কোরবানি : দেশে দেশে

Qurbaniবিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে মুসলমানদের অন্যতম উৎসব ঈদ উল আযহা। ঈদ মানেই খুশি। মুসলমানদের কাছে এটা বড় ঈদও। এই ঈদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো কোরবানি। তাই একে কোরবানির ঈদও বলা হয়। পশু জবাইয়ের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে নিজেকে পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ এবং পরিশুদ্ধ করার সুযোগকে কাজে লাগায় মুসলমানেরা। এ কারণেই বিশ্বের যেখানেই মুসলমানরা বাস করুক না কেন, সামর্থ্য অনুযায়ী কোরবানিতে অংশ নেয়।
তবে অন্য সব কিছুর মতো স্থানীয় পরিবেশ-পরিস্থিতির আলোকে কোরবানিতেও বেশ বৈচিত্র্য দেখ যায়। একেক দেশে একেক ধরনের পশু কোরবানির বাহুল্য দেখা যায়। পশু সংগ্রহেও দেখা যায় ভিন্নতা।
তবে মিলও আছে অনেক। কোরবানির পশুর তালিকায় গরু, ছাগল, ভেড়া, উট, দুম্বারই প্রাধান্য দেখা যায়। বাংলাদেশে গরুই প্রধান কোরবানির পশু। এরপর রয়েছে ছাগল। সামান্য কিছু উট ও দুম্বাও দেখা যায় কোরবানির হাটে।
মালয়েশিয়ায় ঈদ উল আযহাকে স্থানীয় ভাষায় হারি রায়া হাজিও বলা হয়। অর্থাৎ হজের উৎসব। এই দেশে এবং প্রতিবেশি ইন্দোনেশিয়ার মুসলমানদের মধ্যে হজকে বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়। অনেক তরুণই বিয়ে করার আগে হজ সেরে নেন।
মালয়েশিয়ায় কোরবানিতে ভেড়াই প্রধান পশু। তবে গরু, ছাগলেরও বিপুল উপস্থিতি দেখা যায়। মালয়েশিয়ানরা সাধারণত সমাজবদ্ধভাবে কোরবানি করতে পছন্দ করে। স্থানীয় মসজিদে সেখানকার সব পশু একসাথে করে সব গোশত একসাথে করে বণ্টন করা হয়।
মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার ঐতিহ্যে বেশ সামঞ্জস্য রয়েছে। সম্প্রতি সেখানে ‘বিলাসী’ কোরবানির হাট দেখা যাচ্ছে। সেখানে কোরবানির হাটগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া দেখা যায়। ল্যাপটপ, ট্যাব ইত্যাদি হাতে সেলস গার্লদের উপস্থিতিতে হাটগুলো ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। এগুলোকে হাট না বলে পশুর শোরুম বলাই ভালো। বিলবোর্ডেও এগুলোকে হাট বা বাজার না বলে ‘কোরবানি পশুর মল’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন এসব মলে আমাদের পরিচিত হাটের কোনো চিহ্নই দেখা যাবে না। এসব গরুতে ক্ষতিকর হরমোন বা কৃত্রিমভাবে মোটাতাজাকরণপ্রক্রিয়ার ব্যবহার অকল্পনীয়। স্বাস্থ্য সচেতনা বেশ ভালোভাবেই দেখা যায়।
দামি দামি গাড়িতে করে ধনী ক্রেতারা এইসব শোরুমে ভিড় জমান, চড়া দামে কেনের পশু। দেশটির মুসলমানেরা যত সমৃদ্ধ হচ্ছেন, তাদের কোরবানির জৌলুসও তত বাড়ছে। এসব শোরুমের গরুর দাম সাধারণ এক হাজার থেকে ১৬ শ’ ডলার হয়ে থাকে। ওজন ১.৭ টনের মতো। অস্ট্রেলিয়া থেকে সাধারণ এসব গরু আমদানি করা হয়ে থাকে।
এ ধরনের একটি শো রুমের মালিক রামদোনি হোসাইনুর বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, তিনি এর মধ্যেই পাঁচ হাজার গরু বিক্রি করে ফেলেছেন। গতবার বিক্রি করেছিলেন ৪,৭৫০টি।
হিন্দু প্রধান দেশ হওয়ায় ভারতীয় মুসলমানদের অনেকেই গরু কোরবানি দিতে কিছুটা সমস্যায় পড়েন। ফলে ছাগল বা ভেড়া কোরবানির দিকেই তাদের বেশি আগ্রহ থাকে। এই গোশত তারা স্বজন, প্রতিবেশি ও গরিবদের মধ্যে বণ্টন করে থাকে। দেশটিতে অবশ্য মুসলমানের সংখ্যা কম নয়। হাজিও আছেন অনেক। চলতি বছর দেশটি থেকে এক লাখ ৩৬ হাজার মুসলমান হজ করেছেন। বিজেপির দুই সিনিয়র নেতা হজ প্রতিনিধিদলে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এরা হলেন সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আরিফ বেগ (ভুপাল) এবং ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট অব পার্টির সংখ্যালঘু বিভাগের আবদুল রাশিদ আনসারি (দিল্লি)।
পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে অবশ্য যেখানে সেখানে কোরবানি দেয়া যায় না। জবাইয়ের পর রক্ত ও অন্যান্য বর্জ্য যাতে পরিবেশের ক্ষতি করতে না পারে, সেদিকে কর্তৃপক্ষ কড়া নজর রাখে। এ কারণে ইউরোপ, আমেরিকার দেশগুলোতে স্বীকৃত কসাইখানায় কোরবানি দিতে হয়। এসব দেশে মুসলমানদের মধ্যে মসজিদভিত্তিক কর্মসূচির প্রতি বিশেষ আগ্রহ দেখা যায়। সাধারণত মসজিদের মাধ্যমেই কোরবানি এবং গোশত বিতরণের কাজ সম্পন্ন হয়।
আরব দেশগুলোতে দুম্বা, উট ও ভেড়া কোরবানি দিতে দেখা যায় বেশি। হজের কারণে সৌদি আরবে বিপুলসংখ্যক পশু কোরবানি দেয়া হয়। এসব পশুর গোশতও হয় প্রচুর। বর্তমানে এসব গোশত আধুনিক পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা হয়। তারপর বিশেষ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন দেশে তা পাঠানো হয়।
তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিজস্তানের মতো মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে প্রধানত ভেড়া কোরবানি দেয়া হয়। কিরগিজস্তানে কোরবানির ঈদকে ‘কোরবান বৈরাম’ও বলা হয়।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button