‘বাংলাদেশে পেপ্যাল আসছে না’
ইন্টারনেট ভিত্তিক অর্থ লেনদেন গেটওয়ে পেপ্যাল নিয়ে বাংলাদেশীদের হতাশার দিন যেন শেষই হচ্ছে না। গত ২০১২ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে বাংলাদেশে পেপ্যাল তাদের কার্যক্রম শুরু করার কথা থাকলেও আজ অবধি তা আলোর মুখ দেখেনি।
তৎকালীন বেসিসের সভাপতি মাহবুব জামান বলেছিলেন, ‘পেপ্যাল-এর অভাবে দেশের ফ্রিল্যান্সার এবং আইসিটি খাতের ব্যবসায়ীদের প্রচুর সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। এটি সমাধানে আমরা বেসিসের পক্ষ থেকে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছি প্রথম থেকেই। ‘বাংলাদেশে লেনদেন কম হওয়ায় এখনই বাংলাদেশে আসছে না পেপ্যাল’- জানালেন বেসিসের প্রাক্তন সভাপতি এ কে এম ফাহিম মাশরুর।
দেশের ফ্রিল্যান্সাররা গত বছর প্রায় ৬ কোটি ডলার রাজস্ব আয় করেছে। এ ছাড়াও সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলো আয় করেছে আরও ১০-১৫ কোটি ডলার। আগামী ৫ বছরের মধ্যে এ আয় ১০০ কোটি ডলারে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে স্বল্প খরচে এবং স্বীকৃতভাবে আয়ের অর্থ দেশে আনতে পেপ্যালকে বাংলাদেশে আনার জন্য বারবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য অনলাইন গেটওয়ে পেপ্যালের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দফায় দফায় উদ্যোগ নেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত অনিশ্চয়তায়ই আছে আমাদের দেশ। গত বছর পেপ্যাল কর্তৃপক্ষ মন্তব্য করেছিলো আর্থিক ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতার কারণে বাংলাদেশে আসছে না প্রতিষ্ঠানটি। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ পেপ্যাল ব্যবহার করতে সক্ষম হলেও এক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
ফ্রিল্যান্সিং এ বাংলাদেশকে পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় দেশের একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জানা গেছে, পেপ্যাল বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ২০০টি দেশে কাজ করছে এবং এটি প্রায় ৩০কোটিরও বেশি অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করে। এছাড়া পেপ্যাল স্থানীয়ভাবে ২১টি দেশে কাজ করে। পেপ্যাল ২৬টি মুদ্রায় গ্রাহকদের অর্থ পাঠাতে, গ্রহণ করতে ও অর্থ সংরক্ষণ করার সুযোগ দিয়ে থাকে। এই মুদ্রাগুলো হল অস্ট্রেলিয়ান ডলার, ব্রাজিলের রিয়েল, কানাডার ডলার, চীনের ইউয়ান (শুধু কিছু চীনা একাউন্টে ব্যবহারযোগ্য), ইউরো, পাউন্ড স্টার্লিং, জাপানি ইয়েন, চেক ক্রোনা, ডেনিশ ক্রোন, হং কং ডলার, হাঙ্গেরীর ফ্রইন্ট, ইসরাইলের নতুন শেকেল, মালেশিয়ার রিঙ্গিত, মেক্সিকোর পেসো, নিউ জিল্যান্ডের ডলার, নরওয়ের ক্রোন, ফিলিপাইনের পেসো, পোল্যান্ডের যোলটি, সিঙ্গাপুরের ডলার, সুইডেনের ক্রোনা, সুইস ফ্যাঙ্ক, নতুন তাইওয়ানের ডলার, থাই বাত এবং যুক্তরাষ্ট্রে মার্কিন ডলার।
বাংলাদেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতাকে কারণ হিসেবে দেখিয়েছে ১৯৯৩ সালে ইউরোপে কার্যক্রম শুরু করা এ আর্থিক সংস্থাটি। গত কয়েক বছর ধরে সংস্থাটিকে দেশে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বিভিন্ন সময় নানা অনুষ্ঠানে বলেছেন, চলতি বছরেই পেপ্যাল বাংলাদেশে আসছে।
কিন্তু চলতি বছর আর আসে না। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে পেপলের আন্তর্জাতিক সদর দফতর থেকে একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে আসেন। তারা ওই সময় বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠকও করেন। সে সময় আইনগত নানা দিক পর্যালোচনা করে যায়। বাংলাদেশে অনলাইন পেমেন্টের ঝুঁকি পর্যালোচনা করে একটি মতামত দেওয়া হয় প্রতিষ্ঠানটির সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায়।
ফ্রিল্যান্সারদের কাজের মান, এ কাজে আগ্রহ ও বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ বাড়াতে হলে যত দ্রুত সম্ভব পেপ্যাল কার্যক্রম এ দেশে শুরু করতে হবে।
আন্তর্জাতিক অনলাইন লেনদেনের বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত ওডেস্ক ও ইল্যান্স-এর কান্ট্রি ম্যানেজার সাইদুর মামুন খান জানান, যারা ওডেস্ক এবং ইল্যান্স-এ কাজ করে তারা তেমন একটা সমস্যায় পড়ছে না। তারা সরাসরি ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে লেনদেন সেড়ে নিতে পারছে। সমস্যা পড়তে হচ্ছে ই-কমার্স ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের। তিনি আরো বলেন, ‘দেশের বাইরে থেকে কেউ যদি অনলাইনে কিছু কিনতে চায় তারা সরাসরি তা পারছে না, ফলে দেশে আন্তর্জাতিকভাবে ই-কমার্স ব্যবসায় নামতে পারছে না ব্যবসায়ীরা।’
বাংলাদেশে পেপ্যাল কার্যক্রম শুরু নিয়ে বেসিসের প্রাক্তন সভাপতি এ কে এম ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘গত ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পেপ্যাল বাংলাদেশসহ আরও কয়েকটি দেশে আসার পরিকল্পনা করলেও ২০১২’র শেষের দিকে প্রতিষ্ঠানের অাভ্যন্তরিণ রদবদলের কারণে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরুর চিন্তা বাদ দেয়া হয়।’
তিনি আরও জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সারদের মাধ্যমে আনুমানিক ৫০-৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের লেনদেন হয়। তবে অন্যান্য দেশের তুলনায় লেনদেন কম মনে করে পেপ্যাল। আর তাই তারা এখনই বাংলাদেশে আসছে না। এছাড়া তাদের অভ্যন্তরীণ আরও কিছু নীতি-নির্ধারণী বিষয়ও আছে।