সড়ক রেল ও নদীপথের উন্নয়নে প্রবাসীদের সহযোগিতা চাইলেন অর্থমন্ত্রী
যুক্তরাষ্ট্র সফররত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, দীর্ঘ ৪০ বছরেও ট্রানজিট কান্ট্রি হতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০১০ সালে বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে ট্রানজিট কান্ট্রি করতে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় স্বার্থে বিএনপি তা গ্রহণ করেছে। কিন্তু চীন, বার্মা ও ভারত অনেক দিন ধরে উত্সুক হয়ে থাকলেও বাংলাদেশেরই ট্রানজিট সুবিধা দেয়ার সামর্থ নেই।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ট্রানজিট কান্ট্রি হিসাবে প্রয়োজনীয় সড়ক, রেল ও নদীপথ নেই বাংলাদেশের। এজন্য সবার আগে প্রয়োজন এসবের উন্নয়ন। আর এসব খাতের উন্নয়নে প্রবাসীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে সিলেটবাসীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব নর্থ আমেরিকা আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান অর্থমন্ত্রী। সদ্য সমাপ্ত জাতিসংঘের ৬৯ তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসাবে নিউইয়র্কে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তিনি।
প্রবাসী বাংলাদেশী অধ্যুষিত এস্টোরিয়ার ক্লাবসনমে অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় সভায় অর্থমন্ত্রী বলেন, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করতে না পারলে আমরা কখনোই ট্রানজিট দিতে পারবো না। এ কারণে সরকারের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে এসব খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে রেলখাতে বিনিয়োগ বেশী দরকার। এছাড়া সড়ক ব্যবস্থাপনাও উন্নত করতে হবে। অনেক ব্রিজ দুর্বল। এগুলোর সংস্কার করতে হবে।
বাংলাদেশের রাস্তাঘাটের নাজুক চিত্র তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২১ হাজার কিলোমিটার মহাসড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। এ কারণে সরকার সারা দেশে মহাসড়ক না বাড়িয়ে সংস্কার ও উন্নয়নের দিকে জোর দিচ্ছে। যেখানে দুই লেন সড়ক আছে সেখানে প্রয়োজনে চার লেন করা হবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন জেলার সঙ্গে কেন্দ্রের যোগাযোগ ভাল। কিন্তু সরকারের এ সিদ্ধন্ত নিতে প্রায় পাঁচ বছর লেগেছে।
রেলের উন্নয়ন প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা অনেক সহজ ও পরিবেশবান্ধব। এ কারণে বর্তমান সরকার রেলওয়ের উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছে। তিনি বলেন, ইতিপূর্বে রেলে যে বিনিয়োগ করা হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে রেল পরিচালনা করা যায়। এ কারণে সরকার সারা দেশে নতুন কোনো রেললাইনও তৈরি করবে না। কিন্তু যেখানে কাজ হবে সেখানেই রেললাইন ডুয়েল গেজ করা হবে। যাতে যে কোনো জায়গায় যে কোনো ধরনের ট্রেন চলতে পারে।
মতবিনিময় সভায় প্রবাসীরা তাদের দীর্ঘদিনের দাবি ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালুর দাবি পুনর্ব্যক্ত করলে অর্থমন্ত্রী এ ব্যাপারে সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেন, আমাদের কোনো উড়োজাহাজকে আমেরিকায় আসতে দেওয়া হয় না। কারণ আমাদের সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। এটার নিশ্চয়তা না দেওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের উড়োজাহাজ আসবে না। এখানে অন্য আর কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, আমাদের উড়োজাহাজের বহর বা ক্যাপাসিটি আছে। কিন্তু নিরাপত্তা সক্ষমতা না বাড়ানো পর্যন্ত আমেরিকায় আমাদের উড়োজাহাজ নিয়ে আসা সম্ভবপর হবে না। এটা আমাদের একটা দুর্বলতা। তিনি আরো বলেন, আমাদের সিভিল এভিয়েশন ‘নট ইন এ গুড শেপ।’ তিনি এ প্রসঙ্গে নিজের মত ব্যক্ত করে বলেন, আমাদের সিভিল এভিয়েশন আমাদের বিমান বাহিনী পরিচালনা করেন। কিন্তু বিমান বাহিনী ব্যবসা জানেন না বা এই ব্যবসা তাদের জন্য যথোপযুক্ত নয়। এখানে পরিবর্তন না আসা পর্যন্ত সিভিল এভিয়েশনের উন্নতি খুব একটা হবে না। সিলেট ওসমানী বিমাবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, সিলেট বিমানবন্দরটি সব দিক থেকে উপযুক্ত। কিন্তু রিফুয়েলিং সিস্টেম না থাকায় এখান থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না।
মতবিনিময় সভায় অর্থমন্ত্রী গ্যাসের অপচয় রোধে চুলা জ্বালানোর জন্য এ সুবিধা উঠিয়ে দিয়ে সার ও সিরামিক কারখানায় সরবরাহের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সভাপতি বদরুল হোসেন খানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে আব্দুল মোমেন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড, সিদ্দিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ, এম এ সালাম, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আব্দুল বাসিত, এম এ কাইয়ুম, আবুল কালাম, তোফায়েল চৌধুরী, তোফাজ্জল করিম, এমাদ চৌধুরী, নাসির উদ্দিন, আব্দুর রহিম বাদশা, আজিমুর রহমান বোরহান, মঈনুল হক চৌধুরী, বুরহান উদ্দিন কফিল, মিসবাহ আহমেদ, এম এ মুহিত, ময়েজ উযদ্দিন মতিন, নূরুল ইসলাম বতা, সাব্বির আহমদ প্রমূখ। মতবিনিময় সভার সঞ্চালক ছিলেন আতাউল গণি আসাদ।