এবার উগ্র হিন্দু সংঘের সাথে তাবলীগ জামায়াতকে তুলনা করলেন লতিফ সিদ্দিকী

হজ নিয়ে মন্তব্য করে তোপের মুখে থাকা মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এবার উগ্র হিন্দু সংঘের সাথে তুলনা করলেন তাবলীগ জামায়াতকে। একই সাথে তিনি তার আগের বক্তব্যে অনড় বলেও জানিয়েছেন। তবে শুধুমাত্র তার দলের নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিলেই তিনি তার সম্মানে মন্তব্য প্রত্যাহার করে নিতে পারেন। মেক্সিকো থেকে বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন।
লতিফ সিদ্দিকী জানান, একজন স্বাধীন ও আধুনিক মানুষ হিসেবেই তিনি হজ সম্পর্কে এই মন্তব্য করেছেন।
তিনি বলেন, চাপের মুখে তার পদত্যাগ করার কোনো প্রশ্নই আসে না।
‘আমি কিছুই করবো না। প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশ দেবেন আমি সেটা প্রতিপালন করবো।’ বলেন তিনি।
তিনি বলেন, তার এই মন্তব্যকে ঘিরে বিভিন্ন দলের নেতারা যেসব কথাবার্তা বলছেন, তার অপসারণের যে দাবি উঠেছে, সেসব বিষয়ে তিনি জানেন।
আমি শুধু আমার বিশ্বাসের কথা বলেছি। এতে কারো কারো আঘাত লাগতে পারে। এবং তারাও আমাকে আঘাত করে মতামত প্রকাশ করছে।
বিবিসির এই সাক্ষাৎকারটি হুবহু তুলে দেয়া হলো
বিবিসি: আপনার সাথে কি প্রধানমন্ত্রীর দলে নিউইয়র্কে যারা রয়েছেন তাদের সাথে যোগাযোগ হয়েছে?
লতিফ সিদ্দিকী: না, আমার সাথে যোগাযোগ হয়নি।
বিবিসি: কথা হয়নি?
লতিফ সিদ্দিকী: না।
বিবিসি: প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা হয়েছে?
লতিফ সিদ্দিকী: আমি সাধারণত প্রধানমন্ত্রীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করি না। কারণ তিনি আমাকে একটা সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব দিয়েছেন। সেই দায়িত্বটা আমি নিষ্ঠা ও সততার সাথে পালনের চেষ্টা করি।
বিবিসি: আপনার বক্তব্য নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, সেটা নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ইতোমধ্যে প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা করছেন-সেটার ব্যাপারে আপনি কী জ্ঞাত?
লতিফ সিদ্দিকী: হুম, জ্ঞাত।
(এ সময় লতিফ সিদ্দিকীকে নিউইয়র্কে তার দেয়া বক্তব্য শোনাতে চায় বিবিসি)
লতিফ সিদ্দিকী: আমাকে শোনাতে হবে না। যা রেকর্ড করা আছে ওটা ঠিকই আছে। আমি বলেছি।
বিবিসি: তাহলে আপনি দায়িত্ব স্বীকার করছেন?
লতিফ সিদ্দিকী: আমি ১০০ ভাগ দায়িত্ব নিয়েছি। দায়িত্ব নেব মানে, আমি যা বলব-তার দায়িত্ব নেব না, কে বলল আপনাকে? আমি একজন দায়িত্বশীল লোক।
বিবিসি: আপনি কি সেই বক্তব্য পরে আবারও শুনেছেন?
লতিফ সিদ্দিকী: আমার শোনার দরকার নেই। আমি শুনতে পারছি যে, জটিলতা…কেউ কেউ … কারও অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে।
বিবিসি: সেটা নিয়ে এখন আপনার অনুভূতি কি, আপনার কি মনে হচ্ছে?
লতিফ সিদ্দিকী: আমার কোনো অনুভূতি নেই। আমার বিশ্বাসের কথা আমি বলেছি। কারো কারো আঘাত লাগতে পারে। এখন তারাও আমাকে আঘাত করে মতামত প্রকাশ করছে। তাতেও আমি বিরক্ত হচ্ছি না।
বিবিসি: কিন্তু এই মন্তব্যেকে কেন্দ্র করে মন্ত্রিসভা থেকে আপনাকে বিদায় নিতে হতে পারে-এটাই জানবার পরে আপনি কী দুঃখিত বা অনুতপ্ত?
লতিফ সিদ্দিকী: না, আমার অনুতাপ বা দুঃখের কোনো কারণ নেই। আমার প্রধানমন্ত্রী তার রাষ্ট্র পরিচালনে তিনি যেটা ভালো মনে করবেন, সেটা করবেন। আমি যদি তার জন্য বোঝা হয়ে যাই, তিনি তার বোঝা রাখবেন কেন?
বিবিসি: আপনার বক্তব্যে যেটা সমালোচনা হয়েছে, সমালোচনা হয়েছে যে, আপনার বক্তব্যে ইসলাম ধর্মে যারা বিশ্বাসী তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে। আপনি কি এটার সাথে একমত?
লতিফ সিদ্দিকী: তারা হাজার হাজার কোটি কোটি মানুষ মেরে ফেলতেছে, ওটা করতেছে সেটা করতেছে। তাতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে না। আমি একটা…এই হজ তো মোহাম্মদের (হযরত মোহাম্মদ স.) জন্মের আগেও প্রচলিত ছিল। এটা কী মোহাম্মদ প্রচলন করেছে? আর তাবলিগের তো কোনো ব্যবস্থা ছিল না। তাবলিগের মাধ্যমে আমি মনে করি, ভারতবর্ষে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টির করার জন্য একেবারে….ওদিকে হলো সংঘ পরিবার এদিকে তাবলিগ পরিবার। এ নিয়ে এতো কথার দরকারটা কি আছে?
বিবিসি: কিন্তু যারা বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন বা তাতে আহত হয়েছেন তারা বলছেন…ইসলাম ধর্মের অন্যতম স্তম্ভকে আপনি আঘাত করেছেন, এ কথা দ্বারা?
লতিফ সিদ্দিকী: এটা তাদের অধিকার। আমি কাউরে…আমি ইসলাম ধর্মের কোনো স্তম্ভকে আঘাত করি নাই। আমি আমার মতামত প্রকাশ করেছি।
বিবিসি: ইসলাম ধর্মের নবীকে নিয়ে আপনি যে মন্তব্য করেছেন…
লতিফ সিদ্দিকী: আমি কোনো কিছুকেই নিয়ে মন্তব্য করি নাই। আমি যা করেছি, আমার বিশ্বাসের কথা বলেছি। আমি ব্যক্তি স্বাধীন হিসেবে, আমি একজন আধুনিক মানুষ হিসাবে, আমার মতামত আমি প্রকাশ করতে পারি। ব্যক্তি স্বাধীনতার জন্য এতো বড় বড় কথা বলা হয়। তাহলে আমার ব্যক্তি স্বাধীনতায় কেনো হস্তক্ষেপ করা হবে?
বিবিসি: কিন্তু আপনার কি মনে হয় না, ব্যক্তি হিসেবে আপনি যে মন্তব্য করতে পারেন-সরকারের মন্ত্রী হিসেবে সে বক্তব্য বলার ক্ষেত্রে আপনার কিছু বিধি-নিষেধের অধীনে থাকতে হতে পারে?
লতিফ সিদ্দিকী: হ্যাঁ, বিধি-নিষেধ আছেই। সেটাতো আমি আমার দেশে করি নাই। আমি ভাবছিলাম মুক্ত পৃথিবীতে আসছি, যেখানেই সবাই মুক্ত বিহঙ্গ, এখানে কোনো কিছুতেই বাধা নাই। এখানে যে কালো বিড়াল এতো রয়ে গেছে, তাতো আমি জানি না।
বিবিসি: সুতরাং আপনি কি তাহলে পদত্যাগ করবেন?
লতিফ সিদ্দিকী: আমি কিছুই করব না। আমার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশ দেবেন আমি শুধু তাই প্রতিপালন করব।
বিবিসি: আপনি ব্যক্তি স্বাধীনতার কথা বলছেন, বাংলাদেশে অনেকের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের জন্য শাস্তি হয়েছে…
লতিফ সিদ্দিকী: এটা যদি আইনের মধ্যে পড়ে, তাইলে আমার যে শাস্তি হবে, আমি আনন্দের সাথে মেনে নেব।
বিবিসি: কিন্তু আপনি আপনার বক্তব্য প্রত্যাহার করছেন না বা সেখান থেকে সরে আসছেন না?
লতিফ সিদ্দিকী: প্রশ্নই ওঠে না। একমাত্র…এখানে একটা কথা আছে, আমার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমার নেতা যদি আমাকে আদেশ করেন যে-আপনি এটা প্রত্যাহার করেন। তাঁর সম্মানে আমি এটা প্রত্যাহার করতে পারি। তা ছাড়া কোনো কিছুতেই আমি প্রত্যাহার করব না।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button