আমেরিকায় মুসলমানদের শান্তির প্রয়াস ক্ষতিগ্রস্ত
বহু বছরের কঠোর পরিশ্রমের ফলে মার্কিন সমাজে ইসলাম সম্পর্কে যে সঠিক ভাবমর্যাদা অর্জন সম্ভব হয়েছিল তা এখন হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। শিকাগো ভিত্তিক একটি প্রধান মুসলিম গ্রুপ অভিযোগ করে বলেছে, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের বিস্তার ঘটায় তাদের এই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘গেইন পিস’র পরিচালক ড. সাবিল আহমদ গত মঙ্গলবার এনবিসি শিকাগোকে বলেছেন, মানুষ আমাদেরকে টেলিফোন করছে এবং চেঁচিয়ে ও তীব্র স্বরে আমাদের সঙ্গে কথা বলছে তারা আমাদেরকে নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে বলছে।
গেইন পিস হচ্ছে একটি জাতীয় সংগঠন এবং এটি উত্তর আমেরিকার ইসলামী মহলের সমর্থন পুষ্ট। এই সংগঠন ইসলাম ও মুসলিম সম্পর্কিত প্রচলিত বিভ্রান্তি দূর করার লক্ষ্যে বিল বোর্ড, সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও রেডিও ভাষণের মাধ্যমে শিক্ষামূলক প্রচারাভিযান পরিচালনা করে থাকে। এসব শিক্ষা অভিযানে আরো যেসব বিষয় থাকে সেগুলো হলো অধিক আগ্রহীদের জন্য মোবাইলে ইসলাম সম্পর্কে বক্তৃতা এবং বিনামূল্যে পবিত্র কুরআনের কপি বিতরণ করা।
৯/১১ হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রে ইসলামোফোবিয়া মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে গেইন পিস ইসলাম সম্পর্কে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা উপেক্ষা করে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালায়। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো অঙ্গরাজ্যে সবচেয়ে বেশি মুসলমানের বসবাস।
তবে গত কয়েক সপ্তাহে বহুদিনের পরিশ্রম ও প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে তথাকথিত ইসলামিক স্টেটস ইন ইরাক এও দি লেভান্ট (আইএসআইএল) এর বিস্ময়কর উত্থান এবং তাদের বিশাল এলাকা দখল করে নেয়ার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতাদের মুসলিম বিরোধী বাগাড়ম্বরপূর্ণ বক্তৃতা বৃদ্ধি পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষমূলক তৎপরতা আবার বৃদ্ধি পায়।
ড. আহমদ বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে যে কোন সংকট দেখা দিলে যুক্তরাষ্ট্রে হুমকি ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানের সংখ্যা কত তা সরকারিভাবে জানানো গেলেও দেশটিতে তাদের সংখ্যা আনুমানিক ৬০ লাখ থেকে ৮০ লাখ বলে মনে করা হয়।
গ্যালাপের আগের এক জনমত জরিপে মার্কিন মুসলমানদের অধিকাংশই দেশের প্রতি অনুগত এবং দেশটিতে তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী। অপর এক মার্কিন জরিপে দেখা গেছে, দেশটির অধিকাংশ নাগরিক মুসলিম ও ইসলাম সম্পর্কে খুব কমই জানে। সিরিয়া ও ইরাকে আইএসআইএল’র উত্থান মার্কিনীদের মনে এই ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে যে ইসলাম হচ্ছে তাদের শত্রুপক্ষের ধর্ম। মাই জিহাদের প্রতিষ্ঠাতা এনজি ইমারা বলেন, মুসলিম সমাজ সুনিশ্চিতভাবে নিজেদের ত্রুটিমুক্ত করার চেষ্টা করছে।
ইমরা জনশিক্ষা প্রচারের জন্য ২০১২ সালে মাই জিহাদ প্রতিষ্ঠা করেন। মুসলমানদের ইসলামের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা এবং চরম ইসলাম বিদ্বেষীদের মধ্যে প্রকৃত ইসলাম সম্পর্কে ধারণা দেয়ার জন্য তার এই প্রয়াস। সংগঠনটি জিহাদের প্রকৃত অর্থ ফুটিয়ে তোলার জন্য নিরলসভাবে কাজ করছে। বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা আইএসআইএল নিষ্ঠুরতার নিন্দা করেছে বিশেষ করে সাংবাদিকসহ পশ্চিমা তিন ব্যক্তিকে শিরোñেদের দৃশ্য প্রচার করার পর নিন্দার ঝড় ওঠে। পয়োলা ফ্রেশম্যান ও সক্রিয় কর্মী মাহদি শাহলুল বলেন, এটা পরিষ্কার যে, তারা ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করে না। একজন উদারপন্থী আমেরিকান হিসাবে আমি ব্যক্তিগতভাবে এবং দেশটির অধিকাংশ মুসলমানই আইএসআইএল-এর এই নিষ্ঠুর কর্মকা-ের নিন্দা করছে।
শাহলুল সিরিয়ান আমেরিকান মেডিকেল সোসাইটির একজন স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে গত ২ বছর তুরস্ক ও জর্দানের উদ্বাস্তু শিবিরের কাজ করেছেন। তিনি বলেন, আমার বাবা-মা দুইজনই সিরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেছেন। তাদের এখনো যন্ত্রনা ভোগ করতে হচ্ছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
শাহলুল বলেন, ৯/১১ হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমানরা যেভাবে ক্ষতির শিকার হয়েছিল আমি মনে করি তার পরিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু এখন আবার মধ্যপ্রাচ্যে আইএসআইএলের পুনরুত্থানে সেই একই ধরনের বিপদ মুসলমানদের উপর আপতিত হয়েছে। এখন সেই একই ধরনের গৎবাঁধা মুসলিম বিদ্বেষের বিস্তার ঘটেছে।