জমে উঠেছে কাজিরবাজার পশুর হাট
নগরীর ঐতিহ্যবাহী কাজিরবাজার কোরবানীর পশুর হাট পুরাপুরি জমে উঠেছে। বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ গরু-ছাগল উঠেছে। গতকাল শুক্রবার বাজারে ক্রেতাদের উপছে পড়া ভিড় টেলে পশুর হাট থেকে গরু কিনে নিয়ে গেছে অনেকেই। দাম নাগালের ভিরতের রয়েছে। এ ব্যাপারে বাজার কর্তৃপক্ষের নিজস্ব লোক ছাড়াও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থাও থাকছে। যেন ক্রেতারা স্বর্চ্ছন্দে গরু-ছাগল ক্রয় করতে পারেন। পাইকারদের ও ক্রেতাদের সুবিধার্থে বাজারের রয়েছে জাল টাকা পরিক্ষার বুথ।
সিলেটের একমাত্র বৈধ ও বৃহৎ পশুর হাট কাজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশী-বিদেশী বিভিন্ন সাইজের গরু ও ছাগল বাজারে উঠেছে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিক্রেতারা নিয়ে এসেছেন গরু-ছাগল। এখনো ট্রাক ভরে আসছে গরু। এছাড়া ভারত ও নেপালের গরুও রয়েছে কাজির বাজার হাটে। সিলেটের সবচেয়ে বড় পশুর হাট কাজিরবাজার। সিলেটের সর্বস্তরের লোকজন এখান থেকে গরু-ছাগল কোরবানীর জন্য ক্রয় করে থাকেন। সিলেট অঞ্চলের মন্ত্রী-এমপি সরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে নগরীর ও শহরতলীর সর্বশ্রেণীর অধিকাংশ ক্রেতা সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কাজির বাজার গরুর হাটে আসেন গরু-ছাগল কিনে থাকেন।
বাজার ঘুরে জানা যায়, পবিত্র ঈদুল আযহা বা কুরবানী ঈদকে সামনে রেখে বেপারীরা প্রচুর গরু নিয়ে হাটে এসেছেন। গতকাল শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর পর ব্যাপক হারে ক্রেতা সমাগম ঘটতে থাকে কাজিরবাজার পশুর হাটে। বাজার ঘুরতে আসা সিলেট জনতা ব্যাংকের জিএম মাহমুদুল হক ও ডিজিএম মো. রিয়াজুল ইসলাম জানান, কুরবানীনর জন্য আমরা গরু কিনতে এসেছি। কিন্তু বাজারে গরু-ছাগলের দাম চড়া। দরকষা-কষি করেও দাম কমাচ্ছে না। ন্যায্যমুল্যে দেশীয় ভালো গরু কিনতে চাই। রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকায় এবার বিপুল সংখ্যক প্রবাসী দেশে এসেছেন। দুবাই থেকে দেশে আসা প্রবাসী ইদ্রিস আলী জানান, সব সময় ছুটি পাওয়া যায় না। কোরবানী দেয়ার জন্য তিনি কাজিরবাজারে পছন্দের গরু খোজঁ করছেন।
গরু কিনে যাওয়ার পথে রাসেল আহমদ নামের এক ক্রেতা জানান, অনেক দর কষা-কষি করে কিনতে হয়েছে। নিজের গরু দেখিয়ে তিনি বলেন, এটার দাম চেয়ে ছিল পঞ্চাশ হাজার টাকা। সকাল থেকে দাম-দর করে সাড়ে তেত্রিশ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছি। কাগজপত্রসহ দাম পড়েছে প্রায় পয়ত্রিশ হাজার টাকা।
সত্তার আহমদ জানান, ইন্ডিয়া থেকে নিয়ে আসা চৌত্রিশটি গরুর মধ্যে ১২টি গরু বিক্রি করেছি। প্রতিটি গরুর দাম ১ লাখ ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজারের মধ্যে রয়েছে। ইন্ডিয়া থেকে কিনে নিয়ে আসছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, বর্ডার থেকে কিনে নিয়ে এসেছেন।
উত্তর ভাগ, পাচঁ মাইলের গরু ব্যবসায়ী সাধন ও ফজলু মেম্বার জানান, ছোট-বড় ৯২টি নেপালের গরু বেনাপোল থেকে কিনে নিয়ে এসেছেন। এর মধ্যে দুটি গরু বিক্রি করেছেন, পঞ্চাশ হাজার ও বায়ান্ন হাজার টাকা দামে।
ঝিনাইদহ থেকে একত্রিশটি গরু নিয়ে আসা মন্টু মিয়া জানান, একত্রিশটি গরুর মধ্যে এখন পর্যন্ত একসাথে তিনটি গরু দুই লাখ চলি¬শ হাজার টাকা দামে বিক্রি করেছি। আমার কাছে ষাট হাজার থেকে শুরু করে এক লাখ টাকা দামের দেশীয় গরু রয়েছে।
কাজিরবাজার পশুর হাটের কর্তৃপক্ষ জানান,নগরীর কাজিরবাজারই একমাত্র সর্ববৃহৎ পশুর হাট। যুগ যুগ ধরে এ বাজারে গরু ছাগল বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারাও স্বাচ্ছন্ধে এ বাজার থেকে পশু ক্রয় করেন। এখানে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের জন্য নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু নগরীর অন্যান্য স্থানে সিটি কর্পোরেশন ও প্রশাসনের অসাধু কিছু লোকের সহায়তায় খালি জায়গায় বাজার বসিয়ে বেশী দামে পশু বিক্রি করে থাকেন বিক্রেতারা। এমনকি ক্রেতারাও হয়রানীর শিকার হন। এ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া গরু ছাগল ক্রেতারা ক্রয় করে নিরাপদে বাড়ি নিয়ে যেতে পারছেন।
জেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তরের ভেটেনারী সার্জন ডাঃ আতাউর রহমান ও টেকনিক্যাল স্টাফ মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, তাৎক্ষনিক অসুস্থ পশুর চিকিৎসার জন্য জেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তরের অধীনে সার্বক্ষনিক নজরদারি রাখা হচ্ছে। গত বুধবার থেকে এ কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে। ঈদের পরদিন পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত করে আগামী ৭ তারিখ পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে।