কায়রোর রাস্তায় এসব কী হচ্ছে ?
রাস্তা দিয়ে ভদ্র নারীরা হেঁটে যাচ্ছেন, হঠাৎ করে এক দল যুবক এসে তাদের পোশাক ধরে টান দিচ্ছে, শরীরে হাত দিচ্ছে। মুহূর্তে তারা পালিয়ে যাচ্ছে। সড়কে একটি মেয়েকে একা পেয়েছে, আশেপাশে কেউ নেই তো কয়েকজন যুবক মিলে পালাক্রমে তাকে ভোগ করছে। দিনের বেলাতেই। পরে তার শরীর ব্লেড দিয়েও চিড়ে দিচ্ছে।
দুটি ঘটনঁই মিশরের রাজধানী কায়রোর। প্রথম গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে উৎখাতের পর দেশটির ক্ষমতায় আছেন জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি।
তার সময়ে দেশটিতে নারীদের যৌন হয়রানি ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে জনসম্মুখে যৌন হয়রানি হচ্ছে দেদারছে। পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে চার দিনের একটি জরিপ শেষে ভয়াবহ তথ্য দিয়েছে যৌন হয়রানি বিরোধী একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
‘আই স হ্যারেসমেন্ট গ্রুপ’ নামের সংগঠনটি ঈদের ছুটিতে এমন ২০০টি ঘটনা রেকর্ড করেছে, যেখানে মিশরের রাজধানী কায়রোসহ বেশ কয়েকটি শহরে অন্তত ২০০টি যৌন হয়রানি হয়েছে।
এর মধ্যে ২০টি ঘটনায় নারীরা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন। আর ছয়টি গণধর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে। উদ্বেগ প্রকাশ করে গ্রুপটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নিরাপত্তা সংস্থায় আরো বেশি নারী নিয়োগের সুপারিশ করেছে।
বুধবার গ্রুপটির প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, কায়রো এবং নাইল ডেল্টা শহরে ঈদের ছুটিতে দুই শতাধিক যৌন হয়রানির প্রমাণ তাদের কাছে রয়েছে। আর নারীদের হয়রানিতে ১৮৮ জন আক্রমণকারী জড়িত বলেও তারা জানিয়েছে।
সংগঠনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে চার দিনের ঈদ ছুটিতে এসব ঘটনা রেকর্ড করে, যা মঙ্গলবার শেষ হয়।
গ্রুপটি জানায়, ঈদের দিন যুবকরা রাস্তায় নারীদের উত্ত্যক্ত করলে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে দেখা গেছে। তবে এরপরের ক’দিন তারা নিরব থেকেছে।
জনসম্মুখে যৌন হয়রানির ঘটনা মিশরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলো এবং কোনো ধরনের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে এটি বেশি হচ্ছে।
এসব ঘটনা প্রতিরোধে স্বৈরশাসক আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির সরকার কমপক্ষে ছয় মাসের জেল এবং ৩৩৬০০ (৪২০ ডলার) টাকা জরিমানার বিধান রেখে আইন করে। নতুন এই আইনে সম্প্রতি বেশ কয়েকজনকে সাজাও দেওয়া হয়। তারপরও রুখা যাচ্ছে না যৌন হয়রানি।
গ্রুপটি একাধিক ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে প্রতিবেদনে। এর মধ্যে একটি ঘটনায় দেখিয়েছে, যেখানে ডজন খানেক উঠতি বয়সী কিশোর কায়রোর একটি ব্রিজের ওপর তিনজন মেয়েকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করছে। মুহূর্তে তাদের শরীরে এতটাই নির্যাতন করা হয়, তাতে ওই মেয়েগুলো অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা এসে তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
আরেকটি ঘটনায় গ্রুপটি দেখিয়েছে, এসব উঠতি কিশোররা ব্লেড নিয়ে নারীর দেহে আঁচড় দিয়ে দৌঁড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। এ সময় একজনকে ধরে পুলিশেও দেয় গ্রুপের কর্মীরা।
তবে সরকারি সূত্রে ৭৯টি ঘটনার সত্যতা শিকার করা হয়েছে। যারা ঘটনার শিকার হয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘ ২০১৩ সালে এক প্রতিবেদনে জানায়, ওই বছরটিতে মিশরের ৯৯ শতাংশের বেশি নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন।
আই স হ্যারেসমেন্ট গ্রুপ প্রতিবেদনে পুলিশের ভূমিকার নিন্দা জানিয়েছে। যৌন হয়রানি প্রশ্নে পুলিশকে সহায়তা করতেও রাজি আছে তারা। একই সঙ্গে সড়কে হয়রানি থেকে নারীদের রক্ষায় নিরাপত্তা বাহিনীতে আরো বেশি করে মহিলাদের নিয়োগের সুপারিশ করেছে। -আল-আহরাম