সংলাপের প্রশ্নই ওঠে না : নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী

Hasina NYশওকত ওসমান রচি, নিউইয়র্ক থেকে: দেশে মধ্যবর্তী নিবাচনের সম্ভাবন নাকচ  করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সংলাপ কার সঙ্গে। বিএনপি এখন বিরোধী দলে নেই। তাদের সঙ্গে সংলাপে বসার প্রশ্নই ওঠে না। তিনি বলেন, কেউ যদি রাজনীতিতে ভুল সিদ্ধান্ত নেয় তার খেসারত তাকে দিতেই হবে। বিএনপি’র নির্বাচনে অংশ না নেওয়া রাজনৈতিক ভুল উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংসদে সংসদীয় বিরোধি দল বলতে বিএনপিকে বোঝায়না। শুক্রবার জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনের তিনি শুধু স্থানীয় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এসময় তিনি বিএনপি জামায়াত জোটের সরকারের কড়া সমালোচনা করেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মধ্যমর্তী নির্বাচনের বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, কিসের মধ্যবর্তী নির্বাচন। দেশের মানুষ এখন ভালো আছে, একটি নির্বাচন হয়েছে আবার সময়মতো নির্বাচন হবে। বিএনপি জোট সরকারের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, তারা হাওয়া ভবন করেছিল। রিমান্ডে নিয়ে অত্যাচার করেছে। সাংবাদিকদের পঙ্গু করেছে। প্রশ্নকারি সাংবাদিকের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নাকি ওই সেচা না খেলে ভাল লাগছেনা। তাদেও ওই ৫ বছরে অনেকেই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে।
ভিসা নিয়ে দেশ ত্যাগ করতে বেগম খালেদা জিয়ার একটি মন্তব্য প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা ফকরুদ্দীন-মঈনুদ্দীন এর আমলের বিষয়টি তুলে বলেন, আমিতো পাল্টাইনি। আমাকে কি আটকে রাখতে পেরেছিল। ওনিতো(খালেদা জিয়া) পোটলা-পুটলি নিয়ে রেডি ছিলেন। দু‘ছেলেকে নিয়ে যেতে পারলে চলে যেতেন। আমিইতো প্রতিবাদ করেছিলাম। আমি দেশে ফিরে যেতে চেয়েছিলাম। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আমি ভিসা নিয়ে যাবো কোথায়। ওনার জন্ম শিলিগুড়িতে। ওনার ভিসা প্রয়োজন। আমার জন্ম গোপালগজ্ঞের প্রত্যন্ত গ্রামে।
জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি বন্ধ করা প্রসঙ্গে সরাসরি কিছু না বলে জামায়াতকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা করার জন্য জিয়াউর রহমানকে দায়ী করেন প্রধানমন্ত্রী। যুদ্ধাপরাধিদের বিচার প্রসঙ্গে তিনি বরেন, রায় হয়েছে। সরকার এর কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। জামায়াতে ইসলামীর সাথে আতাত প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,বিচার বিভাগ স্বাধীন। আতাত হয় কিভাবে। রায় দিচ্ছে সুপ্রীম কোর্ট, হাই কোর্ট। তিনি বরেন, বিএনপি তাদেও পতাকা, চেয়ার দিয়েছে। বিএনপিকে ধরেন। তাদেরও বিচার করা উচিত।
দুর্নীতি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে দুর্নীতি হলে উন্নতি হতো না। পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়নি এমন চ্যালেঞ্জ আগেই দিয়েছিলাম। এখন প্রমানিত হয়েছে এ প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়নি।এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত ৫ বছরে ১১ হাজার ৭৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যু্ৎ উৎপাদনের সমতা তৈরি হয়েছে, দুর্নীতি হলে তা সম্ভব হতো না। তিনি বলেন, আমরা সরকার চালাতে এসেছি, ব্যবসা করতে আসি নি। আমরা ব্যবসায়ীদের সহযোগিত করছি বলেই দেশ এগিয়ে যেতে পারছে।
শনিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাাতে কি নিয়ে আলোচনা হতে পারে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুভেচ্ছা বিনিময় হবে। এসময় তিনি বলেন, তার সরকারের আমলেই ভারতের সঙ্গে সীমান্তে যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলো সমাধানের সুযোগ হয়েছে। এমনকি ভারত থেকে ফেনীর ৪৫ একর জমিও তার সরকারই দেশে ফিরিয়ে এনেছে। কই আগেতো ফেনীর লোক ক্ষমতায় ছিলেন, তারা কেন পারলেননা। তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন বলেন, উজান থেকে পানি আসবেই। পানি কেউ আটকে রাখতে পারবে না। তবে বর্ষা মৌসুমে যাতে এ পানি আটকে রেখে সেচের কাজ করা যায় সে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অনেকের কাছেই রোল মডেল হয়ে উঠেছে। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের যেখানে যেই ফোরামেই তিনি কথা বলেছেন প্রশংসা পেয়েছেন। সবারই মুখে বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার কথা শোনা যায়। তিনি বলেন, জাতির পিতার যে সোনার বাংলার স্বপ্ন ছিলো, সে স্বপ্ন আজ আন্তর্জাতিক নেতাদের কাছেও স্বীকৃতি পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জানান ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘে তার প্রথম বাংলা ভাষণেই জানিয়েছিলেন, সবার সঙ্গে বন্ধুত্বতা, কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়। একই নীতি সামনে রেখে এবছরও বাংলাদেশ জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে অংশ নিয়েছে। জাতীয় উন্নয়নে তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদপে ও অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরেন।
শিার ওপর তার সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিাই দারিদ্র থেকে দেশকে মুক্তি দেবে। আর সে ল্য নিয়েই সরকার কাজ করে যাচ্ছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে  উন্নয়নে বিনামূল্যে বই বিতরণ, অবৈতনিক শিা, বৃত্তিমূলক শিাসহ সরকারের বিভিন্ন পদপে তুলে ধরেন তিনি। পরীায় পাশের হার ৯৮ শতাংশে উন্নীত করার অঙ্গীকারও পুনর্ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা। তিনি জানান, নারীদের অগ্রাধিকার দিয়ে এরই মধ্যে তার সরকার ১ লাখ ৩৩ হাজার নারী শিার্থীকে ডিগ্রি পর্যন্ত বিনামূল্যে পড়ার সুযোগ করে দিয়েছে। মেধাবী শিার্থী তৈরিতে তাদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে স্কুলগুলোতে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, ভারত ও মায়ানমারের সাথে সমুদ্র জয়ের পর এখন সমুদ্র সম্পদ আহোরনের জন্য সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে একটি সী এ্যকুরিয়াম স্থাপন করা হচ্ছে। এছাড়া গবেষণার জন্য একটি জাহাজ কেনা হচ্ছে। সরকার স্যাটেলাইট উৎপেন করতে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে দেশ আধুনিক তথ্য প্রযুক্তিতে আরো এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষকে একটি সুন্দর জীবন দান ও জীবনকে অর্থবহ করাই তার সরকারের লক্ষ্য।
প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশে ধরে রাখার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি দেশে ৫ কোটি মানুষকে নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে উন্নীত করা, তিন কোটি ৬৮ লাখ মেট্রিক টন দানাদার খাদ্য উৎপাদন করা, রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা, দারিদ্রের হার ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা, মানুষের ক্রয় মতা বৃদ্ধি,আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থার উন্নতি সহ নানা খাতে সরকারের অর্জন গুলো তুলে ধরেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button