শান্তিই পারে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাজায় যা ঘটছে, তা বিশ্ব শান্তি বিঘ্নিত করছে এবং তা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। আমি বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে গাজায় শান্তি ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, একটি নিম্নআয়ের দেশে মানসম্পন্ন শিক্ষা পেতে হলে পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ নিশ্চিত করতে হবে। আর তার পাঠক্রম হতে হবে সমসাময়িক সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কেবল ২০১৩ সালেই তার সরকার সারা দেশে ৩১ কোটি ৮০ লাখ কপি পাঠ্যপুস্তক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করেছে। তিনি বলেন, মানসম্পন্ন শিক্ষার জন্য প্রথমেই চাই মানসম্পন্ন শিক্ষক। আমার সরকার প্রায় এক মিলিয়ন মাধ্যমিক শিক্ষককে মানসম্পন্ন শিক্ষকতার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছে। তারা শিখেছেন আধুনিক শিক্ষণ পদ্ধতি। শিক্ষকদের যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতা যাচাইয়ে নেয়া হয়েছে নিয়মিত মূল্যায়ন কর্মসূচি। প্রধানমন্ত্রী জানান, তার সরকার প্রাথমিকে ৬০ শতাংশ শিক্ষক নিচ্ছে নারীদের থেকে।
শেখ হাসিনা বলেন, নতুন একটি জাতীয় পাঠক্রম আর সৃজনশীল পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায়। ধর্মভিত্তিক মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায়ও সংস্কার আনা হয়েছে যাতে তারা মূলধারার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির ওপর জ্ঞানলাভ করতে পারে। বাংলাদেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাক্রমে তথ্যপ্রযুক্তির জ্ঞানকে বাধ্যতামূলক করে দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে আমরা প্রযুক্তিনির্ভর সমাজ গড়তে শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি আইসিটি মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন করছি।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের দুপুরে বিনামূল্যে খাবার দেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, একটি যত্মশীল শিশুশিক্ষা ব্যবস্থা মানসম্পন্ন শিক্ষার থেকে চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশ প্রাথমিক স্কুলগুলোতেই বিনামূল্যে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেনি চালু করা হয়েছে। তিনি জানান, ২০১৩ সালে তার সরকার ১ কোটি ২০ লাখ মেধাবী শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিয়েছে। মাধ্যমিক থেকে স্নাতক স্তর পর্যন্ত দেয়া এই বৃত্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা গ্রহণ অব্যাহত রাখতে পেরেছে। আর এ বৃত্তির মধ্যে ৭৫ শতাংশই দেয়া হয়েছে মেয়ে শিক্ষার্থীদের।
শেখ হাসিনা জানান, বাংলাদেশে মূলধারা, মাদ্রাসা ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে ৭ কোটি তরুণ শিক্ষার্থীদের একটি সমন্বিত একক শিক্ষা পদ্ধতির আওতায় আনার লক্ষ্যে একটি নতুন আইন প্রণয়নের কাজ চলছে। তিনি বলেন, আমাদের মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে আরও সুযোগ ও সম্পদের প্রয়োজন। চলতি অর্থবছরে সরকার জাতীয় বাজেটের ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশই বরাদ্দ দিয়েছে শিক্ষা খাতে।