প্রতিমা বিসর্জনে শেষ হলো হিন্দুদের দুর্গাপূজা
দেবী দুর্গার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হলো হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রা শেষে গতকাল শনিবার বিকেল থেকে রাজধানীর সদরঘাট এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীতে আনুষ্ঠানিকভাবে বিসর্জন শুরু হয় এবং চলে রাত পর্যন্ত। এদিকে দেবী বিসর্জনকে কেন্দ্র করে হিন্দুপল্লী জুড়ে ছিল বিষাদের ছায়া।
মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে আগের দিন শুক্রবারই শেষ হয় পূজার সব আনুষ্ঠানিকতা। গতকাল ছিল বিসর্জন তথা দুর্গোৎসবের সমাপনী দিন। হিন্দু বিশ্বাস মতে, দেবী এদিন মর্ত্যলোক ছেড়ে স্বর্গলোকে যান। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে ভাঙ্গে পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গোৎসবের এই মিলন মেলা।
প্রতিমা বিসর্জনকে সামনে রেখে পূজাম-পগুলোর বাতাসে বিরাজ করে বিষাদের ছায়া। ঢাক-কাঁসরের বাদ্যি-বাজনা, রাত্রি উজ্জ্বল করা আরতি ও পূজারি-ভক্তের পূজা অর্চনায় কেবলই মা দুর্গার বিদায়ের আয়োজন। রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরসহ সকল মন্দির ও ম-পের চিত্র ছিল একই রকম।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বিজয়া অনুষ্ঠানে আসা সুনিল চন্দ্র বলেন, পূজার এই কয়েকটা দিন বেশ আনন্দ করেছি। কিন্তু আজ খুব খারাপ লাগছে কারণ আর কিছুক্ষণ পরই মা স্বর্গলোকে ফিরে যাবেন। মাকে বিদায় দিতে মন চাচ্ছে না। তারপরও মাকে আজ বিদায় দিতে হবে।
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির পুরোহিত নারায়ণ চক্রবর্তী জানান, দেবী মা ধরায় এসেছেন নৌকায় চড়ে এবং স্বর্গলোকে যাবেন পালকিতে (দোলায়) চড়ে। পৃথিবীর যত অকল্যাণ, হিংসা বিদ্বেষ হানাহানি সব ধুয়ে মুছে পৃথিবীর বুকে কল্যাণ রেখে যাবেন মা।
পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী, বিকেল চারটায় রাজধানীর বনানী, পলাশীর মোড়, শাহবাগ, পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কে শোভাযাত্রা করেন দেবীর ভক্তরা। অনেকেই ট্রাকে, ছোট ছোট যানবাহনে করে মায়ের প্রতিমা নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। ঢাক-ঢোল, কাঁসার বাজনার সঙ্গে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি গানের মিউজিকের শব্দ আর ভক্তদের উল্লাসধ্বনিতে রাজধানীর সড়ক মুখরিত হয়ে ওঠে। নারীরা দেবীর ললাটের সিঁদুর আপন ললাটে এঁকে নেন। আগামী শরতে আবার বাঙালি হিন্দুর ঘরে ঘরে মা দুর্গা ফিরে আসবেন, সে কামনায় থাকবেন ভক্তরা।
বাংলাদেশ পূজাম-প উদযাপন কমিটির সভাপতি কাজল দেবনাথ জানান, রাজধানীতে এবার মোট ২২১টি পূজাম-প হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৬০ থেকে ৬৫টি পূজাম-প থেকে প্রতিমা নিয়ে আসেন বুড়িগঙ্গায়। এছাড়া সারাদেশে ২৮ হাজার ৪৮৭টি পূজাম-পে এবার পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিচ্ছিন্নভাবে বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটে নিউস্কাটন পূজা উদযাপন কমিটির পক্ষ থেকে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে বীণ স্মৃতি ঘাটে প্রথম প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হলেও শোভাযাত্রা শেষে মহানগর কমিটির বিসর্জন শুরু হয় পাঁচটার পর। বেদনাবিধূর আবহে বিসর্জন চলে রাত পর্যন্ত। এদিকে বিসর্জন অনুষ্ঠান নির্বিঘœ করতে আইনশৃংখলা বাহিনী প্রয়োজনীয় নেয়।
বুড়িগঙ্গা নদীতে কয়েক হাজার ধর্মপ্রাণ হিন্দু নারী-পুরুষ ও শিশুরা প্রতিমা বিসর্জনে অংশ নেন। এর সঙ্গে ঢাকঢোল ও কাঁসার ঘণ্টা এবং শঙ্খধ্বনি দেয়া হয়। বিসর্জনের সময় ‘দুর্গা মা কী, জয়’, ‘আসছে বছর আবার হবে’ বলে ধ্বনি দেয়া হয়। হাজার হাজার ভক্তের উপস্থিতিতে ঢাকের শব্দের সঙ্গে কাঁসার ঘণ্টা বাজিয়ে নৌকাযোগে প্রতিমাগুলো নদীতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব। রাজধানী ও আশেপাশে প্রতিমাগুলো বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও আশুলিয়ার কাছের নদীগুলোতে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়। এছাড়া পূজাম-পের কাছে পুকুর-ডোবা, খাল-বিলেও প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়।