শেরপুরে সহিংসতায় আ’লীগ ও জাপা’র ২ জন নিহত

শুক্রবার শেরপুর জেলা সদরের চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদসংলগ্ন ভাগলগড় পূর্বপাড়া গ্রামে নির্বাচনোত্তর সহিংস ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির (এরশাদ) দুই সমর্থক  নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশ জোছনা নামে এক মহিলাকে আটক করেছে।
নিহতরা হলেন শেরপুর সদর উপজেলার ভাগলগড় পূর্বপাড়া গ্রামের হানিফ উদ্দিনের ছেলে আ. লীগ সমর্থক ফারুক হোসেন (৩২) ও একই গ্রামের মৃত মনতাজ আলীর ছেলে জাপা সমর্থক আজের উদ্দিন (৩৮)। এ ঘটনায় আহত সোহেল মিয়া (৩০) নিহত ফারুকের ছোট ভাই।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত শেরপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. ছানুয়ার হোসেন জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রার্থী মো. ইলিয়াছ উদ্দিনকে পরাজিত করে বিজয়ী হন। নিহত ফারুক হোসেন ছিলেন বিজয়ী ছানুয়ারের একজন নির্বাচনী এজেন্ট।
শুক্রবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ফারুক হোসেনের বাবা হানিফ উদ্দিন ভাগলগড় গ্রামের স্থানীয় একটি বাজারে যাওয়ার সময় জাপা সমর্থিত প্রার্থী ইলিয়াছ উদ্দিনের সমর্থক আজের উদ্দিন তাঁর (হানিফ) পথরোধ করে কোথায় ভোট দিয়েছেন জানতে চান। এসময় দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আজের তাঁকে (হানিফ) মারধর করেন। এ সংবাদ পেয়ে হানিফ উদ্দিনের দুই ছেলে  ফারুক হোসেন ও সোহেল মিয়া তাঁদের বাবাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে আজের উদ্দিন ধারালো ছুরি দিয়ে ফারুকের পেটে ও সোহেলের পিঠে আঘাত করেন। এতে ফারুক ঘটনাস্থলেই মারা যান এবং ছোট ভাই সোহেল গুরুতর আহত হন। সোহেলকে শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার পরপরই আজের উদ্দিন পালিয়ে যান।
এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে নিহতের আত্মীয়স্বজন ও বিুব্ধ এলাকাবাসী পুরো ভাগলগড় গ্রামে তল্লাশি চালিয়ে শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে আজের উদ্দিনকে ধরে গণপিটুনি দেন এবং গুরুতর আহত অবস্থায় ব্রহ্মপুত্র নদসংলগ্ন একটি ধান খেতে ফেলে রাখেন।
পরে সংবাদ পেয়ে শুক্রবার দুপুরে শেরপুর সদর থানা পুলিশ আহত আজের উদ্দিনকে উদ্ধার করে শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে  কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এ ঘটনার পর  নিহত আজের উদ্দিনের বাড়ির সবাই গা ঢাকা দিয়েছেন। অন্যদিকে নিহত ফারুক হোসেনের বাড়িতে চলছে আহাজারি আর শোকের মাতম।
চরপক্ষীমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আকবর আলী জানান, দুটি খুনের ঘটনার পর সদর উপজেলার চরাঞ্চলের ভাগলগড় ও এর আশপাশের এলাকায় আতংক ও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাজহারুল করিম শুক্রবার বিকেলে বলেন, দুটি হত্যার ঘটনায় শেরপুর সদর থানায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা দায়ের হয়নি। তবে নিহত আ. লীগ সমর্থক ফারুকের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। ময়নাতদন্তের জন্য নিহত দুজনের লাশ শেরপুর জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
অপরদিকে শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. মেহেদুল করিম বলেন, পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। নির্বাচনোত্তর আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চরপক্ষীমারী ইউনিয়নসহ চরাঞ্চলের বিভিন্নস্থানে অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button