যুক্তরাষ্ট্রে পবিত্র ঈদ-উল-আজহা উদযাপিত

Eidতৈয়বুর রহমান টনি, নিউইয়র্ক: মুসলিম মিল্লাতের ধর্মীয় দু’টি উৎসবের মধ্যে অন্যতম একটি উৎসব হচ্ছে ঈদুল আযহা। বছর ঘুরে আনন্দের বার্তা নিয়ে আবারো আমাদের মাঝে উপস্থিত হল পবিত্র ঈদুল আযহা। কুরবানীর ইতিহাস ততোটাই প্রাচীন যতোটা প্রাচীন মানব অথবা ধর্মের ইতিহাস। আল্লাহ পুরস্তির কুরবানী নামক এ মহান নিদর্শন মানব জাতির প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত সকল শরীয়তেই কার্যকর ছিলো। সকল নবীর উম্মতকেই কুরবানী করতে হয়েছে। প্রত্যেক উম্মতের ইবাদতের এ ছিল একটা অপরিহার্য অংশ। আল্লাহতায়ালার এ বিধান মানব জাতির সৃষ্টি লগ্ন থেকেই কার্যকর হয়ে আসছে।
আমেরিকাসহ সারা বিশ্বের মুসলিম নর-নারীগণ মেতে উঠেছে ঈদের আনন্দে। ধর্মীয় আমেজে ও উৎসব মুখর পরিবেশে নিউ ইয়র্ক সহ সমগ্র উওর আমেরিকায় শনিবার সকালে ঈদ-উল-আযহা’র নামাজ অনুষ্ঠিত হলো। অধিকাংশ মুসলমানরা শনিবার দিন ঈদ উজ্জাপন করছেন। নিউইয়র্ক সহ বড় বড় নগরীতে অল্প সংখ্যক মুসলমানরা রোববারে ঈদ করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা পবিত্র হজ এবং ঈদুল আজহা উপলক্ষে মুসলমানদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। হোয়াইট হাউস থেকে দেয়া শুভেচ্ছা বার্তায় ঈদ উৎসবে মুসলমানদের ত্যাগ ও সহমর্মিতার কথা উল্লেখ করেন। শান্তি, সমৃদ্ধি এবং ন্যায় বিচারের কথা স্মরণ করে প্রেসিডেন্ট ওবামা এবং ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা সারা বিশ্বের মুসলমানদের ঈদ মোবারক জানিয়েছেন।
এ উপলক্ষে বিশ্বের রাজধানী হিসেবে খ্যাত নিউ ইয়র্ক সিটির কুইন্স, ব্রুকলিন, ব্রঙ্কস, এস্টোরিয়া, ওজনপার্ক, ম্যানহাটন, লংআইল্যান্ড ও নিউজার্সীর বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকায়  নতুন পোশাক পরিহিত নতুন প্রজন্মের অভূত পূর্ব সম্মিলন। ঈদ জামাত গুলোতে ও নারী/পুরুষের সাথে নতুন প্রজন্মের অংশ গ্রহণ ছিল উল্লেখ করার মত ঘটনা। প্রতিটি শহরে অনুষ্ঠিত ঈদ জামাত গুলোতে উপচে পড়া মুসল্লীদের ভিড় উল্লেখ করার মত ঘটনা। নিউ ইয়র্কে সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে। এখানে পর পর চারটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সকাল থেকেই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল। বৃষ্টি থাকলেও ঈদ আনন্দে কোন ছেদ পড়তে দেখা যায়নি।
নিউইয়র্কে প্রবাসীদের বড় ঈদের জামাত হয়েছে জামাইকা মুসলিম সেন্টারে। প্রচন্ড বৃষ্টির মাঝেও চারটি ঈদ জামাতে জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে প্রচুর লোকের সমাগম ঘটেছিল। পুরো এলাকা ছিল মুসল্লিতে পরিপূর্ণ। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবারও কোরবানীর ঈদ করছেন নিউ ইয়র্কে। মাননীয় অর্থ মন্ত্রী ঈদের জামাত আদায় করেন জ্যামাইকা মুসলীম সেন্টারে। নামাজ শেষে তিনি মুসল্লিদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে আবদুল মোমেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ সহ নিউ ইয়র্ক কমিউনিটির বহু খ্যাতিমান ব্যাক্তিবর্গ ঈদ জামাতে উপস্হিত ছিলেন।
জামায়াত শেষে দেশ, জাতি ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের ঈমান আবু জাফর বেলাল বেগ, হাফেজ ইসমাইল খলিল ও হাফেজ মামুনুর রশীদ। নিউ ইয়র্কের অন্যান্য বৃহৎ জামাত যেসব স্থানে অনুষ্ঠিত হয় সেগুলো হলো-ব্রুকলিনে চার্চ-ম্যাকডোনাল্ড সংলগ্ন বাংলাদেশ মুসলিম সেন্টার, জ্যাকসন হাইটসে ব্রডওয়ে এবং ৭৩স্ট্রিটে, এস্টোরিয়ার আল-আমিন মসজিদের উদ্যোগে ৩৬ স্ট্রিটে, ব্রুকলিন বায়তুল জান্নাহ মসজিদের উদ্যোগে অ্যাভিনিউ সি’র উপর। ব্রুকলীনে সবচেয়ে বড় ঈদজামাত অনুষ্ঠিত হয় ব্রুকলিন মুসলিম সেন্টারে। এছাড়া নিউজার্সি, পেনসেলভেনিয়া, কানেকটিকাট, বোস্টন, মেট্রো ওয়াশিংটন, ম্যারিল্যান্ড, ভার্জেনিয়া, মিশিগান, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, লসএঞ্জেলেস, ফিনিক্স, টেক্সাস,  মন্ট্রিয়েল, অটোয়া, হ্যামিল্টন, সাসকাচুন, ক্যালগেরী, এডমন্টন প্রভৃতি স্থান থেকেও বিপুল উৎসাহে ঈদ উদযাপনের সংবাদ পাওয়া গিয়েছে।
সপ্তাহান্তের ছুটির দিন থাকায় অনেকেই সচ্ছন্দে ঈদ করেছেন আমেরিকায়। আবহাওয়া ভাল না থাকায়ও প্রতিটি শহরে ঈদের আয়োজন চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা গুলোতে বাংলাদেশের মতোই ছেলে-মেয়েরা নতুন জামা-কাপড় পরে ঘুড়ে বেড়ায়। বয়স্করা পরিচিত জনদের বাসায় বাসায় গিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। নিউ ইয়র্ক সিটির প্রতিটি পাড়াতেই নতুন কাপড় এবং মাথায় টুপি লাগিয়ে লোকজন পরিচিতদের বাসায় যাচ্ছেন এবং ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। মহিলারা ও সর্ব শেষ ডিজাইনের পোশাক পরে বন্ধু-বান্ধবী ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি যাচ্ছেন। নিউ ইয়র্ক সিটির বেশ কয়েকটি বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট খোলা রাখা হয়েছে ব্যাচেলরদের ঈদের তৃপ্তি মেটাতে।
সিটি কর্তৃপক্ষ মসজিদ গুলোর আশ পাশে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button