লতিফ সিদ্দিকীর জঘন্য উক্তি
ভাষ্যকার
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর মন্তব্য দেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর গণমাধ্যমে ওই বিতর্কিত মন্তব্য প্রচারিত হওয়ার পর বিভিন্ন মহল তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং মন্ত্রীসভা থেকে তাকে বহিষ্কারেরও দাবি উঠেছে। খবরে বলা হয়েছে, গত ২৮ সেপ্টেম্বর রবিবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে প্রবাসী টাঙ্গাইলবাসীদের দেয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ), পবিত্র হজ্ব এবং তাবলিগ জামাত সম্বন্ধে আপত্তিকর উক্তি করেন। তার ওই উক্তি ২৯ সেপ্টেম্বর বেসরকারি টিভি চ্যা,েনলের খবরে অনলাইন নিউ পোর্টালে এবং ইউটিউবে প্রচারিত হলে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েন। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠন বিবৃতি দিয়ে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করেছে।
আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর উক্তি এতোটাই জঘন্য যে, তার পুনরুল্লেখ করতে যে কেউ দ্বিধান্বিত বোধ করবেন। তিনি হজ্ব প্রবর্তন সম্বন্ধে বলেছেন ‘‘আব্দুল্লাহ পুত্র মোহাম্মদ চিন্তা করল এ জাজিরাতুল আরবের লোকেরা কিভাবে চলবে। তারা তো ছিল ডাকাত। তখন একটা ব্যবস্থা করল। আমার অনুসারীরা প্রতি বছর একবার একসঙ্গে মিলিত হবে। এর মধ্যে একটা আয়-ইনকামের ব্যবস্থা হবে।‘ লতিফ সিদ্দিকী আরো বলেছেন ‘আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী। আমি জামায়াত ইসলামীরও বিরোধী। তবে তার চেয়েও হজ ও তাবলিগ জামাতের বিরোধী। তিনি আরো বলেন ‘ এ হজে যে কত ম্যান পাওয়ার নষ্ট হয়। হজের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরব গিয়েছে। তাদের কোনো কাম নাই। তাদের কোন প্রোডাকশন নাই। শুধু রিডাকশন করছে। শুধু যাচ্ছে আর দেশের টাকা নিয়ে ওখানে দিয়ে আসছে। অ্যাভারেজে যদি বাংলাদেশ থেকে এক লাখ লোক হজে যায় প্রত্যেকের ৫ লাখ করে ৫০০ কোটি টাকা খরচ হয়। লতিফ সিদ্দিকী বলেন, তাবলিগ জামাত প্রতি বছর ২০ লাখ লোকের জমায়েত করে। নিজেদেরতো কোনো কাজ নেই। সারাদেশের গাড়ি-ঘোড়া তারা বন্ধ করে দেয়।
সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, লতিফ সিদ্দিকীর ধৃষ্টতাপূর্ণ উক্তিতে অনুষ্ঠানস্থলেই তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। উপস্থিত লোকজন হৈ চৈ শুরু করলে তিনি দ্রুত সভাস্থল থেকে চলে যান। প্রবাসীরা তাৎক্ষণিকভাবে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর মন্তবে দেশের ভেতর তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে গুলশানে নিজ কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া লতিফ সিদ্দিকীর উক্তি সম্পর্কে বলেছেন-‘কোনো মুসলমান এ ধরনের বক্তব্য দিতে পারেন না। হিন্দু-খৃষ্টান যে কারও পক্ষেই এ ধরনের বক্তব্য দেয়া উচিত নয়। তার এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রকৃত চরিত্র ফুটে উঠেছে।’
লতিফ সিদ্দিকীর উক্তির প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলাম এক বিবৃতিতে ২৪ ঘন্টার মধ্যে মন্ত্রীসভা থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে। বিবৃতিতে সগঠনটির শীর্ষ নেতারা বলেছেন-বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পৃথিবীর দেড়শ’ কোটি মুসলমানের কাছে নিজের জীবনের চেয়েও প্রিয়। তিনি মানবতার মুক্তির দূত এবং মহান আল্লাহর প্রেরিত সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী। অন্যদিকে হজ মুসলমানদের প্রধান পাঁচটি মৌলিক স্তম্ভের অন্যতম। পবিত্র হজ ও হাজীদের কটাক্ষ করা, মহানবী (সঃ) কে বিদ্রুপাত্মক ভাষায় তাচ্ছিল্য করার স্পর্ধা দেখিয়ে বর্তমান মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী নিউইয়র্কে যে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য রাখছেন তা কেবল একজন নাস্তিকের পক্ষেই সম্ভব।’ এছাড়া দেশের ইসলামী দলগুলোর নেতারা লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, এটি ইসলামী মূল্যবোধের ওপর একটি বড়ো আঘাত। এজন্য লতিফ সিদ্দিকী মুরতাদ হিসেবে গণ্য হবেন। দলগুলো ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে লতিফ সিদ্দিকীকে ক্ষমা প্রার্থনারও আহ্বান জানিয়েছেন।
মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর উক্তি যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও অপরিনামদর্শী সে বিষয়ে বোধকরি কারোরই কোনো সংশয় নেই। লক্ষণীয় হলো, তিনি মহানবীকে অত্যন্ত তাচ্ছিল্য করে কথা বলেছেন। মহানবী (সাঃ) এর নামের শেষে ‘সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ দরূদ উচ্চারণ করা মুসলমানদের জন্য বাধ্যতামূলক। অথচ লতিফ সিদ্দিকী তাঁকে ‘ আব্দুল্লাহর পুত্র মোহাম্মদ’ বলে উল্লেখ করেছে! এটা যে চরম বেয়াদবী ও ধৃষ্টাতাপূর্ণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একজন মুসলমান মহানবীকে এমন তাচ্ছিল্য করতে পারে তা সবার ধারণার বাইরে।
হজ ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের অন্যতম। সামর্থবান মুসলমানদের ওপর হজ ফরজ করা হয়েছে। সে হজকে নিয়ে কটুক্তি করে যে ব্যক্তি, সে আর মুসলমান থাকে কী না সেটাও ভেবে দেখা দরকার। বিভিন্ন সংগঠন লতিফ সিদ্দিকীকে ‘নাস্তিক’ ‘মুরতাদ তূল্য’ বলে অভিহিত করেছে। ক্ষুব্ধ মুসলমানদের এ আখ্যা লতিফ সিদ্দিকীর জন্য অপ্রযোজ্য নয়। বস্তুত ধর্মে অবিশ্বাসী ‘নাস্তিক-মুরতাদ’রাই আল্লাহর বিধান, মহানবী (সাঃ) এবং ইসলামের হুকুম আহকাম ও অনুষ্ঠানাদি সম্বন্ধে এ ধরনের ঘৃণ্য উক্তি করতে পারে।
ইসলাম সম্পর্কে, মহানবী (সাঃ) সম্পর্কে কটুক্তিকারীদের পরিণতি চোখের সামনে থাকতেও কিছু অপরিমানদর্শী লোক মাঝে মধ্যে একই কাজ করে থাকে। যদিও তাদের সংখ্যা খুবই নগণ্য। দাউদ হায়দার, সালমান রুশদি, তসলিমা নাসরিন, হুমায়ূন আজাদরা তাদের রচনা ও উক্তির জন্য মানুষের ঘৃণাই শুধু পেয়েছেন। তাদের কেউই আর স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেনি। চোখের সামনে এমন দৃষ্টান্ত থাকার পরও কেন লতিফ সিদ্দিকী একই পথে পা বাড়ালেন এটা একটা বিস্ময়কর ব্যাপার। মুসলমানের ঘরে জন্ম নেয়া একজন মানুষ মহানবী ( সাঃ) ও হজ সম্বন্ধে এমন জঘন্য মন্তব্য করতে পারে এটা কেউ কল্পনাও করতে পারেন না।
মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে বিদেশে আছেন। এ বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তার এ মন্ত্রী ও সফর সঙ্গীকে এ বিষয়ে কিছু বলেছেন কীনা তাও জানা যায়নি। অনেকবার হজ্ব-ওমরাহ পালনকারী মুসলমান নারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দলের প্রেসিডিয়াম ও মন্ত্রিসভার এ সদস্যের এ ঘৃণ্য উক্তিকে কীভাবে নিয়েছেন আমরা জানি না। তবে, ৩০ সেপ্টেম্বর অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো খবর দিয়েছে যে, লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে অব্যহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বর্তমানে লন্ডনে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং তিনি দেশে ফেরার পর সিদ্ধান্তটি কার্যকর হবে বলে খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যদি এ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তাহলে তাকে সঠিক ও সময়োপযোগী বলে সাধুবাদ জানাতে হয়। তবে, এর বাইরে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া, সবশ্রেষ্ঠ নবী (সাঃ) ও পবিত্র হজ সম্পর্কে কটুক্তি করার অপরাধে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে সরকার আর কী ব্যবস্থা নেয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।