ওবামা-নেতানিয়াহুর ‘অদ্ভুত বৈঠক’
তারা দুজন বন্ধু, শত্রুও বটে তারা। বুধবার ওভাল অফিসে বৈঠকে বসেছিলেন তারা। দুজনের চেয়ারের মধ্যে ব্যবধান ছিল ১৮ ইঞ্চি। এর কারণও যুক্তিসংগত- দুজনের ব্যক্তিগত রসায়ন। তারা দ্বাদশ বারের মত বৈঠকে মিলিত হন, এটাই ছিল আকর্ষণ।
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পিছনে হেলান দিয়ে বসেছিলেন আর শোভনীয়ভাবে পা এসপার-ওসপার করছিলেন। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বসেছিলেন বাঁকা হয়ে। তার পা দুটি ভূমিতে ছিল। তিনি ওবামার দিকে ঝুঁকে বসেছিলেন। অবস্থাটা এমন যেন তিনি যে কোনো মুহূর্তে লাফ দিয়ে উঠে যেতে পারেন। ওবামা নেতানিয়াহুকে ‘বিবি’ সম্বোধন করেন আর নেতানিয়াহু ওবামাকে বলেন, ‘মিস্টার প্রেসিডেন্ট’। গাজা যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের মধ্যে সম্পর্কের তিক্ততার পর এই প্রথম বৈঠকে মিলিত হলেন। এটা ছিল দুনেতার মধ্যে দ্বাদশ বৈঠক। বৈঠক শেষে ছয় মিনিট তার সুখ স্মৃতিচারণ করেন। ওবামা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সম্পর্ককে আবারো ‘অবিচ্ছেদ্য বন্ধন’ বলে মন্তব্য করেন। নেতানিয়াহু ইসরাইলের প্রতি ‘অপ্রতিহত সমর্থন’ দানের জন্য ওবামাকে ধন্যবাদ জানান। এরপর এলো করদর্মনের পালা-চলে মাত্র ২.২ সেকেন্ড। এসময় দুজনকেই নিশ্চল এবং ক্রুদ্ধ দেখাচ্ছিল। উপবিষ্ট দুজন লোক একজন আরেকজনের চোখের দিকে তাকাচ্ছিলেন এবং হাত নড়াচড়া করছিলেন। এ সময় ক্যামেরা ঝলকানি আলো ছড়ালেও তাদের মুখেহাসির ছটা ছিল না।
সাংবাদিকদের আগেই বলা হয়েছিল যে দু’নেতা কোনো প্রশ্নের জবাব দেবেন না। কারণ বোঝাই যাচ্ছিল- এতে আরো বিব্রতকর অবস্থা তৈরি হতে পারে। দু’নেতা তাই একান্তে আলাপ সারেন। এরপর ওবামা ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সাথে মধ্যাহ্নভোজ সারেন। হোয়াইট হাউজ ওবামা-নেতানিয়াহুর বৈঠকের যে শিডিউল প্রকাশ করেছে তাতে প্রধানমন্ত্রীকে মধ্যাহ্নভোজের অতিথি হিসেবে দেখানো হয়নি।
এতো গেল বৈঠকের পালা। এরপর কী হলো? নেতানিয়াহু হোয়াইট হাউজ ত্যাগের দুঘণ্টা পরই প্রেস সেক্রেটারি জোশ আর্নেস্ট পূর্ব জেরুসালেমে নতুন করে ইহুদিবসতি স্থাপনের পরিকল্পনার কড়া সমালোচনা করেন। ইসরাইলও অনুরূপ ভাষায় এর জবাব দেয়। সব মিলিয়ে বৈঠকটি ছিল অদ্ভূত। তবে সবচেয়ে বাজে ছিল না (বৈঠক থেকে একবার রাগান্বিত হয়ে উঠে গিয়েছিলেন ওবামা)। ২০১১ সালের নভেম্বরে ফরাসী প্রেসিডেন্ট নেতানিয়াহুকে ‘মিথ্যাবাদী’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। তখন ওবামা বলেন, ‘আপনার চেয়ে তার সাথে আমার বেশি কারবার করতে হয়।’ বুধবারের বৈঠকে ওবামা ভদ্রজনোচিতভাবেই যেন সেই কথার পুনরাবৃত্তি করলেন।
ওবামা বলেন, ‘ নিঃসন্দেহে হোয়াইট হাউজে তিনি কোনো নতুন আগন্তুক নন। আমার মনে হয় প্রেসিডেন্ট থাকাকালে বিশ্বের অন্য কোনো নেতার চেয়ে আমি বিবির সাথে মিলিত হয়েছি।’ এ সময় নেতানিয়াহুর বডি ল্যাংগুয়েজ দেখে বোঝাই যাচ্ছিল যে তিনি ভীষণ অস্বস্তি বোধ করছেন।
ক্যামেরার সামনে সংক্ষিপ্ত ব্রিফিং শেষ হলে তিনি তার পা দুটি সোজা করে বসেন এবং তার কোট ঠিক করেন। এরপর তিনি বাম পায়ের ওপর তার বাম হাতের তালু রাখেন। চেয়ারের ওপর তিনি তার হাতের আঙ্গুল ছোড়াছুড়ি করতে থাকেন।
সাংবাদিকদের সাথে ব্রিফিংয়ে ওবামা বলেন, ‘ইসরাইলিদের জীবন বাঁচাতে আয়রন ডোম কর্মসূচিতে অবদান রাখতে পেরে আমেরিকানরা গর্বিত (দৃশ্যত খোটা দিয়ে)।’ ওবামার মুখপাত্র নেতানিয়াহুর বসতি নীতির কড়া সমালোচনা করলেও ওবামা অন্তত ক্যামেরার সামনে এভাবে বলা থেকে বিরত থাকেন।
ওবামা আরো বলেন, ‘এটা নিশ্চিত করতে হবে যে রকেট হামলা থেকে ইসরাইলি নাগরিকরা যেন তাদের বাড়িতে এবং স্কুল শিশুরা স্কুলে নিরাপদে থাকতে পারে। পাশাপাশি আমরা ফিলিস্তিনি শিশুদের ট্রাজেডিও দেখতে চাই না।’ ওবামার তিন মিনিট বক্তব্য শেষে এলো নেতানিয়াহুর তিন মিনিটের পালা। এ সময় নেতানিয়াহু ‘অব্যাহত বন্ধুত্বকে’ স্যালুট জানান।
তিনি ইরানের পরমাণু গবেষণা নিয়ে চুক্তি না করার জন্য ওবামাকে অনুরোধ করেন এবং বলেন, ‘ আমি দৃঢ়ভাবে আশা করি যে আপনার নেতৃত্বে তেমন কিছু ঘটবে না।’ দুনেতা প্রায় দুঘণ্টা একান্তে কথা বলেন। এটা নির্ধারিত সময়ের বেশি। তবে তাদের মধ্যে কোনো সমঝোতা হয়েছে নাকি মতানৈক্য সৃষ্টি হয়েছে তা জানা যায়নি। এখন দেখার পালা তাদের ত্রয়োদশ বৈঠকটি কেমন হয়।