ব্রিটেনে এশিয়ার প্রথম প্রধানমন্ত্রী হবেন সাজিদ জাভেদ?

Javidপ্রথম এশিয়ান এবং সেইসাথে প্রথম মুসলমান হিসেবে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন কি সাজিদ জাভেদ? তার মা-বাবা মাত্র এক পাউন্ড নিয়ে ব্রিটেনে এসেছিলেন। তিনি এখন মন্ত্রী। যে গতিতে এগুচ্ছেন, তাতে অনেকেই মনে করছেন, তিনিই অদূর ভবিষ্যতে ব্রিটেনের নেতৃত্বে আসছেন।
পাকিস্তান থেকে ১৯৬১ সালে তার মা-বাবা এক পাউন্ড পকেটে নিয়ে ব্রিটেনে এসেছিলেন। লক্ষ্য ছিল সন্তানদের জন্য উন্নততর জীবনের ব্যবস্থা করা। প্রথমে তিনি সুতা কলে কাজ নিয়েছিলেন। তারপর বাসের ড্রাইভার হিসেবেও চাকরি করেছেন। সংগ্রাম করে তাতে সফল হয়েছেন। পাঁচ ছেলের সবাই কঠোর পরিশ্রমী, নিজ নিজ ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।
তবে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন সাজিদ জাভেদ। ১৯৬৯ জন্মগ্রহণকারী সাজিদ ছিলেন ভাইদের মধ্যে তৃতীয়। ক্যারিয়ারের প্রথম ২০ বছর ছিলেন ব্যাংকার। ২০১০ সালে ব্রমসগ্রোভ থেকে রক্ষণশীল দলের সদস্য হিসেবে পার্লামেন্ট সদস্য হন।
এরপর থেকে তার উত্থান হতে থাকে দ্রুত। গত এপ্রিলে ৪৪ বছর বয়সে তিনি হলেন কালচার, মিডিয়া ও স্পোর্ট সেক্রেটারি। ব্রিটেনে এই প্রথম কোনো এশিয়ানের হাতে গেলে পদটি। এখন ডান এবং বাম উভয় পক্ষের ভাষ্যকাররা তাকে ভবিষ্যত রক্ষণশীল নেতা হিসেবে অভিহিত করছেন।
ডেভিড ক্যামেরন ও অসবর্নকে মোকাবিলা করার জন্য টরিদের যদি কোনো কৌশলী নেতার দরকার হয়, সম্পদ আর অক্সব্রিজ সুবিধার দরকার হয়, তবে সাজিদ জাভেদ হলেন পারফেক্ট ম্যান। বিন্দু থেকে বৃত্ত পূরণ করা নেতা তিনি। আত্মনির্ভরশীল এই লোকটির ওপর তারা নির্ভাবনায় ভরসা করতে পারে।
ব্রিটেনের কী করা উচিত, কী করা উচিত নয়, সে সম্পর্কে তার ধারণা একেবারে স্বচ্ছ। মার্গারেট থ্যাচারকে তিনি মনে করেন তার আদর্শ।
তার পরিবার কর্পদশূন্য অবস্থায় ব্রিটেনে এলেও শুরুতে কিন্তু তত গরিব ছিল না। ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ বিভক্তির সময় তারা নিঃস্ব হয়ে পড়েন। আবদুল গনি ব্রিটেনে এসে ভাগ্য গড়ার চেষ্টা করেন। এই সুযোগ দেয়ার জন্য তিনি ব্রিটেনের কাছে কৃতজ্ঞ। তিনি পাকিস্তানি পাসপোর্ট ছেড়ে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব নেন।
বাবার এই ধারণাকে সমর্থন করে সাজিদ বলেন, ‘আমি ১০০ ভাগ ব্রিটিশ। তবে আমার পাকিস্তানি রক্তের জন্যও গর্বিত। আমি গর্বিত যে আমি পাঞ্জাবি জানি এবং ওই সংস্কৃতি বুঝি। তবে নিজেকে সবসময় ব্রিটিশ মনে করি।’
তার বাবা তাকে আরো বলে গিয়েছিলেন, জীবনে কোনো কিছুই ধরা ছোঁয়ার বাইরে নয়। ‘আমার এবং আমার ভাইদের ওপর বাবার অনেক ভরসা ছিল। তার একটি প্রিয় উক্তি ছিল : দুনিয়া তোমার ব্যবস্থা করে দিতে বাধ্য নয়।’
তার মা-বাবা জানতেন, টিকে থাকতে হলে, এগিয়ে যেতে হলে যে জিনিসটার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তা হলো শিক্ষা। তার মা জুবাইদাও তা মনে করতেন। ফলে তারা যত কষ্টেই থাকুন না কেন, ছেলেদের পড়াশোনার ব্যাপারে কোনো ছাড় দেননি।
তার মা পড়াশোনা জানতেন না। কিন্তু তবুও ছেলেদের গণিতের অগ্রগতির পর্যন্ত খবর নিতেন, জানতে চাইতেন। শনিবার জুবাইদা তার ছেলেদের নিয়ে যেতেন স্থানীয় লাইব্রেরিতে। বলতেন, পড়ো। তিনি বসে থাকতেন লাইব্রেরি এককোণে, হয়তো সেলাইয়ের কাজও করতেন সেখানে বসে।
এই পড়াশোনায় ফল আসে হাতে হাতে। সাজিদ জানান, মা-বাবার এই তাগিদেই তিনি স্কুলে প্রথম হতেন।
আর তিনি যে ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টির (রক্ষণশীল দল) সাথে আছেন, সেটাও তার বাবার কারণে। তার বাবা ১৯৭৯ সালে লেবার পার্টির (শ্রমিক দল) প্রতি সমর্থন ত্যাগ করে রক্ষণশীল দলে যোগ দেন। মার্গারেট থ্যাচারের ওপর তার অগাধ আস্থা ছিল।
তিনি বলেন, রক্ষণশীলেরা যদি অভিবাসীদের আকৃষ্ট করতে পারে, তবে আরো ভালো করবে।
ফুলহ্যামের যে বাড়িতে স্ত্রী লরা, চার সন্তান (তিন মেয়ে : সোফিয়া ১৫, রানিয়া ১১, মায়া ৫, এক ছেলে সুলি ১৩) নিয়ে থাকেন, সেটির দাম ৪০ লাখ ডলার। চেলসি, ব্রিস্টল, মিডল্যান্ডেও তার বাড়ি আছে।
স্ত্রী লরার সাথে যখন তার সাক্ষাত হয়েছিল সাজিদের বয়স ছিল ১৮। তিনি এখনো গর্ব করে বলেন সেটা তার ‘প্রথম ও একমাত্র’ প্রেম। ১৯৯৬ সালে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
তার প্রিয় বাবা আবদুল গনি ২০১২ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার বাবারই স্বপ্ন ছিল সাজিদ এমপি হোক। বাবার সেই স্বপ্ন তিনি পূরণ করতে পেরেছেন। তিনি এটাকেই তার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি মনে করেন। -সূত্র : ডেইলি মেইল।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button