ব্রিকস ব্যাংক : বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন সংযোজন

Bricsআবুল কাসেম হায়দার
বিশ্ব ব্যাংকের আদলে ব্রিকস ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে। উদীয়মান পাঁচ অর্থনীতির দেশ ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার জোট ‘ব্রিকস ব্যাংক’ নামে পরিচিত। এই জোট ২০১৪ সালের ১৫-১৭ জুলাই ব্রাজিলের ফোর্টালেজা সিটিতে তাদের ষষ্ঠ সম্মেলনের আয়োজন করে।ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফি জার্মান দলের ক্যাপ্টেন ফিলিপ লামের হাতে তুলে দিয়ে দ্রুতই রিয়ো দো জনেরোর মারাকানা স্টেডিয়াম ছাড়েন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দিলমা রোসেফ। ব্রাজিলের নগরীগুলোতে তখনও বিশ্বকাপের রেশ কাটেনি। প্রেসিডেন্ট রোসেফের গন্তব্য আটলান্টিক মহাাসগর তীরবর্তী ব্রাজিলের অপর মনোরম নগরী ফোর্টালেজা। সেখানে আসছেন বর্তমান বিশ্বের চারজন তারকা নেতা। চীনের প্রেসিডেন্ট ঝি জিনপিং, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা। যোগ দেবেন ব্রিকস সামিটে। ব্রিকস, বিআরআইসিএস। ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া, চায়না ও সাউথ আফ্রিকা এই পাঁচটি দেশের নামের আদ্যাক্ষর দিয়ে তৈরি। ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ জিম ও নেইল বিশ্ব অর্থনৈতিক ক্ষমতা জি-৭ থেকে ব্রিক্স এর হাতে চলে যাবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন ২০০১ সালে। সে হিসেবে জিমই ব্রিঙের স্বপ্নদ্রষ্টা। তখনও অপেক্ষাকৃত ছোট অর্থনীতি দক্ষিণ আফ্রিকা এ বিবেচনায় ছিল না।নিউইয়র্কে ২০০৬ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে এসে ব্রিকের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা জোট বাধার বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। তাদের লক্ষ্য ছিল, একটি শান্তিপূর্ণ  সুষম ও স্থিতিশীল বিশ্ব প্রতিষ্ঠার উপায়  বের করা। দেশগুলো আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের আচার আচরণে ত্যক্ত-বিরক্ত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং বিশ্ব আর্থ সামাজিক ব্যবস্থায় সমতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্ম হয়। কিন্তু এগুলোতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর স্বাধীন মত প্রকাশ এবং তা গৃহীত হওয়ার সুযোগ নেই। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে এক দেশ এক ভোটের পরিবর্তে বার্ষিক চাঁদার ওপর ভোটের সংখ্যা নির্ধারিত হয়। বিশ্ব জিডিপির এক পঞ্চমাংশের মালিক যুক্তরাষ্ট্র। তাই দেশটির চাঁদা বেশি। ভোটও সবচেয়ে বেশি। আইএমএফে ব্রিকের সম্মিলিত ভোট ১১.০৩ শতাংশ। আর যুক্তরাষ্ট্রের একারই ১৬.৭৫ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানগুলোর নীতি নির্ধারণী ইস্যুগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের মতামতই আসল। দেশটির ভেটো প্রদানের ক্ষমতা আছে। তাই গত দেড় যুগ ধরেই ব্রিকস জোট ও দক্ষিণ আমেরিকার সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর এসব অগণতান্ত্রিক পদ্ধতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছে। তারা প্রতিটি বৈঠক সম্মেলনেই প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের কথা বলে।  প্রতিশ্রুতিও নেয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে তেমন কিছুই হয়নি। আইএমএফ ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠানটির ভোটাধিকারসহ বিভিন্ন নীতিতে সংস্কার করতে রাজি হয়। যাতে গণতন্ত্র ও সমতা প্রতিষ্ঠিত হয়। বিনিময়ে আইএমএফ ব্রিকস দেশগুলোর কাছে বাড়তি চাঁদা দাবি করে। ব্রিকস জোট ২০১২ সালের জুনে বাড়তি ৭৫ বিলিয়ন ডলার দিতে রাজি হয় যাতে আইএমএফের ঋণ প্রদান সামর্থ্য বাড়ে। কিন্তু প্রত্যাশিত সংস্কার আর হয় না। ব্রিকসের মতে,  সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়িত না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির আইনগত ভিত্তি, গ্রহণযোগ্যতা ও কার্যকারিতার ওপর ঋণাত্মক প্রভাব পড়েছে। তাই আলাদা কিছু করা যায় কিনা এ নিয়ে ব্রিকস জোট নিজেদের মধ্যে মতবিনিময় শুরু করে। ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ পশ্চিমা বিশ্বের অর্থনীতিতে মন্থরতা দেখা দেয়। আর্থিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়। রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ডলার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। কিন্তু ব্রিকসের অর্থনীতি দাপটের সাথে এগিয়ে যায়। গড়ে প্রায় ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। তাই তারা নতুন কিছু করার প্রেরণা পায়। দেশগুলো ২০০৯ সালে রাশিয়ার লিকেটারিনবার্গে অনুষ্ঠিত প্রথম শীর্ষ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিক জোট গঠন করে। সেই বছরই তারা ইউএস ডলারের বিকল্প একটি বহুমুখী, স্থিতিশীল ও স্বচ্ছ নতুন বিশ্ব রিজার্ভ মুদ্রা চালুর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা এতে যুক্ত হয়। সৃষ্টি হয় ব্রিকস। প্রতিবছরই ব্রিকসের শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ফোর্টালেজা শীর্ষ সম্মেলনটি ছিল এই জোটের ষষ্ঠ সামিট। প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নগরীতে অনুষ্ঠিত হওয়া কয়েক ডজন সম্মেলনের এটি একটি। জি-৭, অ্যাপেক, আসিয়ান, দক্ষিণ আমেরিকার পাঁচটি দেশের জোট মারকোসোর, উত্তর আমেরিকার তিনটি দেশের জোট নাফটা প্রভৃতি জোটের সরকার প্রধানরা প্রতিবছর এসব সম্মেলনে যোগ দেন। নিজেদের বাণিজ্য বিনিয়োগ স্বার্থ নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেন। বাণিজ্য বিনিয়োগ বাড়াতে নতুন কৌশল নির্ধারণ করেন। ব্রিকস জোটে সেই সুযোগ কম। কারণ, বিশ্ব বাণিজ্য বিনিয়োগ অঙ্গনের অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা একে অপরের প্রতিযোগী। কোনো কোনো অথর্নতিতিতে অস্থিতিশীলতা আছে। বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের মধ্যে মতবিরোধও আছে। অবশ্য তাদের মধ্যে দুটো ক্ষেত্রে মিল আছে।
এক. তারা সবাই উন্নয়নশীল বিশ্বের সদস্য। পশ্চিমা বিশ্ব এবং অর্থনৈতিক বোদ্ধারা তাদের নাম দিয়েছেন ইমার্জিং ইকোনোমিজ বা উদীয়মান অর্থনীতি। দেশগুলো দ্রুত শিল্পায়ন করছে।
দুই. তারা সবাই কম-বেশি পুঁজিবাদ বিরোধী সমাজতান্ত্রিক ধ্যান ধারণায় বিশ্বাসী। যদিও বিগত দুই দশক ধরে এ দেশগুলোও মুক্তবাজার অর্থনীতি অনুসরণ করছে। এসব কারণে পশ্চিমা মদদপুষ্ট আন্তর্জাতিক মিডিয়া ব্রিকস সামিট নিয়ে তেমন খবর দেয় না। এবারের সামিট নিয়েও তাদের মধ্যে কোনো আগ্রহ ছিল না। বরং কয়েক মাস আগে থেকেই তারা প্রচার করেছে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন ইস্যুতে নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ থাকায় ব্রিকস একটি শক্তিশালী গ্রুপে উন্নীত হতে পারবে না এবং তারা কোনো বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। ঘটনা ঘটেছে ঠিক তার উল্টো। ব্রিকস ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।
দেশগুলো পঞ্চম শীর্ষ সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল  রাখতে ২০১৪ সালের সামিটেই তারা ১০০ বিলিয়ন ডলারের একটি তহবিল গড়ে তুলবে। ষষ্ঠ শীর্ষ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ প্রাথমিকভাবে ৫০ বিলিয়ন ডলার মুলধনের ব্রিকস উন্নয়ন ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এতে পাঁচ দেশই সমান ১০ বিলিয়ন ডলার করে দেবে। ধীরে ধীরে এ মূলধন ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হবে। বিশ্বব্যাংকের ন্যায় ব্রিকস ব্যাংকও উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর ভৌত ও সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন করবে। এই ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় হবে সাংহাইয়ে। এর প্রথম প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দেয়া হবে ভারত থেকে। এখানে “এক দেশ, এক ভোট”  নীতি অনুসরণ করা হবে। তারা ১০০ বিলিয়ন ডলারের একটি রিজার্ভ তহবিল গঠনেরও ঘোষণা দেয়। অর্থনৈতিক বোদ্ধাদের মতে, এই তহবিল আইএমএফের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে। এ তহবিল থেকে উদীয়মান অর্থনীতিগুলোতে সাময়িক মুদ্রা সংকট হলে তা মোকাবেলায় সহযোগিতা দেয়া  হবে। যেমনটা আইএমএফ সামপ্রতিক আর্থিক সংকটের সময় গ্রীস, ইতালী, পর্তুগাল, স্পেনসহ ইউরোজোনের দেশগুলোকে ঋণ দিয়েছে। রিজার্ভ তহবিলে চীন সবচেয়ে বেশি ৪১ বিলিয়ন ডলার দেবে। ভারত, ব্রাজিল ও রাশিয়া প্রত্যেকে ১৮ বিলিয়ন ডলার করে দেবে এবং দক্ষিণ আফ্রিকা দেবে ৫ বিলিয়ন ডলার। এই দু’টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ  কার্যকর হতে দু বছর সময় লাগবে বলে ব্রিকস সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বিকল্প অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত ব্রিকস জোটের এ দুঃসাহসিক উদ্যোগকে পশ্চিমা বিশ্ব নিশ্চয়ই ভালভাবে নেয়নি। যদিও আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টিন লাগার্দ এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এর ফলে বিশ্ব অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সবার অংশগ্রহণ আরও জোরালো হবে। তিনি ব্রিকস ব্যাংকের সাথে যৌথভাবে কাজ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়াং কিমও ব্রিকস ব্যাংক গঠনকে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। পশ্চিমা বিশ্লেষকদের মতে, এই ব্যাংক বিশ্ব আর্থিক ব্যবস্থায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিকল্প প্লাটফর্ম তৈরি করবে। যদিও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট পশ্চিমা আধিপত্যের বিকল্প হিসেবে এ ব্যাংক গড়ে তোলার কথা সরাসরি স্বীকার করেননি। তবে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিনা ক্রিচনার ব্যাংকটি বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বিকলপ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। শুধু আর্জেন্টিনা নয়, দক্ষিণ আমেরিকার সমাজতান্ত্রিক ১২টি দেশের জোট “দ্য ইউনিয়ন অব সাউথ আমেরিকান নেশনস”-এর সরকার প্রধানরা ব্রিকস নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠকের পর একই অভিমত প্রকাশ করেছেন। এই জোটে ব্রাজিল ও আর্জেনিটনাও আছে। পশ্চিমা মিডিয়া বরাবরই ব্রিকসের সামর্থ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে এসেছে। এক মাস আগেও তারা জোর দিয়ে বলেছিল যে, দেশগুলো ভোটাধিকার, ব্যাংক প্রতিষ্ঠার স্থান এর পরিচালনা সম্পর্কিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে কখনো একমত হতে পারবে না। পশ্চিমা মিডিয়ার সব ধারণা ভুল প্রমাণ করে ব্রিকস ব্যাংক বাস্তবে রূপ নিয়েছে। আন্তর্জাতিক বহুজাতিক অর্থব্যবস্থায় গণতন্ত্রায়ন প্রতিষ্ঠা করা ছিল ব্রিকস দেশগুলোর দীর্ঘদিনের দাবি। তা করতে না পেরে এখন নিজেরাই গণতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। এ ধারণাকে এগিয়ে নিতে কয়েক বছর আগে থেকেই ভারতের বড় অবকাঠামো কোম্পানিগুলো চীন থেকে আমদানির ব্যয় ডলারের পরিবর্তে ইউয়ানে পরিশোধ করছে। এজন্য তারা চীনা ব্যাংকগুলোর সাথে মূলধন যোগানের ব্যবস্থা করেছে। সিআইএর প্রাক্তন তথ্য প্রযুক্তিবিদ এডওয়ার্ড স্লোডেনের ফাঁস করা তথ্যে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা বিশ্বের সব রাষ্ট্রনেতার টেলিফোনেই আড়ি পাতে। এমনকি তারা ভারতের বিজেপি, পাকিস্তানের পিপিপির মতো রাজনৈতিক দলগুরোর ওপর গোয়েন্দাগিরি করে। তাই ব্রিকস দেশগুলো সাইবার নীতিতেও যৌথ উদ্যোগ গ্রহণের চিন্তা ভাবনা শুরু করেছে। যাতে রাষ্ট্রীয় নীতি কাঠামো বিষয়ে গোপনীয়তা বজায় থাকে। সার্বিক দিক থেকে একটি স্বাধীন সত্তা প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে ব্রিকস। উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের অর্থনীতিগুলোতে এখনও অস্থিতিশীলতা আছে। এর অভিঘাত ব্রিকস অর্থনীতিতে পড়েছে। তারপরও ব্রিকস জোটই এখন বিশ্ব অর্থনীতির গতি-নির্ণায়ক। এ দেশগুলোর মোট জিডিপি যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপির সমান, ১৬ ট্রিয়িলন ডলারের সামান্য বেশি। দেশগুলোর সম্মিলিত রিজার্ভ ৪ ট্রিলিয়ন ডলার। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ এ জোটে। অর্থনীতিকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে এসবই অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে।
ব্রিকস উন্নয়ন ব্যাংক এবং ব্রিকস অর্থ তহবিল গঠিত হওয়ায় বিশ্ব উন্নয়ন কত দ্রুত হবে এবং এ উন্নয়ন কতটা টেকসই, পরিবেশ-বান্ধব এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে তা ভবিষ্যই বলে দেবে। তবে এর ফলে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়বে। যা সবগুলো সংস্থায় দক্ষতা ও কার্যকরতা বাড়াতে অবদান রাখবে। ব্রিকসের দেশ রাশিয়াতে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত হবে একবিংশতিতম ফিফা বিশ্বকাপ। ততোদিনে ব্রিকস উন্নয়ন ব্যাংকের কাজকর্ম বিশ্ব প্রত্যক্ষ করবে। তখন ব্রিকসও একদশক পূর্তি উদযাপন করবে।
তবে কিশোর ব্রিকস এবং শিশু ব্রিকস ব্যাংকের পথচলা এত মসৃণ হবে বলে মনে হয় না। উন্নয়নশীল বিশ্বের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার এই প্রচেষ্টাকে পশ্চিমা বিশ্ব সহজে সফল হতে দেবে না। ইতোমধ্যেই পশ্চিমা অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, ব্রিকস ব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়িত উন্নয়ন প্রকল্পে সামাজিক ও পরিবেশগত সুরক্ষার বিষয়টি তেমন গুরুত্ব পাবে না। যা বিশ্ব উর্ষ্ণায়ন পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে। তাদের আশঙ্কা অমূলক নয়। গত এক দশকে চীন, ভারত ও ব্রাজিল উন্নয়নের গতি বাড়ানোর সাথে সাথে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণও আশঙ্কাজনকহারে বাড়িয়েছে। তাদের যুক্তি,আজকের শিল্পোন্নত বিশ্ব বিগত প্রায় দুই শতাব্দী ধরে ব্যাপক শিল্পায়ন করতে গিয়ে মাত্রাতিরিক্ত জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করেছে। বায়ুমন্ডলে নির্বিচারে গ্রীনহাউস গ্যাস নিঃসরণ করেছে। ফলে জলবায়ুর মারাত্মক পরিবর্তন হয়েছে। এখন উন্নয়নশীল বিশ্বের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করার জন্যই তারা টেকসই উন্নয়নের কথা বলছে। অথচ উন্নত বিশ্ব উচ্চমাত্রায় কার্বন নিঃসরণ অব্যাহত রেখেছে। এ বিতর্কের মধ্যেই বিশ্ব এগিয়ে যাবে। বিশ্বব্যাংকের সবুজ অর্থনীতির শর্ত মেনে বাংলাদেশ দ্রুত উন্নয়ন করতে পারবে না। তাই ব্রিকস উন্নয়ন ব্যাংকের সাথে সম্পর্ক গড়ার চেষ্টাই যুক্তিযুক্ত হবে। এজন্য ব্যাপক পর্যালোচনা, কূটনৈতিক তৎপরতা এবং ইতিবাচক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
ব্রিকস ব্যাংক এগিয়ে যাবে তার প্রমাণ হচ্ছে ইতিমধ্যে ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, আর্জেন্টিনা, মিসর, ইরান, নাইজেরিয়া ও সিরিয়া এই ব্যাংকের সদস্য হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ ও ব্রিকস ব্যাংকের সদস্য হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। ব্রিকসভুক্ত নেতাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ অনুযায়ী তারা পৃথিবীর শান্তি ও নিরাপত্তার হুমকি দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের অবসান চান। এছাড়াও পারমাণবিক শক্তির অপব্যবহার এবং এর বিস্তারের সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান ও জলবায়ুর পরিবর্তন নিয়েও তারা উদ্বিগ্ন। ব্রিকস ব্যাংক এগিয়ে যাক এই আশা করি।
লেখক: সাবেক সহ-সভাপতি, এফবিসিসিআই,  বিজিএমইএ, বিটিএমইএ

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button